তাঁর ‘রাজত্বে’ ৭০ লক্ষ বেকার চাকরি পেয়েছেন— ঘুরি ফিরে জনসভা থেকে কত বার যে দাবি করেছেন! বিরোধীরা অবশ্য মুচকি হেসে বলছেন, ‘‘এক বার হিসেবটা চান না!’’ হিসেব মেলেনি।
মুখ্যমন্ত্রীর সেই হিসেব যতকিঞ্চিৎ মিলতে চলেছিল মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায়। কিন্তু তিরে এসে সে তরীও ডুবে গিয়েছে!
গত পুরভোটে বেলডাঙা পুরসভা দখল করেছিল কংগ্রেস। ক্ষমতায় আসার পরেই পুরসভায় শূন্য পদে নিয়োগে উদ্যোগী হয়েছিল তারা। ১১ জন কর্মী নিয়োগের অনুমোদন চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের ডাইরেক্টরেট অফ লোকাল বডিজ-এর কাছে। গত ১৪ ও ১৬ অক্টোবর দু’দিনে দু’টি চিঠি পাঠিয়ে ‘গ্রুপ-সি’ পদে ৪ জন এবং ‘গ্রুপ-ডি’ পদে ৭ জন কর্মী নিয়োগের অনুমোদন চাওয়ার দিন কয়েকের মধ্যেই প্রাথমিক সায় মিলেছিল সরকারের।
তবে, প্রথম ধাক্কাটা এসেছিল অনুমোদনের ১২ দিনের মাথায়— ‘গ্রুপ-ডি পদে ৭ জন কর্মী নিয়োগের বিষয়টি আপাতত বাতিল করা হল।’
পুরপ্রধান ভরত ঝাওর বলেন, ‘‘পুরসভায় ২১টি পদ শূন্য রয়েছে। তার মধ্যে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ১১টি পদে কর্মী নিয়োগের জন্য আবেদন করা হয়েছিল। মঞ্জুরও হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু দিন কয়েকের মধ্যেই বোধহয় টনক নড়েছিল এ তো কংগ্রেসের পুরসভা! সাত জন কর্মী নিয়োগের বিষয়টি স্থগিত রাখার নির্দেশ এল তার পরেই।’’
তবে, এত দিনে গ্রুপ-সি পদেও নিয়োগও থমকে রয়েছে ওই পুরসভায়। কোন? শূন্য পদে লোক নিয়োগের জন্য চার জনের যে নিয়োগ কমিটি গঠিত হওয়ার কথা, সেখানে সরকারি প্রতিনিধি এখনও বাছাই করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট দফতর।
বেলডাঙা পুরসভার অভিযোগ, অথচ, তাদের পরে দাবি জানিয়েও বেশ কয়েকটি পুরসভা ইতিমধ্য়েই কর্মী নিয়োগ করে হাততালি কুড়িয়েছে, নিছকই তৃণমূল শাসিত পুরসভা হওয়ায়।
সরকারি প্রতিনিধির নাম এখন পর্যন্ত জেলাপ্রশাসন জানাতে না পারায়, সংশ্লিষ্ট ডিএলবি দফতরও জানাতে পারেনি তাদের প্রতিনিধির নাম। ফলে, পুরসভার ক্লার্ক এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট ক্যাশিয়ার পদে এক জন করে এবং ড্রাইভার পদে দু’জনের নিয়োগ এখনও থমকে রয়েছে। কেন?
কোনও স্পষ্ট উত্তর মেলেনি জেলা প্রশাসনের কাছে। মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও বলেন, ‘‘বিষয়টি রাজ্য পুর দফতরের অধীনে এক্তিয়ারভূক্ত। এ ক্ষেত্রে আমার করণীয় কিছু নেই। ওরা প্রতিনিধি দিলে তবেই আমরা প্রশাসনের তরফে কাউকে নিয়োগ করতে পারব। না হলে নয়।’’
পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের ডিএলবি শাখার ডিরেক্টর অলকেশপ্রসাদ রায় বলছেন, ‘‘১৫৪৭ জনের নিয়োগ পত্র অনুমোদন করেছি। তার মধ্যে বেলডাঙারটা রয়েছে কিনা মনে নেই।’’ ওই দফতরের এক পদস্থ কর্তা অবশ্য বলেন, ‘‘বেলডাঙা পুরসভা একা নয়, রাজ্যের যে ক’টি পুরসভা নির্বাচনের আগে পর্যন্ত বিরোধীদের দখলে ছিল সেগুলিতে শুধু নিয়োগ বন্ধ নয়, যতরকম ভাবে অসহয়োগিতা করা যায় সে চেষ্টা চালানোর অলিখিত নির্দেশ ছিল।’’
দিন কয়েক আগে, নির্বাচনী প্রচারে এসে তৃণমূলের মুর্শিদাবাদ জেলা পর্যবেক্ষক শুভেন্দু অধিকারী জানিয়ে গিয়েছিলেন, ‘‘কান্দি পুরসভা ছিনিয়ে নিয়েছি। এ বার একে একে বহরমপুর, বেলডাঙা!’’ তাহলে কী শাসক দলের দখলে না থাকলে সরকারি সাহায়অয় মিলবে না?
২০১৫ সালে পুরভোটে ১৬ আসনের বেলডাঙা পুরসভার ৯টিতেই জয়ী হয়ে বোর্ড দখল করেছিল কংগ্রেস। বামফ্রন্ট দুটি এবং বিজেপি তিনটি আসন পেয়েছিল। জয় তো দূরের কথায় পুরসভার সব ক’টি আসনেই শাসক দল ছিল তৃতীয় স্থানে। পুরপ্রধান জানান, ক্ষমতায় আসার পরে তাঁরা দেখেন, শহরের নোংরা-আবর্জনা বয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য পুরসভার চারটি ট্রাক্টর রয়েছে বটে কিন্তু চালক নেই। চুক্তি ভিত্তিতে চালক নিয়োগ করে ট্রাক্টরগুলি কোনও মতে চালানো হচ্ছে ঠিকই, তবে তা খরচ সাপেক্ষ। পুরপ্রধান বলছেন, ‘‘যা বলার শাসক দলের নেতারা তা বলেই গিয়েছেন। ওঁদের মনোভাবটাই হল, পুরসভা তো কংগ্রেসের সেখানে আবার নিয়োগ কীসের! মএ বার তারই উত্তর দেবেন বেলডাঙার মানুষ।’’