ছেলের সঙ্গে নমিতা। নিজস্ব চিত্র
পাঁচটা বছর চলে গিয়েছে।
নির্মাণকর্মীর কাজ করতে ইরাকে গিয়েছিলেন খোকন সিকদার। আর ফেরেননি। আইএস জঙ্গিরা তাঁর মতো ৩৯ জন ভারতীয়কে মেরে পুঁতে দিয়েছিল মসুল শহরের মাটির নীচে।
সেই আইএস-এর পান্ডা বাগদাদি মার্কিন হামলার মুখে নিজেকে উড়িয়ে দিয়েছেন! মঙ্গলবার তেহট্টের ইলশেমারির বাড়িতে বসে খোকনের স্ত্রী নমিতা বলেন, “এত দিনে আমার স্বামীর আত্মার শান্তি হল। তবে আমরা ওই লোকটার শুধু মৃত্যু নয়, আরও কড়া শাস্তি চেয়েছিলাম!”
২০১১ সালে টাকা ধার করে ইরাকে যান খোকন। প্রথম সাড়ে তিন বছর ওখান থেকে পাঠানো টাকাতেই এখানে সংসার চলত। প্রতি শুক্রবারে ফোন করে বাড়ির লোকের সঙ্গে কথা বলতেন খোকন। ২০১৪-র জুনে শেষ ফোন আসে। মসুল শহরে তাঁর কর্মস্থল থেকে খোকন-সহ মোট ৩৯ জনকে আইএস জঙ্গিরা ধরে নিয়ে গিয়েছে তাঁরা জানতে পারেন। পরের দিন থেকে আর যোগাযোগ নেই।
২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিদেশ মন্ত্রকের নির্দেশে স্থানীয় ব্লক অফিস থেকে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য খোকন সিকদারের ছেলে, মেয়ে ও বোনের রক্তের নমুনা নেওয়া হয়। ২০ মার্চ প্রাক্তন কেন্দ্রীয় বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ রাজ্যসভায় ইরাকে অপহৃত ৩৯ জন ভারতীয়র মৃত্যুর কথা ঘোষণা করেন। ৩ এপ্রিল খোকন সিকদারের কফিনবন্দি দেহাবশেষ ইলশেমারির বাড়িতে ফেরে।
বাড়িতে এখন নমিতা, তাঁর ছেলে অভ্র এবং বছর কুড়ির মেয়ে রীতা ছাড়াও রয়েছেন খোকনের মা শোভা সিকদার। বয়স বিরানব্বই। নমিতা জানান, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে তিনি ২০১৬ সালে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে কাজ পান। গত বছর ৬ এপ্রিল মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে নবান্নে ডেকে হোমগার্ডে নিয়োগপত্র দেন। কিন্তু সংসার, শাশুড়ি ও ছোট ছেলেমেয়ে নিয়ে জেরবার নমিতা ওই কাজ নিতে পারেননি। সরকারের থেকে পাওয়া এক লক্ষ কুড়ি হাজার টাকায় পাকা ঘর হয়েছে। নমিতার কথায়, ‘‘কোনও অফিসে ‘গ্রুপ ডি’ পদে কাজ চেয়েছিলাম। মুখ্যমন্ত্রী জানান, পঞ্চায়েত ভোটের পরে দেখবেন। তবে এখনও তা হয়নি।’’
এখনও প্রতীক্ষায় নমিতা।