প্রতীকী ছবি।
প্রিয় বন্ধুর চেষ্টায় পাচার হওয়ার চল্লিশ দিন পরে মুম্বইয়ের যৌনপল্লি থেকে ফিরল বছর তেরোর এক নাবালিকা। বিয়ের লোভ দেখিয়ে হরিহরপাড়ার বহরানের এক যুবক তাকে পাচার করে দিয়েছিল।
মঙ্গলবার হরিহরপাড়ার বিডিও পূর্ণেন্দু সান্যাল বলেন, ‘‘মেয়েটি সবে ফিরেছে। বুধবার তার সঙ্গে দেখা করে আমরা কথা বলব। তার ভিত্তিতে অপরাধীদের চিহ্নিত করা হবে। মেয়েটির পড়ার ব্যবস্থাও করা হবে।’’
হরিহরপাড়ার প্রত্যন্ত প্রদীপডাঙা গ্রাম থেকে গত ডিসেম্বরে পাচার করা হয়েছিল মেয়েটিকে। পুলিশকে সে জানিয়েছে, এক বিকেলে পাশের বহরান গ্রামের যুবক সফিকুল শেখ ছোট ম্যাটাডর নিয়ে এসেছিল পেঁয়াজ কিনতে। সে তাকে বিয়ে এবং মুম্বইয়ে চাকরির প্রস্তাব দিয়েছিল। মেয়েটি ঠিক করতে পারছিল না, যাবে কি না। একরকম জোর করেই সফিকুল তাকে নিয়ে কলকাতায় ও পরে মুম্বই নিয়ে চলে যায়। পরে সে আব্বাস শেখ নামে এক জনের কাছে মেয়েটিকে পাচার করে সে। এর পরে নিজাম ও তহিমিনা নামে দু’জনের হাতে পড়ে সে। হাতবদল হতে-হতেই সে পৌঁছে যায় যৌনপল্লিতে। নির্যাতিত হতে-হতে এক সময়ে সে আত্মহত্যা করার চেষ্টাও করেছিল। ধরা পড়ে আরও অত্যাচারিত হয়। মেয়েটির অভিযোগ, ‘‘আমাকে ওরা মেরেছে। চাকু দিয়ে হাত পা কেটে দিয়েছে। আমি পুলিশ আর বিডিওকে সব জানাব।’’
দেড় বছর আগে মেয়েটির বন্ধু প্রিয়া খাতুনের বিয়ের চেষ্টা রুখেছিল কন্যাশ্রীযোদ্ধারা। এ বার সে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। কন্যাশ্রীদের হয়ে সে তখন থেকেই কাজ করে। কন্যাশ্রীদের নেত্রী তথা একটি অসরকারি সংস্থার কর্মী জাকিরুন বিবি-কে মেয়েটির নিখোঁজ হওয়ার খবর দেয় প্রিয়া। জাকিরুন জানান বিডিও, ওসি এবং প্রশাসনিক কর্তাদের। হরিহরপাড়া থানার পুলিশ সফিকুলের খোঁজ শুরু করে। তার বাড়িতে তল্লাশি চালায়। পরিবারকে চাপও দিতে থাকে পুলিশ।
গত ২১ জানুয়ারি প্রিয়ার বাড়িতে ফোন আসে তহিমিনা বিবির। নিজেকে মেয়েটির ‘ত্রাতা’ হিসেবে পরিচয় দিয়ে সে জানায়, তার বাড়ি মুর্শিদাবাদেরই ইসলামপুরে। নিজের বাড়িতে বসে মেয়েটি বলে, ‘‘আমিই প্রিয়ার বাড়ির ফোন নম্বর তহিমিনা বিবিকে দিয়েছিলাম।’’
মেয়েটির বাবা নেই। লোকের বাড়িতে কাজ করে দুই মেয়েকে নিয়ে সংসার চালান মা। কষ্টের সংসার। অসরকারি সংগঠনের পক্ষে সম্বিত সিংহ বলেন, ‘‘অনেক ঝড়ঝাপটা গিয়েছে। আমরা চাইছি, ও প্রথমে মানসিক ভাবে চাঙ্গা হয়ে উঠুক। তার পর তাকে নতুন করে স্কুলে ভর্তি করব। ব্লক প্রশাসন আমাদের সাহায্য করবে বলে কথা দিয়েছে।’’