প্রতীকী ছবি।
মন্ত্রী জাকির হোসেনের উপর বিস্ফোরণের ঘটনায় বিস্ফোরক কোথা থেকে এল, কারা সেই বিস্ফোরক থেকে বিস্ফোরণ ঘটাল, তার খোঁজে হন্যে হয়ে তল্লাশি চলছে। তদন্তকারীদের মতে, যা হয়েছে, তাতে পরিষ্কার কাছাকাছি এলাকার কেউ না কেউ জড়িত, যে জাকির সম্পর্কে সব খোঁজ রাখত। সেই ব্যক্তির সঙ্গে আরও অনেকে ছিল বলেই সন্দেহ করা হচ্ছে। এক তদন্তকারী অফিসার জানান, যে এলাকায় ঘটনা ঘটেছে, তার কাছাকাছি কোথাও বিস্ফোরকটি তৈরি করা হয়েছিল। এত শক্তিশালী বিস্ফোরক দূর থেকে আনা নেওয়া করা বিপজ্জনক। স্থানীয় দুষ্কৃতীদের উপরে তাই কড়া নজর রাখছে তদন্তকারীরা।
হামলার ঘটনায় রাজ্যের তিনটি তদন্তকারী সংস্থা তদন্ত চালালেও জেলা পুলিশও কিন্তু হাত পা গুটিয়ে বসে নেই। তারা ঘটনার ক্লু পেতে তদন্ত শুরু করেছে তাদের নিজেদের মত করে।
বুধবার রাতে বিস্ফোরণের আগে ও পরে তোলা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া একাধিক ভিডিয়ো খুঁটিয়ে দেখা হচ্ছে আহতরা ছাড়াও অপরিচিত কেউ বা এলাকার কোনও দুষ্কৃতী তাদের ভিড়ে রয়েছে কি না। ইতিমধ্যেই ভিডিয়োতে দেখা একজনকে তুলে এনে জিজ্ঞাসাবাদও করেছে পুলিশ। ভিডিয়োতে বার কয়েক ডান হাত ও বাঁ হাত তুলতে দেখা গেছে তাকে। বিস্ফোরণের আগের মুহূর্তেও হাত নাড়তে দেখা গিয়েছিল তাকে। তাকে দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করে কিছু তথ্যও পেলেও তাকে সন্দেহের তালিকায় রাখেনি পুলিশ। যদিও এই বিস্ফোরণে সেও সামান্য আহত হয়েছে।
শনিবার সকালে অরঙ্গাবাদ তাঁতিপাড়া এলাকায় একটি পরিত্যক্ত জায়গায় আড়াই কিলো মত বিস্ফোরক উদ্ধার করেছে পুলিশ। স্থানীয় এলাকার বাসিন্দারাই বস্তায় ভরা এই বিস্ফোরক দেখতে পেয়ে খবর দেয় সুতি থানায়। তবে কারা এই বিস্ফোরক রেখেছিল তা এখনও জানতে পারেনি পুলিশ।
ইতিমধ্যেই নিমতিতা রেল স্টেশনের দুর্ঘটনাস্থলটি সিআইডি ঝাড়ু দিয়ে সাফাই করে সমস্ত পরিত্যক্ত আবর্জনা তুলে নিয়ে গিয়েছে শুক্রবার ‘যদি কোনও ক্লু মেলে’ এই আশায়।
স্থানীয় পুলিশের কড়া নজরে রয়েছে সুতির অরঙ্গাবাদ লাগোয়া এলাকার দুষ্কৃতীদের উপরে। এই স্থানীয় দুষ্কৃতীরা বরাবরই বিস্ফোরক ব্যবহারে বেশ পটু তাই নয়, বহুবার পুলিশের হাতে বোমা বা বিস্ফোরক সহ ধরাও পড়েছে। বিস্ফোরক ব্যবহার তাদের কাছে জলভাত। এই সব দুষ্কৃতীরা অরঙ্গাবাদ এলাকায় এখনও অনেকেই ঝাড়খণ্ড ও কালিয়াচক থেকে বিস্ফোরক আনা নেওয়ার কাজও করে। বোমা বানাতে তারা এতটাই পটু যে বহু এলাকায় তাদের নিয়ে যাওয়া হয় ভাড়া করেও। স্থানীয় পুলিশের নজর এখন সেই সব দুষ্কৃতীর উপর গিয়ে পড়েছে।
সুতির বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বিস্ফোরক ও বোমার ব্যবহার নতুন কিছু নয়। একসময় বারুদের রমরমা ছিল এই সব গ্রামে। তৈরি হত পটকা। নানা বিধিনিষেধে বাজি কারখানা বন্ধ হলেও বিস্ফোরকের সঙ্গে সম্পর্ক বন্ধ হয়নি ওই সব গ্রামের দুষ্কৃতীদের। ২০১৫ সালের মে মাসে অরঙ্গাবাদের এক গ্রাম থেকেই কয়েক জন গিয়েছিল মেদিনীপুরের পিংলায় অবৈধ বাজি তৈরির কারখানায় কাজ করতে। সেখানে বিস্ফোরণে প্রাণ যায় সুতির সেই গ্রামের ১১ জন কিশোরের। এমনকি বোমাবাজদের বোমায় সুতি থানার এক ওসিও ক্ষতবিক্ষত হন।
একসময় অরঙ্গাবাদের তৈরি বাজির ছিল রাজ্য জোড়া সুনাম। সেই শুরু অরঙ্গাবাদে বিস্ফোরকের ব্যবহার। এখন সেই বাজির বিস্ফোরকই যেন কাল হয়েছে অরঙ্গাবাদবাসীর কাছে। বাজি বদলে গিয়েছে বোমায়। পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলছেন, “এই বোমার কারবারে বার বার উঠে এসেছে স্থানীয় দুষ্কৃতীদের নাম। শুধু বিস্ফোরক নয়, একটি গ্রামের অনেকেই আবার সীমান্তে পাচারে সিদ্ধহস্ত।’’
গরু পাচারের বিরুদ্ধে জাকির সরব হওয়ার পরে পাচারকারীদের একাংশই অরঙ্গাবাদের এই দুষ্কৃতীদের কাজে লাগিয়েছে কি না, সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে পুলিশ। সেক্ষেত্রে এই ঘটনার পিছনে বড় কোনও মাথা রয়েছে, যে নানা ধরনের দুষ্কৃতীদের একত্র করে জাকিরের উপরে হামলা করিয়েছে।