ফাইল চিত্র।
করোনার প্রভাব পড়তে শুরু করল রাজ্যের উন্নয়নেও। সম্প্রতি অর্থ দফতর রাজ্যের উন্নয়ন প্রকল্পগুলির তিন ভাগ বরাদ্দ ২০২০-২১ অর্থবর্ষের জন্য ছাঁটাই করেছে। আপাতত দফতরগুলির বাজেট বরাদ্দের ২৫% দিয়েই সারা বছরের উন্নয়ন কাজ চালাতে নির্দেশ দিয়েছেন অর্থ সচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। নতুন নিয়োগ, নির্মাণ এবং গাড়ি বা অন্য যে কোনও সরঞ্জাম ক্রয়ের উপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা (এমবার্গো) জারি করা হয়েছে। শুধু মাত্র কর্মীদের বেতন-পেনশন দেওয়া এবং করোনার কারণে হাসপাতাল সচল রাখার জন্য পুরো বাজেট বরাদ্দ খরচ করা যাবে বলে অর্থ দফতর ৩০ জুন প্রকাশিত নির্দেশিকায় জানিয়ে দিয়েছে।
অর্থ কর্তাদের বক্তব্য, ‘‘গত এক দশকে এমন কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে সরকারকে পড়তে হয়নি। ফলে উন্নয়ন প্রকল্পে কোপ দেওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না।’’ সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২০-২১ অর্থবর্ষে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র রাজ্য উন্নয়ন প্রকল্পগুলির জন্য ৬০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিলেন। সারা বছরে ১৫ হাজার কোটি টাকা নিয়েই খুশি থাকতে হবে ৫২টি দফতরকে। প্রতিটি খরচের জন্য অর্থ দফতরের অনুমোদন আবশ্যক করা হয়েছে। খরচের উপর লাগাম আনতেই বিভাগীয় সচিবদের উপর ‘দায়িত্ব এবং দায়’ দুই চাপিয়ে দিয়েছে অর্থ দফতর।
অর্থ সচিবের নির্দেশে বলা হয়েছে কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলির বরাদ্দ খরচও অর্থ দফতরের অজান্তে করা যাবে না। চলতি অর্থবর্ষে কেন্দ্রীয় প্রকল্পে ৩৪ হাজার কোটি টাকা রাজ্যের হাতে আসার কথা। অনেক সময় রাজ্যের কোষাগারের ‘পজ়িটিভ ব্যালান্স’ রাখার জন্য কেন্দ্রীয় বরাদ্দগুলির টাকা কাজে লাগায় অর্থ দফতর। এক কর্তা জানাচ্ছেন, ভাঁড়ার ফাঁকা হয়ে গেলে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে ওভারড্রাফট নেওয়ার আগে অর্থ দফতর কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা রাজকোষে ধরে রেখে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছে। তিন ভাগ বরাদ্দ ছাঁটাই হওয়ার ফলে এ বছর কার্যত আর কোনও কাজ হবে না। বিধানসভা ভোটের ছ’মাস আগে বাজেটের কাটছাটের প্রভাব জনমানসে পড়তে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
বিদ্যুৎ বিল, টেলিফোন বিলের মতো জরুরি পরিষেবা ছাড়া সমস্ত প্রশাসনিক খরচেরও অর্ধেক ছাঁটাই করেছে অর্থ দফতর। বেতনের ক্ষেত্রেই বাজেটের সব অর্থ খরচ করা যাবে। এক কর্তা জানাচ্ছেন, ‘‘বেতন কমিশন চালু হওয়ার পর মাসে ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি বেতন-পেনশনের খরচ হচ্ছে। সেই টাকা জোগাড় করতেও অন্তত মাসে ৪ হাজার কোটি টাকা বাজার থেকে ধার নিতে হচ্ছে।’’
নির্দেশিকায় ফের বলা হয়েছে, পূর্ত, পুর ও নগরোন্নয়ন, সেচ, জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের সচিবের আর্থিক ক্ষমতা ১০ কোটি টাকা রাখা হচ্ছে। জলসম্পদ ও আবাসন দফতরের সচিবের পাঁচ কোটি পর্যন্ত প্রকল্প অনুমোদনের আর্থিক ক্ষমতা থাকবে। বাকি দফতরের সচিবেরা নিজেদের ক্ষমতায় ১ কোটি টাকা পর্যন্ত টাকা খরচ করতে পারবেন। এমনকি দফতরে সারাই, রক্ষণাবেক্ষণ বা কেনাকাটার ক্ষমতা ৫০ হাজার টাকায় বেঁধে দিয়েছে অর্থ দফতর।