ফাইল চিত্র।
বালি খাদান, গাড়ির ওভারলোডিং বা অতিরিক্ত ভারবহনের সমস্যা নিয়ে আগেও বহু বার সব জেলা প্রশাসনকে সতর্ক করেছে রাজ্য সরকার। তা সত্ত্বেও অবৈধ খাদান বা ওভারলোডিং নিয়ে অভিযোগ বন্ধ না-হওয়ায় নবান্ন ফের জেলা প্রশাসনগুলির কাছে কড়া বার্তা পাঠাল । প্রশাসনিক সূত্রের খবর, জেলা পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে পৃথক দল গড়ে যথোচিত ভাবে এই ধরনের অভিযোগের মোকাবিলা করার নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ মহল।
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যের সুস্পষ্ট নির্দেশিকার পরেও কেন তা যথাযথ ভাবে কার্যকর হয়নি, জেলাশাসকদের সেই প্রশ্নও করেছেন মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। উত্তরবঙ্গ থেকেও অভিযোগ আসায় নিজের অসন্তোষ চেপে রাখেননি তিনি।
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, যাবতীয় অভিযোগ খতিয়ে দেখতে জেলা-ভিত্তিক টাস্ক ফোর্স গড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের মধ্যে সমন্বয়ের ভিত্তিতে বিষয়টি দেখভাল করতে হবে। ওভারলোডিং নিয়ে জেলা-ভিত্তিক তথ্য পরিবহণ দফতরের কাছে পাঠানোর পরামর্শও দিয়েছে নবান্ন।
তৃণমূলের দ্বিতীয় দফার সরকারের সময় থেকেই অবৈধ খাদান নিয়ন্ত্রণে তৎপর হওয়ার বার্তা দিচ্ছিল নবান্ন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই নির্দেশ জেলা পুলিশকে জানিয়ে দিয়েছিলেন রাজ্য পুলিশের সদ্য-প্রাক্তন ডিজি বীরেন্দ্র। তার পরেও অবৈধ খাদান সংক্রান্ত অভিযোগ ওঠা বন্ধ হয়নি। উপরন্তু তা নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় আইনশৃঙ্খলার সমস্যা দেখা দেয়। তৃতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় এসে খাদানের লিজ পদ্ধতিতে বদল আনে তৃণমূল সরকার। জেলা-ভিত্তিক লিজ দেওয়ার ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে তা পৃথক একটি নিগমের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য। নিগমের অধীনে অনলাইনে একজানলা নীতিতে এখন সেই লিজ বণ্টন হওয়ার কথা। প্রশাসনিক সূত্রের বক্তব্য, এখনও ওভারলোডিংয়ে সমস্যা এবং অবৈধ খাদান নিয়ে অভিযোগ পাচ্ছে নবান্ন। তাই এ দিন পরিমার্জিত নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসনের সর্বোচ্চ মহল।
পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, ওভারলোডিং বন্ধ করতে ইতিমধ্যেই কিছু পরিকল্পনা করা হয়েছে।
যেমন, খাদানগুলির সঙ্গে যে-সব গাড়ি যুক্ত থাকে, সেগুলিতে জিপিএস লাগানো হবে। মূল রাস্তা এড়িয়ে তারা যাতে অন্য পথে যাতায়াত করতে না-পারে, তা নিশ্চিত করা যাবে জিপিএসের মাধ্যমে। প্রধান রাস্তাগুলিতে নাকা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে। সেই সঙ্গে বাড়তি মালবহন ঠেকাতে জরিমানা বাড়ানোর পথেও হাঁটছে সরকার।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, গত জুনে ওভারলোডিংয়ের জন্য প্রায় ৩০ হাজার গাড়িকে ধরা হয়েছিল। এই বাবদ জরিমানা আদায়ের পরিমাণ ছিল ৭০ লক্ষ টাকা। অগস্টে ধরা পড়া গাড়ির সংখ্যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ৬০ হাজার। জরিমানার পরিমাণও বেড়ে হয়েছে প্রায় দেড় কোটি টাকা।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, নাকা নজরদারিতে কেনও গাড়িতে বাড়তি সামগ্রী তোলা হয়েছে বলে প্রমাণিত হলে জরিমানার পাশাপাশি নির্ধারিত ওজনের অতিরিক্ত জিনিসপত্র সেখানেই নামিয়ে ফেলা হবে। এই কাজে মূল নাকা কেন্দ্রগুলির ধারেকাছে পৃথক মজুত কেন্দ্রও গড়তে চাইছে প্রশাসন। এ কাজে জমি খোঁজার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে প্রশাসনিক সূত্রের দাবি।