ধৃতকে থানায় নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।
আবাসের বাড়ি দেওয়ার নাম করে শুধু আতাবুল রহমানই নন, গ্রামের আরও অনেকের কাছ থেকে কাটমানি নিয়েছিল ধৃত আব্দুল লতিব ওরফে মিঠুন। প্রৌঢ় আতাবুলকে পিটিয়ে খুনে গ্রেফতার হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ সামনে এসেছে।
আবাস যোজনায় পাকা বাড়ি পেতে স্থানীয় তৃণমূল নেতা মিঠুনকে সাত মাস আগে তিন হাজার টাকা ‘কাটমানি’ দিয়েছিলেন পেশায় দিনমজুর আতাবুল। দু’দিন আগে তিনি জানতে পারেন, বাড়ি প্রাপকের তালিকায় তাঁর নাম নেই। অভিযোগ, শনিবার আতাবুল টাকা ফেরত চাইলে মিঠুন তাঁকে চেলাকাঠ দিয়ে পেটায়।
সংজ্ঞাহীন অবস্থায় আতাবুলকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পরে তাঁকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ ও পরে কলকাতার হাসপাতালে পাঠানো হয়। রবিবার সকালে সেখানে মৃত্যু হয় তাঁর। আতাবুলের স্ত্রী বিড়ি বাঁধেন। তাতেই কোনওরকমে সংসার চলে তাঁদের। নিহতের স্ত্রী ইসমোতারা বিবি বলেন, “গ্রামের অনেককেই ঘর পাইয়ে দেবে বলে টাকা নিয়েছে মিঠুন। এটা জেনেই মাসসাতেক আগে ওকে তিন হাজার টাকা দেন আমার স্বামী। কিন্তু তালিকা প্রকাশ হলে দেখা যায় আমার স্বামীর নাম নেই তাতে। তারপরই তিনি মিঠুনের কাছে টাকা ফেরত
চাইতে গিয়েছিলেন।’’
এ দিন মিছিল করে মিঠিপুরের মুকুন্দপুর গ্রামে গিয়েছিলেন কংগ্রেসের জঙ্গিপুর মহকুমা সভাপতি আলফাজুদ্দিন। তাঁর অভিযোগ, “এই কাটমানি নেওয়া ও পিটিয়ে মারার ঘটনায় শুধু একজন তৃণমূল নেতাই জড়িত নন। গ্রামের একাধিক তৃণমূল নেতার নাম জানিয়েছেন গ্রামবাসীরা। পুলিশ ও প্রশাসনকে গ্রামে গিয়ে মহিলাদের সঙ্গে কথা বলে জড়িতদের সকলকে গ্রেফতার করতে হবে। যাদের নাম সামনে এসেছে তারা কারও কাছে পাঁচ হাজার, কারও কাছে আরও বেশি টাকা নিয়েছে। মিঠুন আরও কয়েক জনের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিল বলেও আমরা জানতে পেরেছি।’’
এ দিন সকালে আতাবুলের মৃত্যুর খবর গ্রামে ছড়িয়ে পড়তেই উত্তেজিত গ্রামবাসীরা বিক্ষোভে নামেন। মুকুন্দপুর গ্রামের রাস্তায় বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন কয়েকশো মানুষ। কংগ্রেস ও সিপিএমের সমর্থকেরাও বিক্ষোভে নামেন বিভিন্ন জায়গায়। একদল বিক্ষোভকারী ভাগীরথী সেতু অবরোধ করে টায়ার পুড়িয়ে বিক্ষোভ দেখান। দুপুরে ঝাড়খণ্ড সীমানা দিয়ে পালানোর সময় পুলিশ মিঠুনকে পাকড়াও করে। তারপর
বিক্ষোভ থামে।
এই ঘটনায় ধৃতের কঠোর শাস্তির দাবিতে আজ, সোমবার জেলা জুড়ে বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দিয়েছে সিপিএম। দলের জেলা সম্পাদক জামির মোল্লা বলেন, “কাটমানির টাকা চাইতে যাওয়াটা অপরাধ, নেওয়াটা অপরাধ নয়! এ ভাবেই রাজ্য জুড়ে দুর্নীতির সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা।’’
বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য সুজিত দাস বলেন, “আবাস যোজনায় কত বড় দুর্নীতি হয়েছে, তার প্রমাণ মিলছে। তালিকা থেকে অন্তত ৪০ শতাংশের বেশি নাম বাদ যাবে রাজ্য প্রশাসনের সমীক্ষায়। আবাস যোজনায় সর্বত্রই তৃণমূল নেতারা গ্রামে গ্রামে কাটমানি নিয়েছেন। অনেকেই বাড়ি পাননি। সাহস করে এক ব্যক্তি শাসক নেতার কাছে টাকা ফেরত চাইতে গিয়ে খুন হলেন।’’
মুকুন্দপুর গ্রামটি রাজ্যের বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী আখরুজ্জামানের বিধানসভা এলাকার অন্তর্গত।
আখরুজ্জামান এ দিন বলেন, “এই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তির সঙ্গে তৃণমূলের কোনও সম্পর্ক নেই। এমন পাশবিক ঘটনার তীব্র ভাষায় নিন্দা করছে দল। পুলিশকে বলেছি সঠিক ভাবে তদন্ত করার জন্য। অভিযুক্ত যেন কঠোর সাজা পায়, তা-ও সুনিশ্চিত
করতে হবে।”
এ দিকে, রবিবার এন আর এস হাসপাতালে প্রদেশ কংগ্রেসের একটি প্রতিনিধি দল আতাবুলের স্ত্রী-পরিবারের সঙ্গে দেখা করে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকারের নির্দেশে দলটি মৃতের পরিবারকে সব ধরনের আইনি এবং আনুষঙ্গিক সহযোগিতার আশ্বাস দেয়। এ দিনই আতাবুলের দেহের ময়না তদন্ত করা হয়েছে। রবিবার গভীর রাতে তাঁর দেহ গ্রামে পৌঁছনোর কথা।