আত্মবিশ্বাস কিংবা উত্সাহ, খামতি ছিল না কোথাও। দেওয়াল-লিখন সেরে ইদানীং নজর দিয়েছিলেন জন-সংযোগে। পুরভোটে সিপিএমের হয়ে পছন্দের ওয়ার্ডে দাঁড়িয়ে দলকে কী ভাবে জেতাতে হবে, কী কী উন্নয়নমূলক কাজ করতে হবে স্থানীয়দের অনেককেই ঘটা করে শুনিয়েছিলেন সে পরিকল্পনার কথা। কিন্তু, সবটাই পরিহাস!
জঙ্গিপুর পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডে সিপিএমের হয়ে টিকিট-ই পেলেন না দলের লোকাল কমিটির সদস্য মোহন মাহাতো। এখানেই শেষ নয়, টিকিট না পেয়ে ক্ষোভে শেষমেশ কংগ্রেসে যোগ দিলেন মোহনবাবু। কংগ্রেস নেতৃত্বও সাদরে বরণ করে মুহুর্তেই কাঙ্খিত ১২ নম্বর ওয়ার্ডেরই টিকিট দিয়ে দিলেন তাঁকে। সিপিএমের প্রার্থী তালিকা ঘোষণার দিনে, রবিবার দিনভর এমন নাটকেরই সাক্ষী রইল জঙ্গিপুর।
এ দিন সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য মুর্শিদাবাদের ৬টি পুরসভার ১০৭টি ওয়ার্ডের জন্য বামফ্রন্টের ৮২ জনের অসম্পূর্ণ প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেন। তালিকায় রয়েছেন ২৭ জন মহিলা, ২৭ জন সংখ্যালঘু। পুরোনো কাউন্সিলরদের মধ্যে রয়েছে ১১ জনের নাম। তবে উল্লেখযোগ্য ভাবে, প্রথম দফার এই তালিকায় ৭১ জন প্রার্থীই নতুন। জেলার ৬টি পুরসভার মধ্যে জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ ও জঙ্গিপুর রয়েছে বামেদের দখলে। দু’টি পুরসভাতেই বর্তমান পুর প্রধানদের এ বারেও মনোনয়ন দিয়েছে দল। তবে দুই পুরসভাতেই উপ পুরপ্রধানদের মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। ধুলিয়ানে ২৪ বছরের কাউন্সিলর সুন্দর ঘোষকে প্রার্থী করেনি দল।
কেন সব আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা গেল না?
মৃগাঙ্কবাবুর জবাব, ‘‘যে ২৫টি ওয়ার্ডে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা যায়নি, তার বেশির ভাগই আরএসপি ও ফব-র। দ্রুত তাদের তালিকাও ঘোষণা করা হবে।” জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জে এ বারেও ১৭টি ওয়ার্ডের ৯টিতে বাম সমর্থিত নির্দল হিসেবে লড়বেন বামফ্রন্ট প্রার্থীরা। মুর্শিদাবাদেও বাম সমর্থিত নির্দল প্রার্থী থাকছেন ১৬টির মধ্যে ৮টিতে। বেলডাঙা ছাড়া অন্য পুরসভায় নির্দল থাকছেন ৭ জন। কেন নির্দল? জেলা সম্পাদকের ব্যাখ্যা, “রাজনৈতিক কৌশল হিসেবেই এই সিদ্ধান্ত।” সিপিএম সূত্রে খবর, জেলার ১০৭টি আসনের ৭২টিতে লড়বে সিপিএম, আরএসপি লড়বে ১৮টিতে, ফব ১৩টিতে, সিপিআই ৩টিতে এবং সোস্যালিস্ট পার্টি একটি আসনে। আরএসপি জেলায় ১৮টি ওয়ার্ডে লড়লেও জঙ্গিপুরের দু’টি ওয়ার্ড ছাড়া কোথাও নাম ঘোষণা করতে পারেনি। দলের জেলা সম্পাদক বিশ্বনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘‘মঙ্গলবারের মধ্যেই প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হবে।”
রবিবার বিকেলে যখন জঙ্গিপুরে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করছেন মৃগাঙ্কবাবু ঠিক তখনই তাঁরই পাড়ার বাসিন্দা তথা স্থানীয় সিপিএম নেতা মোহন মাহাতো-র বিদ্রোহের খবর এসে পৌঁছয়। সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে যায় এ নিয়ে চর্চা। এ দিন জনা দশেক সমর্থক সঙ্গে কংগ্রেসে যোগ দেন মোহনবাবু। তাঁর হাতে কংগ্রেসের পতাকা তুলে দেন দুই বিধায়ক মহম্মদ সোহরাব ও আখরুজ্জামান। কেন দলবদল?
দলছুট সিপিএম নেতা অভিমানী গলায় শুধু বলেন, “সেই ৭৮ সাল থেকে দল করছি। যুব সংগঠনের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যও ছিলাম এক সময়। দীর্ঘ দিন দলের জঙ্গিপুরের জোনাল ও লোকাল কমিটির সদস্য রয়েছি। দল এ বার আমন্ত্রিত সদস্য করে অসম্মান করেছে। এমনকি পুরভোটে প্রার্থী হওয়ার প্রত্যাশাকেও উপেক্ষা করেছে! তাই দলের সঙ্গে তিন দশকের সম্পর্ক ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছি।” জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য এই দলবদলকে গুরুত্ব দিতে চাননি। উল্টে তিনি বলেন, “দলবিরোধী কাজের জন্য ওই সদস্যের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তা শুনে মোহনবাবুর জবাব, ‘‘উপেক্ষার পরিণতি টের পাবে সিপিএম।”