—ফাইল চিত্র
সময় কম। হাতে সময় নেই বললেই চলে। এই অবস্থায় ‘পাড়ায় সমাধান’ প্রকল্পে জমা পড়া অধিকাংশ কাজের ‘ওয়ার্ক অর্ডার’ বা কাজের বরাত যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দিয়ে দিতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছে নবান্ন।
একই সঙ্গে সরকার ঘুরিয়ে এই নির্দেশও দিয়েছে যে, অধিকাংশ প্রকল্পের মূল্যমান পাঁচ লক্ষ টাকার কম রাখতে হবে। বলা হয়েছে, বড় প্রকল্পের কাজ ‘সাব-প্রজেক্ট’ হিসেবে ভাগ করে দিতে হবে, যাতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আর্থিক নিয়মবিধির ফাঁক গলে ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া যায়। প্রকল্প পাঁচ লক্ষ থেকে ৫০ লক্ষ টাকার মধ্যে হলে সেই কাজ যাতে ২৬ জানুয়ারির মধ্যে শুরু করে দেওয়া যায়, সেই ব্যাপারেও সুস্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। সম্প্রতি নবান্নে সব দফতরের কর্তাদের নিয়ে বৈঠকে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেন তিনি।
ওই বৈঠকে স্বরাষ্ট্রসচিব জানান, আপাতত দুয়ারে সরকার প্রকল্পে নাগরিকেরা শিবিরে এসে যে-সব বিষয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন, প্রথম দু’দফায় সেই কাজগুলিই হাতে নেওয়া হবে। এমন অভিযোগের সংখ্যা ১২০০। চলতি মাসে পাড়ায় সমাধান প্রকল্পে সেই অভিযোগগুলির নিষ্পত্তি করতেই নামছে সরকার।
মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় পাড়ায় সমাধান অভিযানের কথা ঘোষণা করেন ডিসেম্বরের শেষে। ঠিক হয়, সরকারি অফিসারেরা পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে তৎকাল ভিত্তিতে পরিষেবা দেবেন। কিন্তু দুয়ারে সরকার প্রকল্পে দু’টি পর্যায়ের কাজ বাকি থাকায় পাড়ায় সমাধান কর্মসূচি তেমন গতি পায়নি বলে অভিযোগ। সেই জন্য এখন দফতরগুলিকে কাজে নামাতে সচেষ্ট হয়েছেন স্বরাষ্ট্রসচিব।
নবান্নের নির্দেশ, পাড়ায় পাড়ায় যে-সব কাজের দাবি উঠবে, সেগুলি পাঁচ লক্ষ টাকার মধ্যে হলে বিডিও-রা তা অনুমোদন করে দেবেন। তার আনুমানিক খরচের হিসেব করে ছাড়পত্র দিয়ে দেবেন সংশ্লিষ্ট ব্লকের জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ারেরা। কাজের সুবিধার জন্য পাঁচ লক্ষ টাকার মধ্যে সাব-প্রজেক্ট তৈরির অনুমোদনও দিয়েছে অর্থ দফতর। অনেক প্রশাসনিক কর্তার বক্তব্য, পাঁচ লক্ষ টাকায় কোনও কাজই করা যায় না। প্রকল্পের আকার বড় হলে টেন্ডার বা দরপত্র ডেকে তার ছাড়পত্র পেতে সময় চলে যাবে। সেই সময়ের মধ্যে আর কাজে হাত দেওয়া যাবে না।
স্বরাষ্ট্রসচিব জানান, পাঁচ থেকে ৫০ লক্ষ টাকার প্রকল্প হলে জেলাশাসকের প্রাথমিক অনুমোদন লাগবে। জেলাশাসক অনুমোদন দিলে সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে সরাসরি দরপত্র ডেকে ২৬ জানুয়ারির মধ্যে কাজ শুরু করে দিতে হবে। প্রকল্পের মূল্য ৫০ লক্ষ টাকার বেশি হলে সে-সব প্রকল্প নিয়ে প্রথাগত নিয়মে এগোতে হবে।
প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশের মতে, ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণার জল্পনা চলছে। নবান্ন তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পাড়ায় সমাধানের ওয়ার্ক অর্ডার দিয়ে দিতে চায়। তা হলে ভোটের সময় পাড়ায় পাড়ায় রাস্তা সারানো, কালভার্ট তৈরি, বিদ্যুতের সংযোগ, নলকূপ বসানোর মতো কাজ করা যাবে। সেই সব কাজ চলতে থাকলে ভোটে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা।
অনেকের মত উল্টো। রাজ্যে ৩৯ হাজার পাড়া-মহল্লা রয়েছে। প্রতিটি মহল্লারই কিছু না কিছু চাহিদা থাকে। সরকারি অফিসারদের একাংশের আশঙ্কা, সেই সব চাহিদা পূরণ না-হলে হিতে বিপরীত না হয়ে যায়!