ছাতু-বাইক। নিজস্ব চিত্র
ভেজালের আশঙ্কা জাঁকিয়ে বসার মাঝেই এক অভিনব ব্যবসা পৌঁছল বাড়ির দুয়ারে। ফরাক্কা, শমসেরগঞ্জ থেকে সাগরদিঘি সর্বত্রই দেখা মিলছে সেই কারবারের। রোজার মাসে বাড়ির দুয়ারে গিয়ে পিষে দেওয়া হচ্ছে ছোলার ছাতু। সঙ্গে থাকা ভাজা ছোলা চোখের সামনেই মেশিনে পিষিয়ে কয়েক মিনিটের মধ্যেই গরমাগরম তুলে দেওয়া হচ্ছে।
মুর্শিদাবাদের গ্রামেগঞ্জে খাবার হিসেবে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছাতু। সে ছোলার ছাতুই হোক বা যবের। শ্রমিক থেকে মজুর, এমনকী মধ্যবিত্তের ঘরেও ছাতুর চলন রয়েছে। মূলত, পান্তা ভাতের সঙ্গে ছাতু, পেঁয়াজ আর লঙ্কা মেখে থালা ভর্তি ভাত খেয়ে সাত সকালেই কাজে বেরিয়ে পড়েন অনেকেই। কিন্তু অভিযোগ, বাজারে নির্ভেজাল ছাতুর জোগান মেলা ভার। আর এই পরিস্থিতিতেই অভিনব ব্যবসা শুরু করেছেন।
বিহারের কদম শরিফের ব্রিজমোহন পটেল। জানা গিয়েছে, এই ব্যবসায় বিনিয়োগ তাঁর। তবে তাঁর অধীনে এই কারবারে জড়িয়ে অন্তত ৩০০ জন হকার। যারা এ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় মানুষের দুয়ারে গিয়ে ছাতু পিষে দিচ্ছে।
মুর্শিদাবাদে এসেছেন তাঁদেরই অন্তত ১৬ জন। এই ব্যবসার উপকরণ বলতে একটি মোটরবাইক। সেই মোটরবাইকের পিছনের ক্যারিয়ারে বসানো থাকছে ছোট্ট পেষাই মেশিন। সামনের পাদানিতে রাখা এক বস্তা ভাজা খোসা সহ ছোলা। মোটরবাইক চালিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরছেন কানাইয়ালাল, প্রমোদলাল, রামপ্রসাদদের মতো কারবারিরা। ফরাক্কার অর্জুনপুরে এক বাড়ির সামনে কানাইয়ালাল বলেন, “১২০ টাকা কিলো দরে চোখের সামনে পিষে দিচ্ছি ছাতু। খোলা বাজারে প্যাকেটের ছোলার ছাতুর দাম ১৫০ টাকা কিলো। কিন্তু চোখের সামনে পিষে খাঁটি ছাতু কম দামে দিচ্ছি ক্রেতাকে। এই সময় রোজার মাস। তাই ভাল বিক্রি ছাতুর। দৈনিক ৫০ থেকে ৬০ কিলো ছাতু বিক্রি হচ্ছে। তবে বিক্রি যাই হোক খরচ ও আয় সবটাই মালিকের। আমাদের মজুরি প্রতিদিন ৫০০ টাকা। প্রতি সপ্তাহে মালিকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা দিতে হয় বিক্রির টাকা। সেইমতই ছোলা আসে পরের সপ্তাহে।”
রোজা শেষ করে ইফতার করবেন শাদরুল শেখ। তিনি নিলেন ৬০ টাকা দিয়ে ৫০০ গ্রাম ছাতু। তিনি বলছেন, “বাড়িতে সবাই ছাতু ভালবাসে। শুকনো লঙ্কা ভেজে পান্তা ভাতের সঙ্গে ছাতু শীত ছাড়া সারা বছরেই চলে বাড়িতে। এতে কিছুটা খরচ বাঁচে। কিন্তু এভাবে পেষাই ছাতু কেনাএই প্রথম।”