আচমকা ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিল হওয়ায় যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আঞ্চলিক অধিকর্তাকে ডেকে সেই ব্যাপারে ক্ষোভ জানাল নবান্ন। গরিব মানুষ, চাষি, দিনমজুর-সহ খেটে খাওয়া মানুষের সমস্যা নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের আঞ্চলিক প্রধান রেখা ওয়ারিয়ার কাছে রাজ্য প্রশাসনের উদ্বেগের কথাও জানালেন মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়।
নরেন্দ্র মোদীর হঠাৎ নেওয়া সিদ্ধান্ত সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিবাদ কী ও কেন— বুধবার রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রতিনিধির কাছে তা-ও তুলে ধরেছে নবান্ন। পাশাপাশি, কেন্দ্রের এই পদক্ষেপে মানুষের যাতে হয়রানি না হয়, তা নিশ্চিত করতেও তাঁদের অনুরোধ করা হয়েছে বলে সরকারি সূত্রের খবর।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এক মুখপাত্র জানান, রাজ্যকে বলা হয়েছে, কেন্দ্র যে এমন সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে, আঞ্চলিক স্তরে তা কারও জানা ছিল না। তবে পরিস্থিতি মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক সব রকম ব্যবস্থা নিচ্ছে। রাজ্য প্রশাসনের উদ্বেগের কথাও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক মাথায় রাখবে বলে জানান ওই মুখপাত্র। দু’এক দিনের মধ্যেই বাজারে নোটের জোগান পর্যাপ্ত হবে বলে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পক্ষ থেকে রাজ্যকে জানানো হয়েছে।
কাদের সমস্যা নিয়ে নবান্নের এই উদ্বেগ? নবান্নের কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, এ রাজ্যে প্রায় দু’কোটি মানুষ বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের টাকা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে পেয়ে থাকেন । পেনশন, ভাতা, মজুরির টাকার অঙ্কও খুব বড় নয়। কিন্তু ব্যাঙ্কে পর্যাপ্ত টাকার জোগান না থাকলে এবং ব্যাপক ভিড় হলে ওই টাকা পেয়ে সমস্যা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ। যদিও পঞ্চায়েত দফতরের তরফে বলা হয়েছে, এখনই ১০০ দিনের কাজ, বার্ধক্য ভাতা, বিধবা ভাতা বা প্রতিবন্ধী ভাতা বিলির সম্ভাবনা কম। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সে সব বিলি হবে। রাজ্যের অর্থ দফতরের এক কর্তা জানান, পরিস্থিতি যা, তাতে এখনই কিছু করার নেই। দিন কয়েক অপেক্ষা না করলে এর প্রভাব বোঝা যাবে না। রাজ্যের আর্থিক লেনদেনের উপরে অবশ্য তেমন প্রভাব পড়বে না বলেই দাবি করেন তিনি। কেন?
গেরোয় যাঁরা
• ১০০ দিনের কর্মী
১ কোটি ৪১ লক্ষ
• বার্ধক্য ভাতা প্রাপক
১৪ লক্ষ ২৩ হাজার
• প্রতিবন্ধী ভাতা প্রাপক
৮৬ হাজার ৭৫০
• বিধবা ভাতা প্রাপক
৬ লক্ষ ৪৪ হাজার
অর্থ দফতর সূত্রের খবর, ২০১৫ সাল থেকে রাজ্য লেনদেন করছে ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে। ই-প্রদান এবং ইন্টিগ্রেটেড ফিনান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসেস (আইএফএমএস) নামে কেন্দ্রীয় ব্যবস্থার মাধ্যমে চলছে সেই কাজ। এতে পাই-পয়সার হিসেব থাকে। আবার, নগদে বা চেক মারফত পাওনা-গণ্ডা মেটানোয় কারচুপির সম্ভাবনাও ঠেকানো যায়।
অর্থ দফতরের এক কর্তা জানান, ২০১৫ সালে এই ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত সরকার প্রায় ২ কোটি ২৭ লক্ষ লেনদেন করেছে বৈদ্যুতিন পদ্ধতিতে। যার মাধ্যমে ৭৮ হাজার কোটি টাকা মেটানো হয়েছে। ১০ লক্ষ কর্মচারী, শিক্ষক-শিক্ষিকার বেতনও রয়েছে এর মধ্যে। এ বছর এখনও পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা মেটানো হয়েছে ওই ব্যবস্থাতেই। তাই কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তে ট্রেজারির কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে না।
তবে জেলাগুলিতে ছোটখাটো কিছু সমস্যা হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গিয়েছে। গাড়ির কর জমা, কৃষি বিপণন দফতরের চেক পোস্টে এখনও বেশ কিছু ক্ষেত্র নগদে কারবার হয়ে থাকে। সেই সব ক্ষেত্রে এ দিন বেশ কিছু গোলমাল হয়েছে। কলকাতা পুলিশের ট্রাফিক সার্জেন্টরা যে জরিমানা আদায় করেন, তা-ও মূলত নগদে। সেই আদায়েও প্রভাব পড়েছে। বিভিন্ন সরকারি পর্যটন কেন্দ্রেও টাকা নেওয়ার ক্ষেত্রে বেশ কিছু সমস্যা হচ্ছে। প্রত্যেক জেলাশাসকের নাজিরখানায় সব সময় বেশ কয়েক লক্ষ টাকা মজুত থাকে অগ্রিম বাবদ। সেই টাকা এখন ব্যাঙ্কে জমা দিতে হবে। সরকার অবশ্য এ নিয়ে কোনও নির্দেশ এখনও দেয়নি।