মুর্শিদাবাদ জেলা কার্যালয়ে অধীর। — নিজস্ব চিত্র
জোটের আবহে শুরু হয়েছিল দু’পক্ষের ঘনিষ্ঠতা। কাছাকাছি এসে বাম-কংগ্রেস দু’পক্ষই জানিয়েছিল, ‘এ-ওর ঘাড়ে’ চাপবে না। অর্থাৎ কেউ-কারও আসনে প্রার্থী দেবে না। তবে শেষরক্ষা যে হবে না, সে ইঙ্গিত ক্রমেই মিলছিল।
দিনকয়েক আগেই বামেরা তাদের প্রথম দফায় প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পরই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল, জোটের বন্ধুত্ব ‘ক্ষুন্ন’ হবে। শাসকদলও এমনটাই দাবি করে আসছিল।
বাম জমানাতেও কংগ্রেসের গড় হিসেবে চিহ্নিত ছিল মুর্শিদাবাদ। পালাবদলের পরও চেহারাটা বিশেষ বদলায়নি। নির্বাচনের মুখে বাম-কংগ্রেস কাছাকাছি এলেও মুর্শিদাবাদে আসন বন্টণ নিয়ে দড়ি টানাটানি লড়াই থাকবে, সেই ইশারা স্পষ্ট হয়ে উঠছিল কিছু দিন ধরেই। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী প্রথম থেকেই বলে আসছিলেন, মুর্শিদাবাদে অধিকাংশ আসনেই তাঁরা প্রার্থী দেবেন। সেই চাপে পাল্টা ঘুঁটি চেলে এই জেলার এমন তিনটি আসনে আগাম প্রার্থী ঘোষণা করেছিল বামেরা, যেগুলিতে আগে থেকেই কংগ্রেস লড়বে বলে মনস্থির করেছিল।
ভরতপুর, ডোমকল ও হরিহরপাড়া— এই তিন আসনে কংগ্রেসের দাবি উড়িয়ে দিয়ে বামেরা প্রার্থী দিয়েছিল দিনকয়েক আগেই। পাল্টা চাপ দিতে কংগ্রেস তার দ্বিতীয় দফার আসন ঘোষণার তালিকায় রেখে ছিল ওই তিন আসন—ভরতপুর, ডোমকল ও হরিহরপাড়ার নাম।
এই চাপ-পাল্টা চাপের আড়ালে অবশ্য দু’পক্ষই আশাবাদী। তারা তাকিয়ে রয়েছে, কেউ না কেউ শেষমেশ প্রার্থী প্রত্যাহার করে নেবে।
রবিবার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বহরমপুরে দলীয় বিধায়কদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ করেন। তারপর তিনি সাংবাদিক বৈঠক ডেকে বামেদের জেতা তিন আসনে প্রার্থী দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। যা ভাল ভাবে নিচ্ছেন না জেলার বাম নেতারা।
সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য এ দিন বলছেন, “ডোমকল ও হরিহরপাড়া কেন্দ্র দুটি আমাদের দখলে। ভরতপুরে গত বার জিতেছিল বাম শরিক আরএসপি। অধীরবাবুর এ দিনের আসন ঘোষণা নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দেব না। তবে সিপিএমের জেতা আসন—ডোমকল ও ভরতপুর থেকে প্রার্থী তুলে নেওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই।’’ কংগ্রেসের অবশ্য যুক্তি, ডোমকলে সিপিএম লড়লে, আখেরে শাসক দলেরই লাভ হবে। তাই ওখানে কংগ্রেস প্রার্থী দিয়েছে।
কেন? দলের নেতাদের যুক্তি, গত লোকসভা ভোটে ডোমকল কেন্দ্রে সিপিএম প্রায় ৩৩ হাজার ভোটে পিছিয়ে ছিল। ওই ব্যবধান কংগ্রেসই পারবে পূরণ করতে। অতীতে ভোটের দিনে ডোমকলে রাজনৈতিক হানাহানিতে সিপিএমের হাতে কংগ্রেসের বহু কর্মী হতাহত হয়েছেন। সেই সব পরিবারের ভোটাররা সিপিএমকে কখনও সমর্থন করবে না। ফলে ওখানে সিপিএমের লড়াই বেশ কঠিন হবে। তবে জেলা কংগ্রেসের এক নেতা জানাচ্ছেন, আসলে ডোমকল কেন্দ্রে প্রার্থী হয়েছেন একদা অধীরের রাজনৈতিক সঙ্গী মান্নান হোসেনের ছেলে সৌমিক। তাঁকে হারানোর জন্য কংগ্রেস ওই আসনে লড়াই চায়। কংগ্রেস বিধায়ক মইনুল হক বলেন, “ডোমকলের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে সিপিএমকে ওই আসনটি ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। কিন্তু সিপিএম তা মানেনি। ফলে কংগ্রেসকে প্রার্থী দিতেই হল।’’
সিপিএমের এক জেলা স্তরের নেতা অবশ্য সাফ জানাচ্ছেন, ডোমকল তাদের জেতা আসন। কংগ্রেসকে তা কখনও ছাড়া হবে না। কংগ্রেস ওখানে লড়াই করলে দলীয় কর্মীদের মনোবল ভেঙে যাবে। তাছাড়া কংগ্রেসের জেতা জঙ্গিপুর আসনটি তারা ছেড়ে দিয়েছে। সিপিএমের ডোমকল জোনাল কমিটির সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “ডোমকলে ১৯৭৭ সাল থেকে জিতেছে সিপিএম। আনিসুর রহমান ওই কেন্দ্রের পাঁচ বারের বিধায়ক। তৃণমূলকে হারাতে আনিসুর রহমানের বিকল্প নেই।’’
কংগ্রেস ও বামফ্রন্টের এই দড়ি টানাটানিতে ক্ষোভ ছড়িয়েছে বাম শরিক আরএসপির নেতাদের মধ্যেও। কারণ, এ দিন কংগ্রেস আরএসপির জেতা আসন ভরতপুরে প্রার্থী দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। আরএসপির এক জেলা নেতার কথায়, “আরএসপির জেতা আসনেই কংগ্রেস কেন প্রার্থী দেবে? ওই কেন্দ্রে সিপিএম কী করে সেটাও দেখার বিষয়। বড় শরিক হিসেবে সিপিএমের উচিৎ আরএসপিকে সমর্থন করা।’’ ফব-র জেলা সম্পাদক বিভাস চক্রবর্তী এ দিন কড়া সুরেই আক্রমণ করেছেন কংগ্রেসকে। তিনি বলেন, “জেলায় জোট আর কোথায় রইল? জোট করার মতো নমনীয় মানসিকতা কংগ্রেসের নেই। আমরা রানিনগর ও মুর্শিদাবাদ আসনে প্রার্থী দেব। এখন দেখি ওই দুই আসনে কংগ্রেস কী করে।’’