এক দাওয়ায়। নদিয়ার বেলপুকুরে।
পরিবারের দুই বৌ, সম্পর্কে দুই জা। পারিবারিক ভিটেয় পাশাপাশি বাস। দু’জনের গলায়-গলায় ভাব।
সুরূপা যখন ভোটের কাজে বাইরে যাচ্ছেন তখন তাঁর বছর পাঁচেকের মেয়ে সুষমাকে সামলাচ্ছেন কৃষ্ণা। জেম্মা বলতে সুষমাও অজ্ঞান। আবার কৃষ্ণা যখন নির্বাচনের হাজারো কাজে ব্যস্ত তখন ঘরের চাবি সুরূপার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলছেন, ‘‘এটা রাখ। দুধটা একটু গরম করে রাখিস।’’
বিশ্বাস বাড়ির ছোট বউ সুরূপা এ বার বেলপুকুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ১০ নম্বর বুথে বিজেপি-র প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন জমা করেছেন। আর তাঁরই বড় জা কৃষ্ণা একই পঞ্চায়েতের একই বুথে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন। অর্থাৎ, কট্টর বিরোধী দুই দলের হয়ে একেবারে সম্মুখসমরে নামতে চলেছেন দুই জা। কিন্তু পারিবারিক সম্পর্কে তার কণামাত্র আঁচ পড়েনি। কৃষ্ণা হেসে বলেন, ‘‘এখনও রাতে আমরা দিব্যি পাশাপাশি একসঙ্গে বসে রুটি করি। এক জন বেলে দেয়, অন্য জন সেঁকে।’’
একই বাড়িতে দুই যুযুধান রাজনৈতিক দলের দুই প্রার্থী, পরিবারের অন্যরা বাধা দেননি? রাগ করেননি? এ বার সুরূপা হেসে বলেন, ‘‘একেবারেই না।’’
বেলপুকুর বিজেপির দীর্ঘ দিনের শক্ত ঘাঁটি। ১৯৯৮ সালে এখানেই সুরূপা আর কৃষ্ণার বড় জা মাধুরী বিশ্বাস বিজেপির হয়ে জিতে প্রধান হয়েছিলেন। সদ্য ভেঙে যাওয়া পঞ্চায়েতও ছিল বিজেপির দখলে। সেখানে সদস্য ছিলেন সুরূপা।
যে পরিবার প্রথম থেকেই বিজেপি-ঘনিষ্ঠ সেই পরিবার থেকে কৃষ্ণা কী ভাবে তৃণমূলে গেলেন? রাজনৈতিক মহলের খবর, এলাকার বিজেপি নেতা সুব্রত ঘোষ কিছু দিন আগে তৃণমূলে গিয়েছেন। তিনি এ বার জেলা পরিষদের প্রার্থী। তাঁর সঙ্গে দল ছেড়েছিলেন কিছু অনুগামী। কৃষ্ণাও তা-ই। সুব্রত বলেন, ‘‘এই হাতাহাতির বাজারে এক পরিবার যদি দু’টি ভিন্ন মতের দলকে বেঁধে রেখে পাশাপাশি বসিয়ে পাত পেড়ে দিতে পারে, ক্ষতি কি?
আরও পড়ুন: সব জেলা পরিষদই দখল করতে পারে তৃণমূল, সমীক্ষায় আধিপত্যের আভাস
আর দুই বৌমার দিকে সস্নেহে তাকিয়ে তাঁদের পঁচাশি বছরের শাশুড়ি গৌরদাসী দেবী ফোকলা দাঁতে হেসে বলেন, “আমি স্পষ্ট বলে দিয়েছি, যে পার্টি করছ করো, বাড়িতে কিন্তু বাপু কোনও পার্টি ঢুকিয়ো না।’’