Bengal Budget 2020

রাজ্য বাজেটে হাসির আলো ফুটল জেলায়

একক ভাবে মুর্শিদাবাদের ভাগ্যে তেমন কিছু জোটেনি, তবে সাধারণের মতে হাতের মুঠো খুলে তবু তো কিছু রইল।

Advertisement

সামসুদ্দিন বিশ্বাস

বহরমপুর শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০২:৫৬
Share:

বিধানসভায় বাজেট পেশের আগে অমিত মিত্র ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: পিটিআই।

একটি টিভি এবং অনেকগুলি মুখ— সাধারনত ভোটের ফল আর ক্রিকেট জ্বরের এটাই চেনা ছবি। সোমবার, বাজেট-সকালে পাড়ার ক্লাব কিংবা বৈদ্যুতিন যন্ত্রের শো-রুম-ও যে তেমনই ছবি ফিরিয়ে দেবে, আগাম অনুমান ছিল না। আগ্রহটা স্পষ্ট হল বেলা বাড়তে। এবং টিভি ঘিরে সেই থমথমে ভিড়ে কান পাততেই মালুম হয়েছে, কেন্দ্রীয় বাজেটের ‘ধাক্কা’র পরে রাজ্য বাজেট নিয়ে মানুষের মধ্যে কী প্রবল আশার বুদবুদ জমেছিল— জেলার জন্য কিছু রইল তো!

Advertisement

একক ভাবে মুর্শিদাবাদের ভাগ্যে তেমন কিছু জোটেনি, তবে সাধারনের মতে হাতের মুঠো খুলে তবু তো কিছু রইল। কী রইল? রাজ্যের অন্যান্য জেলায় নতুন প্রকল্পের যে সুফল-ছায়া পড়ছে, এ জেলাও তার ব্যতিক্রম নয় বলেই মনে করছেন তাঁরা। প্রান্তিক মানুষজনের আশা, এই নয়া প্রকল্পের ঘোষণা এ জেলাতেও কিছু আলো ফেলবে।

সামাজিক সুরক্ষা যোজনা প্রকল্পে প্রভিডেন্ট ফান্ডের জন্য শ্রমিকদের আয়ের ২৫ টাকাও আর দিতে না-হওয়া তারই একটি। এ যাবত পিএফ বাবদ শ্রমিকেরা ২৫ টাকা এবং সরকার ৩০ টাকা দিতেন। এখন থেকে শ্রমিকদের সেই ২৫ টাকার দায়ও নিচ্ছে সরকার। কার্যত বিনা খরচে তাঁরা প্রভিডেন্ট ফান্ডের সুযোগ পাবেন। এই প্রকল্পের আওতায় মুর্শিদাবাদের ১১ লক্ষ ৬৩ হাজার ২২২ জন শ্রমিক আছেন বলে শ্রমদফতর সূত্র জানা গিয়েছে। মুর্শিদাবাদেই সব চেয়ে বেশি সংখ্যক শ্রমিক এই প্রকল্পের সুবিধা পাবেন।

Advertisement

অসংগঠিত শ্রমিকদের ভবিষ্যতনিধি প্রকল্প (প্রভিডেন্ট ফান্ড), স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রকল্প, মৃত্যুকালীন সাহায্য, দূর্ঘটনা জনিত কারণে সাহায্য দেওয়া হয়। তাঁদের সন্তানদের পড়াশোনা খাতে সরকারি অনুদানও মেলে। ৩১ জানুয়ারির রিপোর্ট বলছে, রাজ্যে ১ কোটি ১৮ লক্ষ ৫১ হাজার ৪০১ জন উপভোক্তা রয়েছেন, তার মধ্যে প্রথম স্থানে থাকা মুর্শিদাবাদে ১১ লক্ষ ৬৩ হাজার ২২২ জন। তার পরেই রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা, ১১ লক্ষ ৫৭ হাজার ৬০৩ জন উপভোক্তা রয়েছে। হরিহরপাড়ার দস্তুরপাড়ার বিড়ি শ্রমিক জাহানারা খাতুন বলছেন, ‘‘শুনে খুশি হলাম। পঁচিশ টাকাও অনেক!’’

হাসির আলো আরও একটি প্রকল্প যেখানে তিন মাসে যাঁদের ৭৫ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ খরচ হয় তাঁরা ওই বিদ্যুৎ এখন থেকে বিনামূল্যে পাবেন। যাতে অনায়াসে একটি ১০ ইউনিটের এলইডি বাল্ব এবং ৬০ ইউনিটের একটি পাখা চালানো সম্ভব।

বাংলাশ্রী প্রকল্পে ক্ষুদ্র কুটির শিল্পে উৎসাহ দিতে ১০০ কোটি টাকা ব্যয় করবে সরকার। তবে, ক্ষুদ্র কুটির শিল্পে পার্ক (এমএসএমই পার্ক) করে দেওয়ার ঘোষণায় ছোট ব্যবসায়ীরা খুশি হলেও রেগুলেটেড মার্কেট কমিটির কর না তোলায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুর্শিদাবাদ ডিস্ট্রিক্ট চেম্বার অব কমার্সের সম্পাদক স্বপন ভট্টাচার্য। তিনি বলছেন, ‘‘জিএসটি চালুর পরেও রেগুলেটেড মার্কেট কমিটির নামে অতিরিক্ত কর আদায় করছে রাজ্য। এই কর প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু বাজেটে তার উল্লেখ নেই। জেলার পর্যটন নিয়েও বাজেট বক্তৃতায় কিছু শুনতে পেলাম না।’’

বিরোধীরা অনেকেই এই বাজেটে অবশ্য ভোটের গন্ধ পাচ্ছেন। তাঁদের অনেককেই বলতে শোনা গিয়েছে, ‘এ বাজেট নিছকই ডোল বা পাইয়ে দেওয়ার বাজেট। ভোটের মুখে মানুষকে খুশি করার চেষ্টা।’ বাজেটে মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দের বিষয়েও কোনও উল্লেখ না থাকায় মুখ ভার জেলার শিক্ষামহলে। বাংলাশ্রীর মতো নতুন প্রকল্পের পাশাপাশি পরিবহণ করে জরিমানা ছাড়ের মতো নতুন প্রকল্পের ঘোষণাও রয়েছে। যা দেকে জেলার এক কংগ্রেস নেতার কথায়, ‘‘প্রান্তিক মানুষ, সামান্য পেলেই মনে করেন অনেক পেয়েছেন। তাতেই ভোট আসে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement