নেতারা খুশি হলেই ‘বৈধ’ হত কারবার

প্রধান রাস্তার পাশে রয়েছে পুলিশের বসানো লোহার ব্যারিকেড। কয়েক দিন আগে গাংনাপুরের এই জায়গাতেই বাজি কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে।

Advertisement

সৌমিত্র সিকদার

রানাঘাট শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:২০
Share:

গাংনাপুরের বাজি কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর। ফাইল চিত্র।

প্রধান রাস্তার পাশে রয়েছে পুলিশের বসানো লোহার ব্যারিকেড। কয়েক দিন আগে গাংনাপুরের এই জায়গাতেই বাজি কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় ব্যারিকেডের সামনে দাঁড়িয়ে গজরাচ্ছিলেন বছর সত্তরের বৃদ্ধ—‘‘এই সব কারখানায় কী হত তা সব কিছু তো রাজনৈতিক দাদা-রা জানেন। এত দিন তাঁরা চুপ করে ছিলেন কেন? কারখানায় অবৈধ বাজি তৈরি হওয়া, নিয়মের তোয়াক্কা না করে বারুদ, বাজির মশলা মজুত হয়েছে কী করে?’’ এক যুবক মন্তব্য করলেন, ‘‘এতে ওঁদের স্বার্থ জড়িয়ে। এত দিন কিছু বলেননি, এখন মুখে কুলুপ।’’

Advertisement

কোথায় স্বার্থ বাঁধা নেতাদের?

রাজনৈতিক মহল ও গাংনাপুরের বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, ক্লাবের পুজো হোক বা ভোট, মেলা হোক, ব্রিগেড-শহিদ মিনার সমাবেশ, রাজনৈতিক দলগুলির চাঁদার অন্যতম জোগানদার বাজি ব্যবসায়ীরা। বাম জমানায় তা শুরু হয়েছিল এবং তার উত্তরাধিকার বাহিত হচ্ছে তৃণমূল জমানাতেও। নদিয়া দক্ষিণের বিজেপি সভাপতি জগন্নাথ সরকারের কথায়, ‘‘এ সব হল তোলাবাজির কুফল। বাম আমলে নেতারা বাজি কারখানা থেকে তোলা তুলেছে আর এ জমানায় তৃণমূল তুলছে। ফলে তাঁরা কেউই অবৈধ বাজি বিক্রি এবং নিরাপত্তার তোয়াক্কা না করে বাজি ও মশলা মজুতে আপত্তি করেননি। পুলিশ ও প্রশাসনও তাঁদের নির্দেশে নজরদারি চালায়নি।’’ কারখানায় মালিকেরা আলোর বাজির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শব্দ বাজি তৈরি করেছেন ও বিক্রি করেছেন বলে অভিযোগ, এবং কেউ কিছু বলেননি। জগন্নাথবাবুর কথায়, ‘‘ব্যবসায়ীরা ভয় পাবেন কেন? তাঁরা তো জানতেন যে মোটা টাকা চাঁদা দিয়ে রাজনৈতিক নেতাদের পকেটে ভরে রেখেছেন। অবৈধ কারবার করে মুনাফা করতে কোনও সমস্যা হবে না। আর সেটা করতে গিয়েই এত বড় দুর্ঘটনা ঘটল। নয়তো এটা কি বিশ্বাসযোগ্য যে এত শব্দবাজি তৈরি হত আর পুলিশ জানত না?’’

Advertisement

সিপিএম ও তৃণমূল অভিযোগ অস্বীকার করেছে। সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য পবিত্র সমাদ্দার বলেন, “আমরা কোনও অন্যায়কে সমর্থন করি না। বিজেপি মনগড়া অভিযোগ করছে। দলীয় কাজে বিভিন্ন দোকান থেকে যে ভাবে চাঁদা তুলতে যাই একই ভাবে ওই বাজির কারখানা থেকেও তা নেওয়া হয়। সাধারণ মানুষের থেকেও অর্থ নেওয়া হয়। এর চেয়ে বেশি কিছু নয়।” রানাঘাট-২ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি দেবাঞ্জন গুহঠাকুরতা বলেন, “বাজি কারখানাগুলি থেকে আমাদের কেউ ব্যক্তিগত ভাবে টাকা তুলতেন কিনা তা জানি না। তবে কারও বিরুদ্ধে এ রকম প্রমাণ পেলে দলের কাছে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানাব।” জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অখিল মজুমদারও দাবি করেছেন, তাঁদের দলের কেউ কখনও বাজির কারখানা থেকে চাঁদা তোলেননি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement