পুর-ময়দানে অধীরের সেনাপতি তরুণেরাই

নিজের রাজনৈতিক ‘গড়’ হিসাবে পরিচিত মুর্শিদাবাদ জেলার পুরভোটের প্রার্থী তালিকায় নতুন মুখ আর তারুণ্যকেই প্রাধান্য দিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। অন্য দিকে, এ দিনই পুরভোটের প্রার্থী তালিকা ঘিরে বিজেপি-র বেনজির গোষ্ঠী কোন্দল প্রকাশ্যে এল জেলায়।

Advertisement

অনল আবেদিন

বহরমপুর শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৫ ০১:১৫
Share:

প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করছেন অধীর চৌধুরী। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।

নিজের রাজনৈতিক ‘গড়’ হিসাবে পরিচিত মুর্শিদাবাদ জেলার পুরভোটের প্রার্থী তালিকায় নতুন মুখ আর তারুণ্যকেই প্রাধান্য দিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। অন্য দিকে, এ দিনই পুরভোটের প্রার্থী তালিকা ঘিরে বিজেপি-র বেনজির গোষ্ঠী কোন্দল প্রকাশ্যে এল জেলায়।

Advertisement

জেলা কংগ্রেস সভাপতি আবু হেনাকে পাশে নিয়ে সোমবার প্রদেশ সভাপতি মুর্শিদাবাদ জেলার ৬টি পুরসভার যে তালিকা প্রকাশ করেন তাতে আরও দু’টি চমক রয়েছে। প্রথমটি, ৫ দিন আগে প্রকাশিত তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায় নাম থাকা সোহাগ সিংহকে নিয়ে এসে কান্দির ১৬ ওয়ার্ডে কংগ্রেসের প্রার্থী করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, সিপিএমের জোনাল ও লোকাল কমিটির বিক্ষুব্ধ সদস্য, তথা জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্যের এক সময়ের ছায়াসঙ্গী মোহন মাহাতোকে জঙ্গিপুর পুরসভার ১২ ওর্য়াডে প্রার্থী করেছে কংগ্রেস।

মুর্শিদাবাদ জেলার মোট ৭টি পুরসভার মধ্যে বহরমপুর বাদ দিয়ে বাকি ৬টি পুরসভায় আগামী ২৫ এপ্রিল ভোট রয়েছে। কান্দি, বেলডাঙা, মুর্শিদাবাদ, জঙ্গিপুর, ধুলিয়ান ও জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ মিলে মোট ৬টি পুরসভার মোট ১০৭টি আসন রয়েছে। এ দিন ওই ১০৭টির মধ্যে জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জের ৪টি আসন বাদ দিয়ে মোট ১০৩টি আসনের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে কংগ্রেস। তার মধ্যে নতুন মুখ রয়েছে ৫৮ জন। বয়সের বিচারে অনুর্ধ্ব চল্লিশ রয়েছেন ৫৪ জন। ওই ৫৪ জনের মধ্যে অধিকাংশেরই বয়স তিরিশের কোঠায়। কেন এমন সিদ্ধান্ত?

Advertisement

অধীর চৌধুরীর ব্যাখ্যা, “পুরসভা পরিচালনা করতে যেমন অভিজ্ঞতা প্রয়োজন, তেমনি দরকার তারুণ্য। সব দিক খতিয়ে দেখে পরিস্থিতি বিবেচনা করে বুথ স্তর থেকে উঠে আসা ব্যক্তিদেরই প্রার্থী করা হয়েছে।” একাধিক নাম উঠে আসায় জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জের ৪টি আসন আপাতত প্রার্থী মনোনীত করা যায়নি। এ কথা বলে অধীর চৌধুরী জানান, মঙ্গলবারের মধ্যে ওই ৪টি আসনের প্রার্থীর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

১০৩টি আসনের জন্য কংগ্রেসের মনোনীত প্রার্থীর মধ্যে ৪২ জন মহিলা। তাঁদের মধ্যে বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য কান্দির সোহাগ সিংহ। গত বৃহস্পতিবার তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেন দলের জেলা সভাপতি মান্নান হোসেন। ওই তালিকা অনুসারে কান্দি পুরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের জন্য ‘ঘাসফুল’-র প্রার্থী করা হয়েছিল সোহাগ সিংহকে। সোমবার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির প্রকাশিত তালিকাতেও সেই সোহাগ সিংহকেই কান্দি পুরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের জন্য ‘হাত’ প্রতীকের প্রার্থী করা হয়েছে।

এ বিষয়ে মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি উজ্জ্বল মণ্ডল বলেন, “সোহাগ সিংহদের রেশন দোকান রয়েছে। সেই ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়ে সরকারি সুবিধা পাওয়ার আশায় শাসক দলে তিনি নাম লিখিয়েছিলেন। পরে তিনি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাই সোহাগকে বাদ দিয়ে আমরা ওই ওয়ার্ডে সোমা রায়কে প্রার্থী করেছি।” সোহাগ অবশ্য বলেন, “বংশ পরম্পরায় কংগ্রেস করি। আমি কংগ্রেসেরই প্রার্থী। আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায় আমার ছাপানো হয়েছিল।”

