প্রতীকী ছবি।
সিবিআই চুপচাপ। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকও মুখে প্রায় কুলুপ এঁটে বসে আছে! বারবার তিন বার চিঠি লেখা সত্ত্বেও তাদের তরফে টুঁ শব্দটি নেই।
তিন-তিন বার তাগাদা দিয়েও লাভ হয়নি। তাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেল পদক চুরির তদন্তের সাক্ষ্য, প্রমাণ-সহ সবিস্তার নথি চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে আরও এক বার চিঠি দেওয়ার কথা ভাবছে নবান্ন। কারণ, সবিস্তার নথিপত্র হাতে না-আসায় নোবেল চুরির তদন্তে সরকারি ভাবে এক ইঞ্চিও এগোতে পারেনি বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)। সেই জন্য সিবিআইয়ের কাছ থেকে যাবতীয় নথি হাতে পেতে ফের ‘রিমাইন্ডার’ পাঠানো ছাড়া গত্যন্তর নেই নবান্নের। তাতেও যে সিবিআই নড়েচড়ে বসবে আর নোবেল তদন্তের ভার সরকারি ভাবে হাতে নিতে পারবে রাজ্য, এমন নিশ্চয়তা অবশ্য দিতে পারছেন না নবান্নের তাবড় কর্তারা।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত অগস্টে শান্তিনিকেতনে গিয়ে জানিয়েছিলেন, সিবিআই না-পারলে নোবেল নিয়ে তদন্ত করবে রাজ্যই। তাঁর সেই ঘোষণার পরে পরেই তৈরি হয় সিট। কিন্তু নবান্নের বক্তব্য, সিবিআই নোবেল তদন্ত মুলতুবি রেখেছে। পুরোপুরি ছেড়ে দেয়নি। তাই গঠনের পরেও বিশেষ তদন্তকারী দল আনুষ্ঠানিক ভাবে তদন্ত শুরু করতে পারছে না। ‘‘সিট তদন্ত শুরু করার আগে নোবেল অনুসন্ধানে এ-পর্যন্ত কতটা কী অগ্রগতি হয়েছে, তা জেনে নেওয়া দরকার। এবং সেটা কেন্দ্রের কাছে প্রথম জানতে চাওয়া হয়েছে মাস নয়েক আগে। কিন্তু দেখছি-দেখব করে কিছুই জানায়নি তারা। তাই যাবতীয় প্রস্তুতির পরেও তদন্ত শুরু করা যাচ্ছে না,’’ বলেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা।
আরও পড়ুন: সবার প্রিয় উমর খেলাতেও তুখোড়, জুনেই ছিল জন্মদিন
২০০৪ সালের ২৪ মার্চ শান্তিনিকেতনের রবীন্দ্র ভবন থেকে নোবেল পদক-সহ ৪৭টি স্মারক চুরি হয়ে যায়। নবান্নের বক্তব্য, তার ছ’দিনের মাথায় তদানীন্তন বাম সরকার বিজ্ঞপ্তি জারি করে তদন্তভার তুলে দেয় সিবিআইয়ের হাতে। কিন্তু ওই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা গত বারো বছরে নোবেল পদক খুঁজে বার করতে তো পারেইনি। তদন্তের পক্ষে তেমন কোনও বড়সড় প্রামাণ্য নথিও জোগাড় করতে পারেনি তারা।
স্বরাষ্ট্র দফতর জানাচ্ছে, ২০০৪ সালে সিবিআই তদন্ত শুরু করে। নোবেলের হদিস পেতে ১০ লক্ষ টাকার পুরস্কার ঘোষণাও করে তারা। চোর ধরতে সাহায্য চাওয়া হয় ইন্টারপোলের। তবু কোনও কাজ হয়নি। এই অবস্থায় তদন্ত শুরুর বছর তিনেক পরে সিবিআই হাত গুটিয়ে নেয়। পরবর্তী কালে বাংলাদেশে এক দুষ্কৃতী ধরা পড়ায় ২০০৭ সালে তারা ফের তদন্ত শুরু করার জন্য আবেদন জানায় আদালতের কাছে। সেই তদন্তেও তেমন আশানুরূপ ফল মেলেনি। দু’দফায় তদন্তের পরে সিবিআইয়ের ধারণা, ভিন্দেশে পাচার হয়ে গিয়েছে নোবেল পদক। সেখানে পদকটি হয় গলিয়ে কিংবা নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। ওই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ২০০৯-এর অগস্টে আদালতে গিয়ে তদন্ত মুলতুবি রাখার নির্দেশ দেওয়ার জন্য আবেদন জানায়। সিবিআই তখন বলেছিল, এ ব্যাপারে নতুন সূত্র মিললে তারা আবার তদন্ত শুরু করতে পারে। ২০১০-এর ৫ অগস্ট আদালত তাদের আবেদন মঞ্জুর করে।
এই অবস্থায় তদন্ত শুরু করার জন্য সিবিআইয়ের সবিস্তার কেস ডায়েরি চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে দফায় দফায় চিঠি দিয়েছে রাজ্য। কিন্তু সিবিআই খোলসা করে কিছুই জানাচ্ছে না। অগত্যা হাত গুটিয়ে বসে থাকা ছাড়া বিশেষ তদন্ত দলের করার কিছু নেই। এই অচলাবস্থা কাটাতেই নোবেল তদন্তের নথি পেতে ফের চিঠি লিখতে চাইছে রাজ্য।