—ফাইল চিত্র।
অদূরে ভোট। চলতি ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচিতেই ক্ষান্ত হচ্ছে না রাজ্য সরকার। সরকারি কর্মসূচির প্রচারে এ বার রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন বইমেলাকে বেছে নেওয়া হচ্ছে। আধিকারিক শিবিরের খবর, জেলা বইমেলাগুলি থেকেও সরকারি কর্মসূচির প্রচার এবং উপভোক্তাদের সহযোগিতা করার প্রস্তুতি চলছে। প্রতিটি
মেলাপ্রাঙ্গণে বাংলা সহায়তা কেন্দ্রের (বিএসকে) একটি করে স্টল রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তবে চলতি নিউ-নর্মাল পরিস্থিতিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছাড়পত্র থাকলেও জেলা বইমেলায় আপাতত তেমন অনুষ্ঠান না-করারই পরামর্শ দিচ্ছে গ্রন্থাগার দফতর।
লকডাউনে বিভিন্ন ক্ষেত্রের শিল্পীরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন। তাঁদের কিছুটা সুরাহা দিতে রাজ্য জুড়ে ছয় শতাধিক মেলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তার প্রস্তুতিও শুরু করেছে বিভিন্ন দফতর। এ বার একটি করে বইমেলার আয়োজন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সব জেলা প্রশাসনকে। গ্রন্থাগার দফতরের নির্দেশ, প্রতিটি মেলায় সর্বাধিক ৫০টি বইয়ের স্টল রাখতে হবে। করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে তৈরি করতে হবে স্টল। মেলা ব্যবস্থাপনায় কোভিড স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। মেলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বা শোভাযাত্রার মতো
কর্মসূচি থেকে জেলাগুলিকে বিরত থাকার পরামর্শ দিচ্ছে দফতর।
মেলার জন্য প্রতিটি জেলা সাড়ে
পাঁচ লক্ষ টাকা খরচের অনুমতি পাচ্ছে।
জনসাধারণের গ্রন্থাগার ও কর্মী কল্যাণ সমিতি জানাচ্ছে, আগে জেলা বইমেলার জন্য তিন লক্ষ টাকা বরাদ্দ হত। এ বার সব মিলিয়ে ওই মেলাগুলির জন্য ১২ কোটিরও বেশি টাকার খরচ ধরে রাখছে সরকার। মেলায় প্রতি ১০০ বর্গফুট স্টলের জন্য সাড়ে তিন হাজার টাকা ভাড়া নেওয়া হবে। আজ, মঙ্গলবার পূর্ব বর্ধমান থেকে এই বইমেলা কর্মসূচি শুরু হচ্ছে। পূর্ব মেদিনীপুরে ১৬ থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জেলা বইমেলা চলার পরে শেষ হবে কর্মসূচি।
এক-একটি জেলায় বইমেলা চলবে পাঁচ দিন ধরে।
তথ্যমিত্র কেন্দ্রগুলির বদলে রাজ্য জুড়ে বিএসকে চালু করার ঘোষণা আগেই করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিডিও (৩৪২টি), এসডিও (৬৬টি) ও জেলাশাসকের (২৩টি) অফিস, ১৫০০ প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং ৮১৩টি গ্রন্থাগারে মোট ২৭৪৪টি বিএসকে তৈরি করা হয়েছে। দু’জন সহায়ক দু’টি করে প্রিন্টার-স্ক্যানার এবং ইন্টারনেট-যুক্ত কম্পিউটার নিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন প্রকল্পের বিষয়ে উপভোক্তাদের তথ্য দেবেন, পদ্ধতিগত সহযোগিতাও করবেন। সরকারের সামাজিক এবং কল্যাণমূলক কী কী প্রকল্পের সুবিধা রয়েছে, সেগুলি সম্পর্কে মানুষকে বোঝাবে ওই সব বিএসকে।
অনেক আধিকারিকের বক্তব্য, জেলাগুলিতে বইমেলার যথেষ্ট আকর্ষণ রয়েছে। কোভিড পর্বে ব্যতিব্যস্ত হয়ে ওঠা বহু বইপ্রেমী মানুষ মেলাগুলিতে ভিড় করবেন। ফলে সেখানে বিএসকে-র স্টলগুলি অনেক বেশি কার্যকর হবে। বিধানসভা ভোটের আগে এই ধরনের প্রচার-পদক্ষেপ তাৎপর্যপূর্ণ।
জনসাধারণের গ্রন্থাগার ও কর্মী কল্যাণ সমিতির প্রধান উপদেষ্টা মনোজ চক্রবর্তী জানান, গোটা রাজ্যে সরকার পোষিত গ্রন্থাগারের সংখ্যা ২৪৮০। সেগুলিতে তিন হাজারেরও বেশি পদ শূন্য। প্রায় ৭৫% কর্মী না-থাকায় জেলার বহু গ্রন্থাগার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। গ্রন্থাগার বিজ্ঞান পাশ করে বসে আছেন অনেকেই। ‘‘নিয়োগ চালু হলে কর্মসংস্থান হত, গ্রন্থাগারগুলিরও হাল ফিরত। শুধু টাকা ঢেলে বইমেলা করলেই চলবে না। গ্রন্থাগারগুলিকে সচল করার মতো পদক্ষেপও অত্যন্ত জরুরি,”
বলেন মনোজবাবু।