—প্রতীকী ছবি।
মুম্বইয়ে নির্মীয়মাণ আবাসনের ২২ তলায় কাজ করার সময় অসাবধানতাবশত পড়ে গিয়ে মৃত্যু হল বাংলার এক শ্রমিকের। মৃতের নাম শুকুর শেখ (২৪)। তাঁর বাড়ি মুর্শিদাবাদের খড়গ্রাম থানার নগরে। মিজ়োরামে মালদহের শ্রমিকদের পর মুর্শিদাবাদেও একই ঘটনায় ফিরে এল সেই পরিযায়ী-বিতর্ক।
মৃতের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০ দিন আগে মুম্বইয়ের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন শুকুর। রাজমিস্ত্রির কাজ করতেই সেখানে গিয়েছিলেন। রবিবার বিকেলে একটি নির্মীয়মাণ আবাসনের ২২ তলা থেকে পড়ে যান তিনি। স্থানীয় হাসপাতালে তাঁকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হলে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
শুকুরের ন’মাসের সন্তান রয়েছে। বৃদ্ধ মা-বাবাকে নিয়ে ভাড়া বাড়িতে থাকতেন তিনি। মৃত যুবকের কাকা রহমান শেখ বলেন, ‘‘বাড়ির একমাত্র রোজগেরে সদস্য ছিল। ছোট সন্তান নিয়ে রাস্তায় বসে গেল বৃদ্ধ মা-বাবা।’’
সম্প্রতি মিজ়োরামে রেলসেতু নির্মাণের কাজে গিয়ে প্রাণ গিয়েছে বাংলার ২৩ জন শ্রমিকের। তাঁরা প্রত্যেকেই মালদহের বাসিন্দা। সেই ঘটনার পর থেকেই রাজ্য সরকারকে বিঁধতে শুরু করেছে বিরোধীরা। তাদের বক্তব্য, রাজ্যে কর্মসংস্থানের সুযোগ কম বলেই এখানকার শ্রমিকদের ভিন্রাজ্যে যেতে হচ্ছে। পাল্টা শাসক শিবিরের দাবি, কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ১০০ দিনের টাকা বন্ধ করে রেখেছে। তাই মানুষকে ভিন্রাজ্যে ছুটতে হচ্ছে। প্রশাসনিক সূত্রেরও বক্তব্য, পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য বেশ কিছু চিন্তাভাবনা রয়েছে রাজ্য সরকারের। সপ্তম দফার ‘দুয়ারে সরকার’ শিবিরে এ বার পরিযায়ী শ্রমিকদের নাম নথিভুক্তিতে জোর দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি বিশ্ব বাংলা মেলা প্রাঙ্গণে প্রশাসনিক সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, এবার থেকে কোনও পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু হলে তাঁর পরিবারকে সরকার দু’লক্ষ টাকা দেবে। আহত হলে মিলবে ৫০ হাজার টাকা। পরিযায়ীদের বিমা করবে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী পরিযায়ী শ্রমিকদের এ রাজ্যে ফিরে আসার আহ্বানও জানান। প্রশাসনিক সূত্রের দাবি, সেই লক্ষ্যেই পরিযায়ীদের তথ্য ভান্ডার তৈরি করতে চাইছে রাজ্য সরকার।
যদিও মুখ্যমন্ত্রীর নতুন ঘোষণায় চিঁড়ে ভিজবে বলে মনে করছে না শ্রমিক সংগঠনগুলির একাংশ। তাদের বক্তব্য, সরকার আগে ঠিক করুক পরিযায়ী শ্রমিকদের কী কাজে দেবে। তারপর ফেরার সিদ্ধান্ত। জেলা ভিত্তিক কাজের তালিকা প্রকাশের দাবিও তুলেছে তারা। প্রায় দেড় দশক ধরে চেন্নাইয়ে ফুলের কারিগর হিসাবে কাজ করছেন পাঁশকুড়ার পূর্ব বাকুলদা গ্রামের সুকুমার মণ্ডল। তিনি বলছেন, ‘‘পরিবার ছেড়ে বাইরে থাকতে কি আর মন চায়! কিন্তু এ রাজ্যে কাজ কোথায়? রাজ্য সরকার আমাদের জন্য কাজের কী ব্যবস্থা করছে, আগে এটা ঘোষণা করুক। তখন ভেবে দেখা যাবে রাজ্যে ফিরব কি না।’’