বাড়ি সংস্কার, তৃণমূলের ‘খরচ’ আট লাখ

কখনও চুন-সুড়কি, কখনও বা হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্স— সিন্ডিকেটরাজ নিয়ে ইতিমধ্যেই আঙুল উঠেছে কল্যাণী থেকে গয়েশপুর, তৃণমূলের একাধিক জনপ্রতিনিধির দিকে। তোলাবাজির ঘটনাতেও জড়িয়েছেন হরিণঘাটা, রানাঘাটের নেতারা। সেই তালিকায় এ বার নয়া সংযোজন শান্তিপুর।

Advertisement

সুস্মিত হালদার

শান্তিপুর শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৬ ০০:৪৯
Share:

কখনও চুন-সুড়কি, কখনও বা হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্স— সিন্ডিকেটরাজ নিয়ে ইতিমধ্যেই আঙুল উঠেছে কল্যাণী থেকে গয়েশপুর, তৃণমূলের একাধিক জনপ্রতিনিধির দিকে। তোলাবাজির ঘটনাতেও জড়িয়েছেন হরিণঘাটা, রানাঘাটের নেতারা। সেই তালিকায় এ বার নয়া সংযোজন শান্তিপুর।

Advertisement

দানসূত্রে পাওয়া একটি পুরনো বাড়ির সংস্কার করতে গিয়ে শান্তিপুরের এক প্রৌঢ় সম্প্রতি হুমকি শুনলেন— ‘‘আমাদের খুশি করে দিন, তার পরে বাড়ি সারান। আমাদেরও তো নানান খরচ আছে!’’ অভিযোগের তির এ বার স্থানীয় এক কাউন্সিলরের দিকে। ঘটনাচক্রে যাঁর দলের নাম তৃণমূল।

শান্তিপুরের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে পীরেরহাট পাড়ার বাসিন্দা দিলীপ দাসের অভিযোগ, তাঁকে বাড়ি সংস্কারের জন্য ৮ লক্ষ টাকা দাবি করেছে স্থানীয় বারোয়ারির সদস্যরা। আদতে যাঁরা সকলেই স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলরের সাগরেদেরা।

Advertisement

সূত্রাগড় এমএন হাইস্কুলের ওই কর্মীর দাবি, শাসক দলের কর্মীদের চাপে গুরুতর অসুস্থ হয়ে আপাতত তিনি শয্যাশায়ী।

তিনি বলেন, ‘‘১৯৯৫ সাল থেকে ওই বাড়িতে ভাড়া ছিলাম আমি। বাড়ির মালিক মায়া পাল নিঃসন্তান। বছর দুয়েক আগে তিনি আমার স্ত্রী ও আমার নামে বাড়িটা রেজিস্ট্রি করে দিয়েছেন।”

ব্যাপারটা জানাজানি হতে, বছর খানেক ধরেই স্থানীয় তৃণমূল কর্মীরা এসে দাবি করেন আট লক্ষ টাকা। দাবি মেটাতে না-পারায়, তাঁর উপরে শুরু হয় নানাবিধ ‘মানসিক অত্যাচারও।’ তিনি বলেন, ‘‘ওরা এসে পরিচয় দেয়, আমরা স্থানীয় কাউন্সিলরের লোক। দাবি ছিল, ১৫ লক্ষ। কমতে কমতে শেষে তা আটে এসে দাঁড়িয়েছে।’’ বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর বিভাস ঘোষের কাছে গিয়েছিলেন দিলীপবাবু। ফল মেলেনি। গিয়েছিলেন শান্তিপুর থানাতেও। গয়ংগচ্ছ মনোভাব দেখিয়ে এড়িয়ে গিয়েছে পুলিশও।

টাকার জন্য নানা ভাবে ভয় দেখিয়ে ওই তৃণমূল কর্মীরা সম্প্রতি তাঁর ছোট ছেলেকে দিয়ে একটি সাদা কাগজে সইও করিয়ে নিয়েছে বলে জানিয়েছেন দিলীপবাবু।

তবে বিভাসবাবু ঘটনার কথা শুনে আকাশ থেকে পড়ছেন, ‘‘বলেন কি ওই নামে কেউ তো আমার কাছে আসেনি। আসলে আমার নামে কালি ছেটাতে পারলে যা হয় আর কি!’’

সঙ্গে জু়ড়ে দিচ্ছেন, ‘‘তবে কি জানেন, শুনেছি, ওই বাড়িতে রাতের অন্ধকারে দিলীপ দাসের ছেলেরা মদের আসর বসায়। অসামাজিক কাজকর্ম হয়। পাড়ার লোকেরা তাঁর নামে নালিশও জানিয়েছেন।’’ তা হলে তা রুখছেন না কেন? বিষয়টি পুলিশকেই বা জানাননি কেন তিনি? ফোন রেখে দিয়েছেন বিভাসবাবু।

শান্তিপুর পুরসভার পুরপ্রধান তৃণমূলের অজয় দে অবশ্য ওই কাউন্সিলরের পাশে দাঁড়িয়েছেন। ওই পরিবারটিকে সিপিএম সমর্থক বলে দেগে দিয়ে ‘চক্রান্তের তত্ত্ব’ খাড়া করছেন তিনি। বলছেন, ‘‘খোঁজ নিয়ে দেখেছি ওই পরিবার সিপিএম করে। তারা চক্রান্ত করে আমাদের কাউন্সিলরকে ফাঁসাতে চাইছে।”

তবে, দলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত বিষয়টি লঘু করে দেখছেন না। তিনি বলেন, ‘‘কাউন্সিলরের কাজ এলাকা উন্নয়ন। কে জমি-বাড়ি কিনল আর কে বিক্রি করল সেটা দেখা তার কাজ নয়।’’

এখন প্রশ্ন হল—দিদির বার্তায় মান্যতা দিচ্ছে না কে, দলের দাদারা নাকি পুলিশ?

দলের এক নেতা বলছেন, ‘‘প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে। দিদির চোখারাঙানি আঁচ জেলায় পড়ছে না কেন, জেলা-নেতারা কি তাঁর কথায় মান্যতা দিচ্ছেন না!’’

আর পুলিশ? রাজনীতির রং না দেখেই গ্রেফতারের ছাড়পত্র সত্ত্বেও অভিযুক্ত তৃণমূলের শুনলেই, এখনও যেন তাদের গায়ে জ্বর এসে যাচ্ছে!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement