ইংরেজি শিক্ষিকা সুনীতা লাহিড়ির সঙ্গে গায়ক অরিজিৎ সিংহ। নিজস্ব চিত্র।
আরব সাগরের তীর থেকে ভাগীরথীর পারে এলে তাঁর অভ্যাস, ঢোলা পাজামা পরে দু’চাকায় সওয়ার হয়ে এলাকায় চরকি পাক খাওয়া। মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জ তাঁর জন্মস্থান। কিন্তু কর্মসূত্রে থাকতেই হয় মুম্বইয়ে। তবে জিয়াগঞ্জে ফিরলে সেখানকার পথেঘাটে শৈশবের ভাঙা সাইকেল নিয়ে পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে দেখা যায় তাঁকে। বলিউডের গায়ক সেই অরিজিৎ সিংহ এ বার আচমকা হাজির হলেন তাঁর ছোটবেলার স্কুল রাজা বিজয় সিংহ বিদ্যামন্দিরে। স্কুলশিক্ষিকার পায়ের কাছে বসে শিশুসুলভ ভঙ্গিতে গল্প করেছেন গায়ক। শিক্ষিকাও আশীর্বাদ করেছেন অরিজিৎকে। সম্প্রতি নেটমাধ্যমে গায়ক ও তাঁর শিক্ষিকার এমনই একটি ছবি ছড়িয়ে পড়েছে।
নেপথ্য-গায়ক অরিজিতের কণ্ঠের জাদুতে মজে সকলে। সম্প্রতি একটি কনসার্টে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় এবং লতা মঙ্গেশকরের দ্বৈত কণ্ঠে গাওয়া ‘দে দোল দোল দোল...’ গানটি গেয়ে দেশজোড়া প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি। খ্যাতির শিখরে পৌঁছেও সুযোগ পেলেই শিকড়ের টানে বারে বারে গ্রামের বাড়িতে ছুটে আসেন অরিজিৎ। সদ্য বিদেশে গানের কনসার্ট শেষ করে তাঁর এ বারের জিয়াগঞ্জ সফরও ছিল ঠিক তেমনই। গ্রামে এসে পায়ে হাওয়াই চটি গলিয়েই অরিজিৎ সটান চলে গিয়েছিলেন নিজের স্কুলে। সেখানে শিক্ষকদের বসার ঘরে ঢুকেই ইংরেজি শিক্ষিকা সুনীতা লাহিড়িকে দেখতে পান গায়ক। দেরি না করে ছুটে গিয়ে শিক্ষিকার পা ছুঁয়ে প্রণামও করেন। পুরনো ছাত্রকে দেখে আবেগআপ্লুত হয়ে পড়েন সুনীতাও। তিনি আলতো করে অরিজিতের মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ করেন। তার পর বেশ কিছু ক্ষণ সুনীতার সঙ্গে বসে গল্প করেন অরিজিৎ।
সুনীতা সোমবার আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, “গত বৃহস্পতিবার আমাদের স্কুলে এসেছিল অরিজিৎ। ক্লাস ফাইভ থেকে আমাদের স্কুলে পড়েছে ও। আজ অরিজিৎ বড় গায়ক। মানুষ হিসাবেও অত্যন্ত ভাল। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে কত সহজে মিশে যায়! ভীষণই ডাউন টু দ্য আর্থ। স্কুলে এসে কথা বলল। ওর সঙ্গে কথা বলে খুবই ভাল লেগেছে। ছাত্র যতই বড় হোক, সে তো আমাদের কাছে ছাত্রই। আজ ও যে খ্যাতি অর্জন করেছে, তা সম্পূর্ণ নিজের যোগ্যতা আর গুণে। আমাদের সত্যিই গর্ব হয় ওর এই সাফল্যে।’’
সম্প্রতি নিজের স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি পদের দায়িত্ব পেয়েছেন অরিজিৎ। তার পর এই প্রথম স্কুলে গেলেন তিনি। এর আগে অবশ্য বেশ কয়েক বার হঠাৎই রাজা বিজয় সিংহ বিদ্যামন্দিরে হাজির হয়েছেন গায়ক। কিন্তু সুনীতার সঙ্গে অনেক দিন পর দেখা হওয়ায় একটু বেশিই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন তিনি, বলছেন অন্য শিক্ষকেরা। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য বলেন, “অরিজিৎ সভাপতি পদে দায়িত্ব নেওয়ার পর বৃহস্পতিবারই প্রথম স্কুলে আসে। সকলে মিলে খুব ভাল ভাবে আলোচনা হয়েছে। স্কুলের কমিটি কী ভাবে তৈরি হয় এবং কী ভাবে কাজ করে, এ সব জেনে গিয়েছে ও।”