—প্রতীকী চিত্র।
দেখা করবে বলে রাতের অন্ধকারে প্রেমিকাকে বাইরে ডেকে তাকে গণধর্ষণের অভিযোগে প্রেমিক-সহ চার জনকে দোষী সাব্যস্ত করল মুর্শিদাবাদের আদালত। অভিযুক্তদের গায়ের উল্কি দেখে তাদের চিহ্নিত করেছিল তদন্তকারীরা। দু’বছর আগে তৃতীয়ার দিনের ওই ঘটনায় এ বছর দুর্গাপুজোর তৃতীয়ার দিন পকসো, ভারতীয় দণ্ডবিধি এবং সাইবার আইনে অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত করল লালবাগ বিশেষ পকসো আদালত। বুধবার সাজা ঘোষণা।
ঘটনাটি ২০২১ সালের। পুজোর সময় মুর্শিদাবাদ শহরে মামার বাড়িতে বেড়াতে আসে বছর পনেরোর এক নাবালিকা। পুলিশ সূত্রে খবর, ফেসবুকে এক যুবকের সঙ্গে আলাপ হয় মেয়েটির। যুবকের বাড়ি আবার নাবালিকার মামার বাড়িরই আশপাশে। কিছু দিনের মধ্যে দু’জনের মধ্যে প্রণয়ঘটিত সম্পর্ক হয়। তাদের ফোনে কথাবার্তা হত। মাঝেমধ্যে হত দেখাসাক্ষাৎ। তাই মামার বাড়িতে বেড়াতে আসতেই নাবালিকার সঙ্গে দেখা করতে জোরাজুরি করে ‘প্রেমিক।’
তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, তৃতীয়ার রাত। আচমকা প্রেমিক ফোন করে মেয়েটিকে দেখা করতে বলে। এক রকম বাধ্য হয়েই রাজি হয় মেয়েটি। মামার বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে একটি নির্জন জায়গায় দেখা করতে যায় সে। পৌঁছনো মাত্র খটকা লাগে মেয়েটির। দেখে ওই যুবকের সঙ্গে আরও তিন যুবক আছেন। মেয়েটি তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসতে চায়। কিন্তু ‘প্রেমিক’ তার পথ আটকে দাঁড়ায় বলে অভিযোগ। তার পর গণধর্ষণ করা হয় তাকে। অভিযুক্তরা ছোট ছোট ভিডিয়ো ক্লিপ করে রাখে ওই ঘটনার। ফোনটি ছিল সেই প্রেমিকেরই।
অভিযোগ, ধর্ষণের পর নাবালিকাকে ভয় দেখানো হয়। অত্যাচারের কথা লোক জানাজানি হলে তার ভিডিয়ো ভাইরাল করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। মেয়েটি অসুস্থ অবস্থায় বাড়ি ফেরে। বাড়ির কাউকে জানতে দেয়নি, তার সঙ্গে কী হয়েছে। কিন্তু, পরে ওই ভিডিয়ো ভাইরাল করার হুমকি দিয়ে নির্যাতিতার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতে চায় সেই ‘প্রেমিক’। ফোনে বার বার তার হুমকি সত্ত্বেও মেয়েটি আর প্ররোচনায় পা দেয়নি। অন্য দিকে, অভিযুক্ত যুবক মেয়েটির মায়ের মোবাইলে সেই ভিডিয়ো পাঠিয়ে দেন। ফোন করে জানান, এর পর তো মেয়েকে কেউ বিয়ে করবে না। তিনিই বিয়ে করবেন।
মেয়ের কাছে সব কিছু শোনার পর তাকে নিয়ে মুর্শিদাবাদ পুলিশের দ্বারস্থ হন মা। অভিযোগ পেয়ে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। অভিযুক্তদের ধরতে ফাঁদ পাতা হয়। প্রথমে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়। পরে জিয়াগঞ্জ থেকে পাকড়াও হয় চতুর্থ অভিযুক্ত। চলে মামলা। সাক্ষ্যগ্রহণের পর দু’বছর আগে তৃতীয়ার দিনে সেই ঘটনায় চার অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করা হল এ বছর তৃতীয়ায়। আদালত সূত্রে খবর, সাক্ষ্যগ্রহণের পাশাপাশি ওই ভিডিয়ো পরীক্ষা করেন তদন্তকারীরা। ভিডিয়োতে নির্যাতিতার মুখ দেখা গেলেও অভিযুক্তদের মুখ ঢাকা ছিল। তবে দুই অভিযুক্তের শরীরে থাকা উল্কির মাধ্যমে চিহ্নিত করতে সুবিধা হয় পুলিশের। ওই রায় প্রসঙ্গে সরকারি পক্ষের আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মাত্র দেড় মাসের মধ্যে সাক্ষ্যগ্রহণ থেকে বিচার শেষ হয়েছে। আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক সাজার আর্জি জানানো হয়েছে। যে সব মামলায় অপরাধী সাব্যস্ত হয়েছে চার জন, তাতে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড হতে পারে।’’