ধর্ষণের অভিযোগ নেয়নি পুলিশ। উল্টে অভিযুক্তকে হাতে পেয়েও ছেড়ে দিয়েছে। এমনই অভিযোগ অভিযোগ উঠল শান্তিপুর থানার পুলিশের বিরুদ্ধে। পুরো ঘটনাটি বৃহস্পতিবার পুলিশ সুপারের কাছে জানান ওই মহিলার জামাই।
তিনি বলেন, ‘‘গ্রামবাসীরা অভিযুক্তকে ধরে ফেলেছিল। আমরা পুলিশের হাতে ওই যুবককে তুলেও দিয়েছিলাম। পর দিন সকালে আমরা শান্তিপুর থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ জমা দিতে গেলে সেই অভিযোগ গ্রহণ করা হয়নি। উল্টে ওই যুবকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বাধ্য হয়েই পুলিশ সুপারকে গোটা বিষয়টি লিখিত ভাবে জানিয়েছি।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর খানেক আগে মানসিক ভারসাম্যহীন ওই মহিলার স্বামী নিরুদ্দেশ হয়ে যান। বছর পয়তাল্লিশের ওই মহিলা গ্রামে ঘরে একাই থাকেন। পাশের গ্রামে বিয়ে হয়েছে মেয়ের। জামাই এসে তাঁর দেখাশুনো করেন। খাবার দিয়ে যান। গ্রামের মানুষও দেখাশোনা করেন। প্রতিবেশীরাই জানিয়েছেন সম্প্রতি মাঝে মধ্যেই রাতে ওই মহিলার চিৎকার করতেন। কিন্তু মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় কেউ গুরুত্ব দেননি। রবিবার রাত ১২টা নাগাদ একই ভাবে চিৎকার শুনে তার বাড়ির বাইরে বেরোন এক প্রতিবেশী ও তাঁর স্ত্রী। তাঁদেরই চেষ্টায় অভিযুক্তকে ধরে ফেলেন গ্রামবাসীরা। তাকে একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়।
ওই মহিলার জামাই বলেন, ‘‘অভিযোগ জমা দেওয়ার পরে ডিউটি অফিসার আমাদের জানান যে কেস নম্বর বিকেলে দেবেন। কিন্তু বিকেলে আমাদের বলা হয় যে মিথ্যা অভিযোগ। তাই সেটা নেওয়া হবে না। আমাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। জানা যায় অভিযুক্তকে ছেড়েও দেওয়া হয়েছে। গোটা বিষয়টিতে আমরা হতাশ।’’
ঘটনাচক্রে ওই গ্রামেরই বাসিন্দা দৃষ্টিহীন দীপালি বসাককে ধর্ষণের ঘটনায় পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেফতার না করায় ১৯৯৩ সালের ৭ জানুয়ারি দীপালিকে নিয়ে রাইটার্স বিল্ডিং-এ তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে অপমানিত হয়েছিলেন সে দিনের বিরোধী নেত্রী বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি এখন পুলিশমন্ত্রীও। তাই পুলিশের এমন আচরণে কটাক্ষ করতে ছাড়ছেন না বিরোধীরা।
ঘটনার খবর পেয়ে রাতেই ছুটে এসেছিলেন এলাকার বাসিন্দা গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য সিপিএমের সুদীপ বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘‘ওই যুবকে নগ্ন অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল বলে জানতে পেরেছি। ওই মহিলা ধর্ষিত হয়েছেন কিনা সেটা ডাক্তারি পরীক্ষা করলেই পরিষ্কার হয়ে যেত। কিন্তু পুলিশ তা না করে কেন ওই যুবককে ছেড়ে দিল বুঝতে পারছি না। শুনতে পাচ্ছি যে ফুলিয়ারই তৃণমূলের এক যুব নেতা গিয়ে অভিযুক্তকে ছাড়িয়ে এনেছেন।’’ তিনি বলেন, ‘‘একজন মানসিক ভারসাম্য মহিলাও কি তাহলে বিচার পাবেন না?’’
তবে এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে জেলার পুলিশ সুপার ভরতলাল মিনা বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত অভিযোগপত্র হাতে পাইনি। যদি এমন অভিযোগ হয়ে থাকে তা হলে কেন এমনটা হল তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’’
সে দিন দিপালী বসাককে যিনি কলকাতায় নিয়ে গিয়েছিলেন সেই রিক্তা কুণ্ডু বর্তমানে জেলা পরিষদের বন ও ভূমি সংস্কার স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ। তারই এলাকায় এমন একটি ঘটনাকে কী ভাবে দেখছেন তিনি? রিক্তাদেবী বলেন, ‘‘ঘটনাটি আমি শুনেছি। তবে ঠিক কী হয়েছে সেটা না খোঁজ নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না।’’