বুথ দখলের হুমকি থেকে বিরোধীদের বাড়ি বাড়ি কড়া নেড়ে হুমকি— শাসক দলের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ছিলই। নির্বাচনের মুখে পাল্টা প্রতিরোধও দেখা গিয়েছিল বিরোধীদের। কিছুটা পিছু হটলেও, ভোট মিটতেই, পুরনো চেহারা নিয়ে ফের ‘সন্ত্রাস’-এর পথে নেমেছে তৃণমূল। পরিস্থিতি সামাল দিতে তাই সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছিল নদিয়া জেলা প্রশাসন। বৃহস্পতিবার সেই বৈঠকের অলিখিত একটা নামও দিয়েছিল প্রশাসন— সান্তি বৈঠক।
এ দিন বৈঠকে তপ্ত আদান-প্রদান হলেও দু’পক্ষের নেতারাই চায়ের কাপ নিয়ে হাসিমুখে গাল-গল্পও করায় অন্তত সাময়িক হাঁফ ছেড়েছে
জেলা প্রশাসন। এক জেলা কর্তা বলছেন, ‘‘বৈঠকে যে হাতাহাতি হয়নি এই ঢের!’’
তবে কী হয়েছে এ দিনের বৈঠকে?
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিনের বৈঠকে বিরোদী নেতারা দাবি করেছেন— মুখ্যমন্ত্রী ‘অভিভাবকসম’। তাই তাঁর আরও বেশি দায়িত্বশীল বক্তব্য রাখা উচিৎ। সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুমিত দে কথাটা বললে তার উত্তরে তাঁকে অবশ্য শুনতে হয়েছে, ‘‘’এটা মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য নিয়ে আলোচনার জায়গা নয়।’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌরিশঙ্কর দত্ত বলেন, ‘‘তাহলে তো ক্যারিকেচার মিশ্রের (সূর্যকান্ত মিশ্র) বক্তব্য নিয়েও এখানে আলোচনা করতে হয়।’’
জেলা প্রশাসনের ডাকা সর্বদলীয় শান্তি বৈঠকে এ ভাবেই কিছুটা হলেও হাসি-মস্করার অবকাশ আবহ ছিল বলেই জানা গিয়েছে।
ভোটের পর জেলার বিভিন্ন প্রান্তে একের পর গন্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে। তৃণমূলের জেলা পরিষদের সদস্য থেকে সিপিএমের প্রাক্তন মন্ত্রী, মার খেয়েছেন অনেকেই। বোমা নিয়ে তাণ্ডব থেকে ঘরবাড়ি ভাঙার পাশাপাশি শাসক দলের হাতে আক্রান্ত হয়েছে জোট সমর্থকরা। কোথাও কোথাও তারা পাল্টা আঘাত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে কল্যাণীতে সর্বদলীয় বৈঠক ভেস্তে গিয়েছিল আগেই। ফলে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে এই শান্তি বৈঠকে তাই বিরোধীরা যে শাসক দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেবে তা জানাই ছিল। তবে প্রশাসনের কর্তারা যতটা আশা করেছিলেন এ দিনের বৈঠকে তেমন উত্তেজনা হয়নি।
প্রথমে বলতে উঠে সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুমিত দে ভোটের দিন জেলার বেশ কয়েকটি ‘পকেটের’ উল্লেখ করে দাবি করেন, আগে থেকে চিহ্নিত করা সত্বেও ওই এলাকায় সব মানুষকে ভোট দোওয়ার সুযোগ করে দিতে ব্যার্থ হয়েছে প্রশাসন।
আবার ভোটের পরেও জেলার বেশ কয়েকটি জায়গার নাম উল্লেখ করে বামফ্রন্টের শরিক দলের নেতারা বলেন যে, এই সব এলাকায় ভোটের পর শাসক দল গন্ডগোলের জন্য প্ররোচিত করছে। বামফ্রন্টের অন্য শরিকরা এবং কংগ্রেস বিজেপির জেলা সভাপতি আশুতোষ পাল সহ অন্যন্য নেতারাও তাদের দলীয় কর্মীর গুলিবিদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি তৃণমূলের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ তোলেন। জেলা কংগ্রেসর সভাপতি অসীম সাহাও তৃণমূলের সন্ত্রাসের অভিযোগ তোলেন। প্রায় সব দলের পক্ষ থেকেই গনণা কেন্দ্রের পাশাপাশি তাদের কাউন্টিং এজেন্টদের নিরাপত্তার বিষয়টিও তুলে ধরেন।
তবে সবার শেষ বক্তব্য রাখতে গিয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌরিশঙ্কর দত্ত সকলের অভিযোগ উড়িয়ে দেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন যে, ‘‘১৯৭২ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত যে নির্বাচনগুলি কি মডেল-নির্বাচন ছিল?’’ তার কথায়, ২০১১ সালের আগে যে সব নির্বাচন হয়েছে সেখানে রক্ত ছড়িয়েছিল অনেক বেশি। এ বার তেমন কিছু হয়নি বলেই তাঁর দাবি।
জেলাশাসক বিজয় ভারতী বলেন, ‘‘জেলায় শান্তি বজায় রাখার জন্য আমরা এই শান্তি বৈঠক ডেকে ছিলাম। সকলেই সাড়া দেওয়ায় আমরা খুশি।’’
সেই খুশি ১৯ তারিখ কিংবা তার পরেও থাকবে তো? প্রশ্ন সেটাই।