Last Rite

ছেলেকে মাটি দিতে গ্রামে ইশা

দত্তপুকুর বিস্ফোরণে ইশার ছেলে রনি শেখের মৃত্যু হয়েছে। মারা গিয়েছে তার দাদা জেরাত শেখ সহ তিন ভাইপো। তাদের কবরে মাটি দিয়ে প্রার্থনা জানাতে তাকে প্যারোলে নিয়ে আসা হয়েছে নতুন চাঁদরায়।

Advertisement

বিমান হাজরা

অরঙ্গাবাদ শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০২৩ ০৬:২৩
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

ছেলের কবরে মাটি দিতে নতুন চাঁদরায় নিয়ে আসা হল এনআইএ-র হাতে ধৃত ইশা শেখকে। প্রাক্তন মন্ত্রী জাকির হোসেনের উপরে নিমতিতা রেল স্টেশনে বিস্ফোরণ হামলায় প্রায় এক বছর আগে তাকে গ্রেফতার করে এনআইএ। দত্তপুকুর বিস্ফোরণের ঘটনায় তার ছেলে রনি শেখের মৃত্যু হয়েছে। মারা গিয়েছে তার দাদা জেরাত শেখ সহ তিন ভাইপো। তাদের কবরে মাটি দিয়ে প্রার্থনা জানাতে তাকে প্যারোলে নিয়ে আসা হয়েছে নতুন চাঁদরায়। সন্ধ্যের পর পুলিশ তাকে নিয়ে গ্রামে ঢোকে। কড়া পাহারা ছিল গ্রামে স্থানীয় সুতি থানার পুলিশেরও। ইশার আশপাশে যেতে দেওয়া হয়নি কাউকেই। অন্ধকারে নিরাপত্তার কারণে সংবাদ মাধ্যমও গ্রামে ঢুকতে নিষেধ করা হয়।

Advertisement

সুতি থানার আইসি প্রসূন মিত্র বলেন, ‘‘ইশাকে কলকাতার একটি জেল থেকে নিয়ে এসেছে সেখানকারই সশস্ত্র পুলিশের কড়া পাহারায়। ৮ ঘণ্টার জন্য প্যারোলে ছাড়া হয়েছে তাকে ছেলের কবরে প্রার্থনা জানানোর জন্য।"

প্রথমেই তাকে কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে নিয়ে যাওয়া হয় নতুন চাঁদরায় তার নিজের বাড়িতে। এই সময় অন্যান্য বাড়ির লোকজনকেও সে বাড়িতে যেতে দেওয়া হয়নি। এমনকি ইশাকে নিয়ে গ্রামে ঢোকার পরে রাস্তাতেও লোকজনের চলাচল নিয়ন্ত্রিত করা হয়। বিশেষ করে এনআইএ-র হাতে ধৃত অভিযুক্ত বলে রাতের অন্ধকারে গ্রামে নিয়ে আসায় অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হয়েছে পুলিশকে। বাড়ির মধ্যে পরিবারের লোকজন ছাড়া কারও সঙ্গে কথাবার্তা সে ভাবে বলতে দেওয়া হয় নি ইশাকে। সর্বক্ষণ পুলিশ তাকে ঘিরে ছিল।

Advertisement

বারাসাত হাসপাতালের পুলিশ মর্গ থেকে ৬ জনের মৃতদেহ সুতিতে নিয়ে আসা হয় মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৩টে নাগাদ। বিড়ি শিল্প তালুক গোটা অরঙ্গাবাদ তখনও ঘুমিয়ে। শুধু জেগে নতুন চাঁদরায় মৃত জেরাত শেখের পরিবার। দত্তপুকুর বিস্ফোরণে মৃত ৬ জনের ৫ জনই সেই পরিবারের। আর এক জন তাদেরই আত্মীয় ঝাড়খণ্ডের গুমানি গ্রামের। চাঁদরার কবরস্থানে আগে থেকেই খোঁড়া ছিল ৫টি কবর।

সেখানেই নিয়ে যাওয়া হয় সকলের দেহ।আর তখনই মৃত জেরাতের পরিবারের লোকজন আর সামলে রাখতে পারলেন না নিজেদের। তিন দিনের বুকে চেপে রাখা শোক যেন আছড়ে পড়ল মৃতদেহের উপর।বিস্ফোরণে তাদের পরিবারের লোকজনের মৃত্যু হয়েছে জেনেও লোক জানাজানি এড়াতে এ কদিন নিজেদের সংযত রাখার চেষ্টা করেছেন তারা। জেরাতের স্ত্রী আসমা বিবি, হাবিব শেখের দিদি সেতারা বিবিরা অবশ্য চিন্তিত তাদের পরিবার এখন চলবে কী করে? তবে রাতের অন্ধকার কাটার আগেই মিনিট ৪০-এর মধ্যেই কবর দেওয়ার শেষ করে বাড়িতে ফেরেন তারা।

আসমা বিবির দুই ছেলে রয়েছে মৃতের তালিকায়। তবে এ দিনও আসমা বিবি বলেছেন, ‘‘আমি জানতাম না বাজি কারখানার কাজে যাচ্ছে ছেলেরা। জানলে যেতে দিতাম না।’’

তবে মঙ্গলবার গ্রামবাসীরা সেভাবে ভিড় করেননি কবরস্থানে। গ্রামেও রাস্তাঘাট ছিল নির্জন।গ্রামবাসীদের মধ্যেও ছিল আতঙ্ক।

তাদের আশঙ্কা পুলিশ ও এনআইএ আবার হানা দিতে পারে গ্রামে।

রবিবার দুপুরে সুতি থানায় খবর এসেছিল দত্তপুকুর বিস্ফোরণে রয়েছে নতুন চাঁদরার অনেকেই। কিন্তু দেহ সনাক্ত করতেই পেরিয়ে যায় ২৪ ঘণ্টা।

সোমবার মৃত জেরাতের স্ত্রী আসমা বিবি প্রথম মুখ খুলে জানিয়ে দেন, পরিবারের ৫ জনের মৃত্যুর খবর। সরকারি ভাবে মৃতের খবর না জানানো হলেও রবিবার থেকেই নতুন চাঁদরা গ্রাম জুড়ে বসানো হয়েছিল কড়া পুলিশি পাহারা। মঙ্গলবার ইশার জন্য পুলিশি পাহারা আরও বাড়ানো হয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement