শান্তিপুরে বাবলা সর্দার পাড়ায় গোলমালে নিহত ও জখমেরা।
যেমন আশঙ্কা ছিল, প্রায় তেমনটাই ঘটে গেল। হয়তো তাকে ছাপিয়েও গেল কিছুটা।
মনোনয়ন পর্ব থেকেই ‘উন্নয়ন’ যে ভেলকি দেখিয়ে এসেছে আর ভোটের দিন তা প্রতিহত করতে যে ভাবে নিচুতলায় অঘোষিত জোট বেঁধেছে বিরোধীরা, তাতে ভোট ‘শান্তিপূর্ণ’ হওয়ার সম্ভাবনা কার্যত ছিল না।
তা হয়ওনি।
যদিও মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার দিনের শেষে বলেন, ‘‘কয়েকটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া ভোট শান্তিতেই মিটেছে। জেলায় গন্ডগোল পাকানোর জন্য ৭০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’ নদিয়ায় গ্রেফতারির সংখ্যা কম, মাত্র ২৫ জন। সেখানকার পুলিশ সুপার সন্তোষ পান্ডেরও দাবি, ‘‘সব মিলিয়ে ভোট শান্তিপূর্ণ।’’
যদিও দিনের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটেছে শান্তিপুরেই। বুথ ঢুকে গণপ্রহারে নিহত হয়েছেন এক জন, জখম তিন। মুর্শিদাবাদে অন্তত দু’জন খুন হয়েছেন। চিরকালের প্রথা ভেঙে নদিয়া পড়শিকে ছাপিয়ে গিয়েছে। খুন হয়েছেন অন্তত তিন জন। কারণটা সম্ভবত ডোমকল-সহ মুর্শিদাবাদের বিস্তীর্ণ এলাকায় অর্ধেকেরও বেশি আসনে তৃণমূল ছাড়া আর কারও প্রার্থী না থাকা এবং ভোট না হওয়া।
‘শান্তি’র এই ভোটে দেদার বুথ দখল হয়েছে, ছাপ্পা পড়েছে, ব্যালট বাক্স লুঠ হয়েছে। পুলিশের বিরুদ্ধে ‘ঠুঁটো জগন্নাথ’ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকার অভিযোগ উঠেছে বহু জায়গাতেই। যদিও তেহট্টে গোলমাল থামাতে গিয়ে বাঁশের বাড়িতে মাথা ফেটেছে পুলিশের সাবইনস্পেক্টরের। প্রার্থীরা তো বটেই, আক্রান্ত হয়েছেন ভোটারেরাও। দুই জেলায় গুলিবিদ্ধ হয়েছে দুই নাবালক। মাথায় বাঁশের বাড়ি পড়েছে নওদায় ভোটকর্মীর কাজে যাওয়া কলেজ শিক্ষকের।
দিনের শেষে নিট ফল?
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, নদিয়ায় ৭৮ শতাংশ ভোট পড়েছে। আর ৮২ শতাংশ পড়েছে মুর্শিদাবাদে। জেলা সিপিএমের সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমরা ৭৬৭টি বুথে পুনরায় ভোটের দাবি জানিয়েছি।’’ তবে সব ব্লক থেকে তথ্য এসে না পৌঁছনোয় ক’টি এবং কোন কোন বুথে ভোট বাতিল এবং পুনর্নির্বাচন হতে পারে, তা কোনও জেলাতেই রাত পর্যন্ত স্পষ্ট হয়নি। প্রশাসন সূত্রের খবর, ভোটকর্মীদের রিপোর্টের ভিত্তিতে আজ, মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হবে।
দিনের শেষে বিরোধীরা ‘সন্ত্রাস’ নিয়েই সবচেয়ে বেশি সরব হয়েছেন। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর দাবি, ‘‘পুলিশ এ দিন খাকি পোশাক ছেড়ে তৃণমূলের দুর্বৃত্তদের নিয়ে ভোট করেছে!’’ দলের নদিয়া জেলা সভাপতি অসীম সাহার আশা, ‘‘মানুষই সন্ত্রাসের বিচার করবে।’’
মৃগাঙ্কেরও অভিযোগ, ‘‘পঞ্চায়েত ভোট প্রহসনে পরিণত হয়েছে। পুলিশ কোথাও নীরব দর্শক, কোথাও অতি সক্রিয় হয়ে দুষ্কৃতীদের বুথ দখলে সাহায্য করেছে।’’ সিপিএমের নদিয়া জেলা সম্পাদক সুমিত দে যোগ করেন, ‘‘সীমাহীন সন্ত্রাসের মধ্যেও যাঁরা ভোট দিলেন, তাঁদের অভিনন্দন।’’
দুই জেলাতেই উল্লেখযোগ্য শক্তি হিসেবে এ বার মাথাচাড়া দিয়েছে বিজেপি। দলের নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি মহাদেব সরকার বলেন, ‘‘আমাদের কর্মীরা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত মাটি কামড়ে লড়াই করে গিয়েছেন।’’ দলের মুর্শিদাবাদ জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর ঘোষ বলেন, ‘‘পুলিশকে দাঁড় করিয়ে রেখে গণতন্ত্রকে হত্যা করল তৃণমূল। তবে আমরাও কিন্তু মার খেয়ে পালানোর লোক নই।’’
তৃণমূল নেতারা অবশ্য মোটের উপর খুশি। দলের মুর্শিদাবাদ জেলা সভাপতি সুব্রত সাহা প্রায় প্রশাসনের কতার্দের সঙ্গেই গলা মিলিয়ে বলেন, ‘‘কয়েকটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া ভোট মোটামুটি শান্তিপূর্ণ ভাবেই মিটেছে।’’ দলের নদিয়া জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্তের বক্তব্য, ‘‘আমাদের তিন কর্মী খুন হয়েছেন। প্রমাণিত, সন্ত্রাস করেছে বিরোধীরা।’’