নিজস্ব চিত্র
— ‘একটু বড় করে হাঁ করুন তো দেখি...’
— ‘কেন, কী ব্যাপার, হাঁ...?’ ‘করব কেন’ বলার আগেই মুখে চালান হয়ে গেল একটা এক্স-এল রসগোল্লা।
তার পরে যা হল সে এক অনির্বচনীয় অনুভূতি। জিভের উপরে শুধুই রসালো ম্যাজিক।
বহরমপুরের রাস্তায় তখন থিকথিকে ভিড়। অটোর পোঁ, টোটোর প্যাঁ, সাইকেলের ঘণ্টি মিলিয়ে সে এক বিচ্ছিরি কোরাস। কিন্তু অপূর্ব মণ্ডলের মাথার ভিতরে জলতরঙ্গ বাজছে।
বৃদ্ধ এক্কেবারে নট নড়নচড়ন। তিনি যেন এই রসের ঘোরেই থেকে যেতে চান অনন্তকাল! আহা, এত রস আকাশে, এত রস বাতাসে— তাঁর গুনগুন করতেও ইচ্ছে হল। কিন্তু এ বার জিভ চাইছে অন্য কিছু। দাঁত চাইছে আরও বেশি। অতএব, একটা আলতো কামড়! উফ্, কোথায় ডায়াবিটিস, কোথায় সুগার, কোথায় চিনি, ফের অপূর্বের গান গাইতে ইচ্ছে করল— আমি চিনি গো চিনি...।
তিন কুড়ি পেরিয়ে আসা অপূর্ব বলছেন, ‘‘বছর ছয়েক থেকে সঙ্গী সুগার। বাড়ির লোকের নজরদারিতে মিষ্টি খাওয়ার জো নেই। বহরমপুরে মিষ্টি উৎসবে কেউ এক জন মুখে রসগোল্লা গুঁজে দিল। তার পরে জানেন, জীবনের মানেটাই মনে হচ্ছে বদলে গেল!’’
গ্রান্ট হলের সামনে যখন এই মিষ্টি উৎসব চলছে তখন ডায়াবিটিস দিবসে শহরের অন্য প্রান্তে চিকিৎসকেরা সতর্ক করছেন, ‘‘মিষ্টি, চিনি, আলু, ভাত-সহ ক্যালোরিযুক্ত খাবার মেপে খাবেন। কোনও ভাবেই যেন অনিয়ম না হয়।’’
পাশেই একটি বেসরকারি স্কুলে শিশু দিবস উপলক্ষে চলছে ‘খাদ্যমেলা’। এক খুদে তার ঠাকুমাকে বলে চলেছে, ‘‘ও ঠাম্মি, একটু কোল্ড ড্রিঙ্ক খাও না...।’’ বৃদ্ধা এদিক ওদিক তাকিয়ে চুমুক দিলেন থার্মোকলের গ্লাসে।
বহরমপুর মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সাধন ঘোষ বলছেন, ‘‘২০১৭ সালে বাংলার রসগোল্লা জিআই স্বীকৃতি পেয়েছে। তাই এ দিন আমরা রসগোল্লা উৎসব পালন করলাম। তবে কী জানেন, ডায়াবিটিস নয়, এ দিনও জিতেছে বাংলার রসগোল্লাই। মাত্র তিন ঘণ্টায় সাড়ে দশ হাজার মানুষকে দু’টি করে মিষ্টি খাইয়েছি। এটা কিন্তু চাট্টিখানি কথা নয়!’’