অন্য দিকে, এ দিনই মুর্শিদাবাদে পুরভোটের প্রার্থীদের মনোনয়ন নিয়ে প্রকাশ্যে এল বিজেপি-র বেনজির গোষ্ঠী কোন্দল। মনোনয়ন ঘিরে বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর কর্মীদের হাতে হেনস্থা হলেন বিজেপি-র মুর্শিদাবাদ জেলা সভানেত্রী মালা ভট্টাচার্য, জেলা মুখপাত্র সুভাষ মণ্ডলেরা। বিক্ষুব্ধরা সভানেত্রীর হাত থেকে প্রার্থী তালিকা কেড়ে ছুঁড়ে ফেলে দেয় বিক্ষুব্ধেরা। এমনকী মালাদেবীকে জেলা কার্যলয় বের করে দেওয়ারও হুমকি দেন তাঁরা। এর জেরে সোমবার দুপুরে বিজেপি-র প্রার্থী তালিকা প্রকাশ অনুষ্ঠান মাঝপথে থমকে যায়! পরে অসম্পূর্ণ প্রার্থী তালিকা প্রকাশিত হয়। হয়। ১০৭টি আসনের মধ্যে আপাতত ৭১ জনের নাম মনোনীত হয়েছে।

বিক্ষুব্ধদের অভিযোগ, দলের কান্দি পুর-কমিটির মনোনীত প্রার্থীদের বাদ দিয়ে অন্যদের টাকার বিনিময়ে মনোনীত করা হয়েছে। দলের জেলা মুখপাত্র তথা জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুভাষ মণ্ডলের দিকে সরাসরি আঙুল তুলে বিক্ষুব্ধরা বলেন, “আপনি ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে কান্দি পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী বদল করেছেন।” প্রকাশ্যে এমন গুরুতর অভিযোগের জবাবে সুভাষবাবু অবশ্য বলেন, “রাজ্য কমিটির অনুমোদন পাওয়া প্রার্থীদেরই মনোনীত করা হয়েছে।”

এ দিনের বিক্ষোভের অন্যতম মুখ ছিলেন বিজেপি-র কান্দি পুর কমিটির সভাপতি প্রবালকান্তি সিংহ রায়, দু’জন সাধারণ সম্পাদক ব্রতীনকান্তি সিংহ ও রতনচাঁদ লোহ এবং কোষাধ্যক্ষ অজয়কুমার দাস। জেলা সভানেত্রী মালা ভট্টাচার্য বলেন, “ওঁরা আগাম পরিকল্পনা করে গুণ্ডাবাজি করল। রাজ্য কমিটিকে বলে ওঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” ঘোষিত সূচি অনুসারে এ দিন দুপুরে বহরমপুর শহরে দলের জেলা কার্যালয়ে পুরভোটের প্রার্থী তালিকা শুরু করেন সভানেত্রী মালাদেবী। ছোট্ট সেই ঘর তখন ভিড়ে ঠাসা। সভানেত্রীর পাশের চেয়ারে বসেছিলেন দলের জেলা মুখপাত্র সুভাষ মণ্ডল। মালাদেবী বলতে শুরু করেন, “জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জের ১৭টি আসনের সব ক’টিতে, মুর্শিদাবাদ পুরসভার ১৬টি আসনের সব ক’টিতে প্রার্থী দেওয়া হয়েছে। বেলডাঙার ১৪টি আসনের মধ্যে ১০টির জন্য এবং কান্দির ১৮টি আসনের মধ্যে ১০টি আসনের জন্য প্রার্থী মনোনীত হয়েছে।”

সে কথা শেষ হতে না হতেই পিছন দিক থেকে প্রবালকান্তি সিংহ রায়, ব্রতীনকান্তি সিংহ ও রতনচাঁদ লোহের নেতৃত্বে ১০-১২ জনের মারমুখি একটি দল চড়াও হয় মালাদেবী ও সুভাষবাবুর টেবিলের সামনে। তাঁদের হাত থেকে দলীয় প্রার্থীর তালিকা কেড়ে নিয়ে ফেলে দেয় তাঁরা। ক্ষিপ্ত কর্মীরা সুভাষবাবুকে মারতেও উদ্যত হন বলে বিজেপির-র একটি সূত্রের দাবি। মালাদেবীকে দলের জেলা কার্যালয় থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন বিক্ষুব্ধরা। বিজেপির-র যুব শাখার জেলা সভাপতি শাখরভ সরকারের নেতৃত্বে দলের অন্য কর্মীদের চেষ্টায় কোনও মতো অবস্থা সামাল দেওয়া হয়।

সহ প্রতিবেদন: কৌশিক সাহা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement