সমবেত: কারখানায় কাজে ব্যস্ত মেয়েরা। নিজস্ব চিত্র
পদ্মার ভাঙন ভিটেমাটি খুইয়ে কেউ মাথা গুঁজেছেন লাইনের পাশে, কেউ রাজ্য সড়কের ধারে ত্রিপলের নীচে। লালগোলার বালুটুঙি-পিরতলার আকিমা বেওয়া, নুসরত বেওয়া, খায়রুন বিবিরা যন্ত্রণা সইতে বাধ্য হয়েছিলেন। স্বামীর ঘর খোয়ানো এই মহিলাদের কাছে এখন ‘মসিহা’ মতো বছর সাতাশের রহিম আলি।
পিরতলার মাধ্যমিক ফেল রহিম একদা পেটের দায়ে বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত মহাজনদের মাল পৌঁছোতেন। বছর পাঁচেক আগে তিনি এ রকম মহিলাদের জড়ো করে পিরতলা হল্ট স্টেশনের কাছে ফেঁদেছেন কারবার। সুরাত, মুম্বই থেকে থান কাপড় কিনে আনেন রহিম। শতাধিক মহিলা তা দিয়ে তৈরি করেন স্কুল ইউনিফর্ম, জিনসের প্যান্ট, জামা, চুড়িদার। সেই পোশাক চলে যায় জেলা ও জেলার বাইরে বাজারে।
রহিমের বাবা আখতার আলি চাষির কাছ থেকে পাট, গম, শিমুল তুলো কিনে মহাজনের আড়তে বিক্রি করতেন। রহিমেরা দুই ভাই ও চার বোন। ক্লাস নাইনের পরে আর তার পড়োশোনা হয়নি। কিছু দিন পদ্মাচরে ‘ক্যারিয়ার’-এর কাজ করে তার পরে দর্জির কাজ শিখে ছোট্ট দোকান করে বসে যান তিনি। রহিমের কথায়, ‘‘এই তল্লাটে ঘরে-ঘরে তালাক পাওয়া মহিলার খুবই বেশি। বিড়ি বেঁধে দিনে তাঁদের ৬০-৭০ টাকাও জোটে না। তাই ভাবলাম, তাঁদের দিয়ে পোশাক তৈরি করিয়ে বাজারে বিক্রি করলে তাঁদেরও আয় বাড়ে, আমারও বাড়ে!’’
পিরতলা লাগোয়া নাচনা গ্রামে থাকেন স্বামী-বিছিন্না, এক সন্তানের মা লুতফা খাতুন। তিনি বলেন, ‘‘মাস খানেকের প্রশিক্ষণ নিয়ে রেডিমেড পোশাক তৈরি করে সংসার চালাচ্ছি। বছর চারেক হল। এই কাজ না পেলে পদ্মায় ভিটেমাটি তলিয়ে যাওয়ার মতো আমিও দুধের শিশু নিয়ে কোথায় তলিয়ে যেতাম!’’ বিড়ি বেঁধে সংসার চলত না বালুটুঙির দুই শিশুর মা বেবি খাতুনের। তিনি বলেন, ‘‘স্বামী তাড়িয়ে দেওয়ার পরে বিড়ি বাঁধতাম। তাতে হাঁপানি হতে থাকে। বিড়ি বাঁধা মজুরিতে আমাদের তিন জনের পেটও চলত না। এখন দু’ পয়সার মুখ দেখছি।’’ যশোইতলা-সাহাপুরের জহুরা বিবি বলেন, ‘‘এই কাজ ছিল বলেই অসুস্থ স্বামীর চিকিৎসা করাতে পারছি। ক্লাস এইটে পড়া ছেলের খরচও জুটছে।’’