ভেজাল এই ভুবনে ভাল তবে কোনটা

বৃহস্পতিবার বিকেলে ভেজাল ধনের কারবারের অভিযোগে নদিয়ার নাকাশিপাড়া থেকে রাজ্য পুলিশের এনফোর্সমেন্ট শাখা দু’জনকে ধরেছে। অভিযোগ, ধৃত সুশীল বিশ্বাস ও বিপ্লব ঘোষ কয়েক বছর ধরে ভেজাল ধনে ও কালো জিরের কারবার চালাচ্ছিল।

Advertisement

সামসুদ্দিন বিশ্বাস ও সুস্মিত হালদার

নাকাশিপাড়া ও বহরমপুর শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৭ ০৩:১১
Share:

চকচকে, মসৃণ, নাক বুজে আসা সুগন্ধী, ধনে।

Advertisement

হ্যাঁ, তা-ও হচ্ছে। শুধু হচ্ছেই না, বাজারে তা বিকোচ্ছেও হইহই করে। কখনও কখনও আসল ঢাকা পড়ে যাচ্ছে নকলের চাকচিক্যে। আজ্ঞে হ্যাঁ, ধনে, কালো জিরে, এলাচ গুঁড়ো, সুগন্ধী তেল— রীতিমতো তেলমশলা কেলেঙ্কারি। নকলের গেরোয় কোনটা আসল আর কোনটা ভেজাল, হাতড়ে ফিরছে নদিয়া ও মুর্শিদাবাদ।

বৃহস্পতিবার বিকেলে ভেজাল ধনের কারবারের অভিযোগে নদিয়ার নাকাশিপাড়া থেকে রাজ্য পুলিশের এনফোর্সমেন্ট শাখা দু’জনকে ধরেছে। অভিযোগ, ধৃত সুশীল বিশ্বাস ও বিপ্লব ঘোষ কয়েক বছর ধরে ভেজাল ধনে ও কালো জিরের কারবার চালাচ্ছিল।

Advertisement

নাকাশিপাড়া থানার বীরপুর-ঘোষ পাড়ায় বিপ্লব ঘোষের বাড়িটাকে দেখিয়ে স্থানীয় এক বাসিন্দা চারপাশটা দেখে নিচু গলায় বলছেন, ‘‘আগে তো থাকত ঝুপড়ি ঘরে। কয়েক বছরের মধ্যে ফুলেফেঁপে উঠল। স্ত্রী পঞ্চায়েত সদস্য। সেই সুবাদে এলাকায় ওদের দাপটও ভাল রয়েছে। ওদের নিয়ে কথা বলতেও ভয় লাগে।”

ইঞ্জিনপুরের এক বাসিন্দা সুশীল বিশ্বাসও এলাকায় দাপুটে তৃণমূল নেতা বলে পরিচিত। স্থানীয় এক বাসিন্দার দাবি, ‘‘সুশীল বিশ্বাস তো আগে আলুর ব্যবসা করত। আর বিপ্লব ঘোষের ছিল খেজুর গুড়ের কারবার। গত কয়েক বছরে ভেজাল ধনে, কালো জিরের কারবার করে দু’জনেরই অবস্থা ফিরেছে।’’

এনফোর্সমেন্ট শাখা সূত্রে জানা গিয়েছে, নিম্ন মানের ধনে কিনে গুদামের ভিতরে তৈরি গ্যাস চেম্বারে গন্ধক, রং আর লালমাটি মিশিয়ে সেই ধনেকে চকচকে করা হতো। এঁটেল মাটি কালো জিরের মতো করে গুঁড়ো করে শুকিয়ে পোড়া মোবিল দিয়ে রং করা হত। এমনকী, পিচ থেকে তৈরি করা হত ভেজাল কালো জিরে।

বীরপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের আব্দুল আজিজ মণ্ডল এই প্রসঙ্গে বলছেন, “আমাদের দলের লোক হলেও আমরাও চাই, আইন আইনের পথেই হাঁটুক। কারণ, এমন অপরাধ কোনও ভাবেই ক্ষমা করা যায় না।” প্রশ্ন উঠছে, এমন কারবার তো বছরের পর বছর ধরে চলছে। এনফোর্সমেন্ট শাখা জানতে পারল আর স্থানীয় পুলিশ কিছুই জানত না?

এই ব্যাপারে অবশ্য পুলিশের পক্ষ থেকে কোনও সদুত্তর মেলেনি। বৃহস্পতিবার রাতে পড়শি জেলা মুর্শিদাবাদের বাসুদেবপুরে একটি ভেজাল সুগন্ধী তেল তৈরি করার কারখানায় হানা দিয়েছিল পুলিশ। কারখানার মালিক মনসুর আলিকে গ্রেফতারের পাশাপাশি দেড় হাজার বোতল নকল তেলও উদ্ধার করে পুলিশ। মনসুরকে জেরা করে ওই রাতেই অলিউল শেখ নামে এক ব্যবসায়ীকে ধুলিয়ান থেকে গ্রেফতার করা হয়। এ দিনই বেথুয়াডহরি থেকে ভেজাল জলের কারবারের অভিযোগে সুশান্ত বৈদ্য এবং সুশান্ত রুদ্রকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

তাই ছয়ঘরির আব্দুল লতিফ, বহরমপুরের মাহমুদা রহমান কিংবা পলাশির রানা বিশ্বাস বলছেন, ‘‘এখন দেখছি ভেজালটাই সব থেকে খাঁটি!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement