নৌকাডুবির জের

সুরক্ষা ঢেলে সাজা হচ্ছে ঘাটে

গত ১৪ মে বর্ধমানের কালনা থেকে নদিয়ার শান্তিপুরে নৃসিংহপুর ঘাটে আসার সময়ে নৌকাডুবিতে মারা গিয়েছিলেন ২০ জন। যাত্রী সুরক্ষা ব্যবস্থা ঠিক মতো না থাকায় ওই দুর্ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৬ ০১:২২
Share:

গুপ্তিপাড়া পারাপার চলছে আগের মতোই। এ দৃশ্য বদলাবে কি? — নিজস্ব চিত্র

হুঁশ ফিরল প্রশাসনের। তবে ২০ জনের মৃত্যুর পরে।

Advertisement

গত ১৪ মে বর্ধমানের কালনা থেকে নদিয়ার শান্তিপুরে নৃসিংহপুর ঘাটে আসার সময়ে নৌকাডুবিতে মারা গিয়েছিলেন ২০ জন। যাত্রী সুরক্ষা ব্যবস্থা ঠিক মতো না থাকায় ওই দুর্ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ।

সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়াতে ও যাত্রী সুরক্ষা ব্যবস্থার পাশাপাশি ফেরিঘাটগুলির পরিকাঠামো মজবুত করতে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিল নদিয়া ও বর্ধমান জেলা প্রশাসন। সোমবার দুপুরে কৃষ্ণনগরে জেলাশাসকের অফিসে দুই জেলা প্রশাসনের কর্তারা বৈঠকে বসেছিলেন।

Advertisement

যে ২০ জন মারা গিয়েছিলেন, তাঁদের ১৯ জনের বাড়ি শান্তিপুরে। এক জনের বাড়ি বর্ধমানে। ফেরিঘাটে পর্যাপ্ত আলো ও নজরদারি অভাব ছিল বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। উদ্ধারের কাজে গাফিলতির অভিযোগে রণক্ষেত্রও হয় নৃসিংহপুর ঘাট।

নদিয়া জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, নদীপথে যাত্রী সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এ দিন দু’টি কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি ফেরিঘাটের জন্য স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত বা পুরসভার কর্তা, সিভিল ডিফেন্স, বিডিও, নিত্যযাত্রীদের প্রতিনিধিদের নিয়ে কমিটি গড়া হয়েছে। সেই কমিটি তিন মাস অন্তর ঘাট পরিদর্শন করে জেলা স্তরে গঠিত কমিটিকে রিপোর্ট পাঠাবে। জেলা স্তরের কমিটিও ৬ মাস অন্তর বৈঠক করবে। নদিয়ার জেলাশাসক বিজয় ভারতী জানান, রেজিস্ট্রেশন ছাড়া নৌকা বা ভুটভুটি নদীপথে চলতে দেওয়া হবে না। যারা রেজিস্ট্রেশন ছাড়া নৌকা বা ভুটভুটি চালাবে তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। মাঝিদের নামের তালিকা জেলা প্রশাসনের কাছে জমা দিতে হবে। তাঁদের নির্দিষ্ট পোশাকেরও ব্যবস্থা করতে হবে। নৌকায় কত যাত্রী তোলা যেতে পারে তা দেখে রিপোর্ট পাঠাতে হবে। নির্দিষ্ট সংখ্যকের বেশি যাত্রী যাতে নৌকায় না উঠতে পারে তা দেখার জন্য ইজারাদারকে লোক রাখতে হবে।

আরও সিদ্ধান্ত হয়েছে, প্রতিটি যাত্রাবাহী নৌকায় ৫টি করে লাইফ জ্যাকেট রাখতেই হবে। ঘাটে পর্যাপ্ত আলো ও মাইকের ব্যবস্থা থাকবে। ফেরিঘাটে বোর্ড লাগিয়ে তাতে ভাড়ার তালিকা থেকে শুরু করে নৌকা ছাড়ার সময়, জেলা প্রশাসনের জরুরি ফোন নম্বর লিখে রাখতে হবে। ঘাটে জরুরি উদ্ধার কেন্দ্রও খোলা হবে। সেখানে ১০ জন করে সিভিল ডিফেন্সের সদস্য থাকবেন। উদ্ধার কেন্দ্রে দড়ি, সার্চলাইট, লাইফ জ্যাকেটও রাখতে হবে।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, আপাতত নৃসিংহপুর ঘাট, কালীগঞ্জের বল্লভপাড়া ঘাট ও নবদ্বীপ ঘাটে জরুরি উদ্ধার কেন্দ্র খোলা হবে। ফেরিঘাটগুলিতে একটি করে স্পিড বোট রাখা হবে। বসানো হবে সিসিটিভি। নদিয়ার জেলাশাসক জানান, ওই জেলার ৩৯টি গ্রাম পঞ্চায়েতের উপর দিয়ে ভাগীরথী বয়ে গিয়েছে। ওই সব গ্রাম পঞ্চায়েত পিছু দু’জন করে লোককে সিভিল ডিফেন্সের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। তাঁদের প্রতি মাসে ১০ দিন করে কাজ দেওয়া হবে। মাসে তাঁদের ৩,৮০০ টাকা ভাতা দেওয়া হবে। তা ছাড়াও মায়াপুর, হুলোর ঘাট ও নৃসিংহপুর ঘাটে ড্রেজিং করা হবে বলেও এ দিন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে যে খরচ হবে, সেটা কে বহন করবে? জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানান, ফেরিঘাট থেকে যে আয় হবে তা উন্নয়নে খরচ করা হবে। ফেরিঘাটের পরিকাঠামোর উন্নয়নের জন্য স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতি, পুরসভা, জেলা পরিষদ কিংবা জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন তহবিল থেকে খরচ করা হবে। সিভিল ডিফেন্সের খরচ সিভিল ডিফেন্স বহন করবে। কিছু খরচ ইজারাদারকেও বহন করতে হবে।

বৈঠক শেষে কালনার পুরপ্রধান দেবপ্রসাদ বাগ দাবি করেন, ‘‘সে দিনের দুর্ঘটনায় আমাদের কোনও গাফিলতি ছিল না। ফেরিঘাটে পুলিশও ছিল। এক সঙ্গে প্রচুর লোক নৌকায় ওঠার ফলেই বিপত্তি ঘটে। ওই ঘটনার জেরে আমরা শনিবারের বোর্ড মিটিংয়ে ইজারাদারের সঙ্গে ফেরিঘাটের চুক্তি বাতিল করে দিয়েছি। আপাতত পুরসভার নিয়ন্ত্রণে চলছে ফেরিঘাট। মঙ্গলবার নতুন করে টেন্ডার ডাকা হচ্ছে। শান্তিপুর ও কালনার দিকে অ্যাপ্রোচ রোড থেকে শুরু করে শান্তিপুরের দিকে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা হবে। সব খরচ বহন করবে কালনা পুরসভা।”

রোজকার নৌকা-যাত্রীরা অবশ্য প্রশ্ন তুলছেন, ‘‘এত দিন প্রশাসন ঘুমোচ্ছিল কেন? এই সব ব্যবস্থা আগে করলে তো ২০টি প্রাণ হারাতে হত না। এখন দেখার, প্রশাসন কত দ্রুত পদক্ষেপ করে।’’

নবদ্বীপ জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতির সম্পাদক অলোক মণ্ডল আবার বলেন, ‘‘বৈঠকের কথা আমাদের কেউ জানাননি। তবে যে সব সিদ্ধান্ত হয়েছে শুনছি, তার অনেকগুলো আগে থেকেই করা হয়। তবে প্রশাসন পূর্ণাঙ্গ নির্দেশ দিলে অবশ্যই আমরা তা মেনে চলব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement