ফাইল চিত্র।
প্রশাসনিক কাজ রয়েছে। তার উপরে বৈঠকের চাপে রীতিমতো হাসফাঁস করছেন জেলাশাসকেরা। এই পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসনের উপরে বৈঠকের বাড়তি ‘বোঝা’ কমাতে চাইছে নবান্ন। প্রতিটি দফতরকে এ নিয়ে সম্প্রতি সতর্কও করা হয়েছে বলে প্রশাসনিক সূত্রের খবর। দরকারে এ নিয়ে সুনির্দিষ্ট আদেশনামাও আগামী দিনে প্রকাশ করতে পারে নবান্নের
শীর্ষ মহল।
জেলা প্রশাসনগুলি জানাচ্ছে, মুখ্যসচিব নিজে সপ্তাহে বা দু’সপ্তাহে একবার জেলার কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে পরিস্থিতির পর্যালোচনা করেন। তা বাদ দিয়ে প্রতি দিনই গড়ে ২-৩টি করে বিভিন্ন দফতরের সচিবের সঙ্গে বৈঠকে থাকতেই হয় জেলাশাসক বা জেলা প্রশাসনের অন্য কর্তাদের। সব মিলিয়ে মাসে অন্তত ৬০-৭০টি এমন বৈঠক হয়। রাজ্য স্তর থেকে যে নির্দেশ আসে, তা মহকুমা-ব্লক স্তরে পৌঁছে দিতে সেখানকার আধিকারিকদের সঙ্গেও কথা বলা দরকার। ফলে দৈনিক আরও একটি বা দু’টি অতিরিক্ত বৈঠক করতেই হয়। একেকটি বৈঠকের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত গড়ে এক ঘণ্টা সময় ধরলেও দিনে চার-পাঁচ ঘন্টা সময় বৈঠকেই কেটে যায়। প্রশাসনের শীর্ষ মহলের পর্যবেক্ষণ, এ ভাবে বৈঠকে সময় কাটলে অন্যান্য প্রশাসনিক কাজের ক্ষতি হবেই।
প্রসঙ্গত, দুয়ারে সরকার এবং পাড়ায় সমাধান কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর থেকে জেলা প্রশাসনগুলির কাজ বেড়েছে। এর উপরে কোভিড পরিস্থিতিতে চিকিৎসা এবং টিকাকরণেও বাড়তি লোকবল নিয়োগ করতে হয়েছে জেলাশাসকদের। তাই কাজের চাপ যেমন বেড়েছে, তেমনই কমেছে লোকবলও। প্রশাসনের খবর, এই পরিস্থিতিতে মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী নিজেও চাইছেন, কাজের স্বার্থেই বৈঠকের আওতা থেকে জেলা-কর্তাদের যতটা সম্ভব মুক্ত রাখা হোক। সেই মনোভাবই পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন দফতরের সচিবের কাছে।
প্রশাসনিক সূত্রের মতে, অতিমারি পরিস্থিতিতে অনলাইন বা ভার্চুয়াল মাধ্যমের বৈঠকে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে সরকারি-বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রই। কাজেই সশরীরে হাজির না-থেকেও বৈঠক করা যেতে পারে, এই মনোভাব বোধ হয় বৈঠকের সংখ্যাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। তাই কোনও বিষয়ে আলোচনা দরকার হলেই বৈঠক ডাকা হচ্ছে। এই মনোভাবকেও বদলাতে চাইছে নবান্ন। সূত্রের খবর, বিভিন্ন দফতরের উদ্দেশে নবান্নের শীর্ষমহলের বার্তা, দু’সপ্তাহে একবার বৈঠক করার ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা করা হোক। ই-মেল, হোয়াটসঅ্যাপ, ফোন এবং সরকারি চিঠিপত্র সমন্বয় এবং নজরদারি এবং নির্দেশ আদানপ্রদানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। ফলে বৈঠকের সংখ্যা কিছুটা কমলেও সমন্বয়ের প্রশ্নে সমস্যা তৈরি হবে না।
প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, “মোদ্দা কথায়, বৈঠকের সংখ্যা কমাতে চাইছে প্রশাসন। এতে জেলাশাসক এবং তাঁর অফিসারেরা কিছুটা সময় বেশি হাতে পাবেন কাজের জন্য। তবে এটাও ঠিক, ভার্চুয়াল বৈঠকের কারণে জেলা-কর্তাদের দৌড়ঝাঁপ আগের তুলনায় অনেক কমেছে। সশরীরে বৈঠকের ঝক্কি আরও বেশি ছিল।”