—প্রতীকী ছবি।
সড়ক পরিকাঠামোর ক্ষেত্রে জমি অধিগ্রহণের বাধা দূর করার নির্দেশ আগেই দিয়েছিল রাজ্য প্রশাসনের সর্বোচ্চ শিবির। আরও এক ধাপ এগিয়ে এ বার জবরদখল সমস্যা দূর করে সড়ক পরিকাঠামোর কাজ বাধাহীন করার উপরে জোর দিল নবান্ন। প্রশাসনিক সূত্রের দাবি, আগামী দিনে রাজ্য একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সড়ক পরিকাঠামো পাবে। তার নির্মাণের খরচ বহন করবে কেন্দ্রই। রাজ্যের বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতিতে যা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ফলে প্রথমে জমি অধিগ্রহণ এবং পরে জবরদখল সরানোর বার্তা দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসনগুলিকে।
আগামী দিনে বারাণসী-কলকাতা এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে খড়্গপুর-মোড়গ্রাম, রক্সৌল-হলদিয়া এবং গোরক্ষপুর-শিলিগুড়ির মতো আর্থিক করিডর তথা এক্সপ্রেসওয়ে তৈরি হওয়ার কথা। দ্বিতীয় হুগলি সেতু থেকে কোনা এক্সপ্রেসওয়ের উপর দিয়ে যাওয়া ‘এলিভেটেড করিডর’ (উড়ালপথ) প্রকল্পও জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের (এনএইচএআই) ছাড়পত্র পেয়েছে। কিন্তু জমি অধিগ্রহণের ছাড়পত্র নবান্ন দিলেও, কার্যত বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে বিভিন্ন এলাকায় জবরদখল হয়ে থাকা জমি। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রকল্পগুলির যে নকশা, তাতে সেই জবরদখল মুক্ত না করতে পারলে এই সব পরিকাঠামো তৈরি করা কার্যত অসম্ভব। সূত্রের দাবি, জেলাশাসকদের বলা হয়েছে জবরদখল যেখানে যেখানে রয়েছে তা মুক্ত করতে হবে। তবে তা করতে হবে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি রেখে এবং সংশ্লিষ্টদের বুঝিয়ে। প্রশাসনের আর একটি সূত্রের দাবি, এই পদক্ষেপ করতে গেলে কোনও জবরদখলকারী যদি আইনি পথের হুমকি দেন, তাতেও অবস্থান অনড় রাখার বার্তা দেওয়া হয়েছে। তেমন পরিস্থিতি কোনও কারণে তৈরি হলে তখন রাজ্য পদক্ষেপ করবে।
প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, এত দিন জমি অধিগ্রহণ এ রাজ্যে বেশ কঠিন ছিল। ন্যানো কারখানা না হওয়ার জন্য সম্প্রতি টাটা মোটরসকে বিপুল অঙ্কের ক্ষতিপূরণের যে নির্দেশ রাজ্যকে সালিশি আদালত দিয়েছে, তাতে সেই বিতর্ক ফের উস্কে গিয়েছে। টাটারা কারখানা গড়তে পারেনি প্রধানত জমি অধিগ্রহণ নিয়ে হওয়া আন্দোলনের কারণেই। তবে জমি না পেলে সড়ক প্রকল্পগুলি যে হবে না, তা এখনকার কেন্দ্রীয় নীতিতে মোটামুটি নিশ্চিত। ফলে স্থানীয় স্তরে কথা বলে ও বুঝিয়ে সেই পথে হাঁটার বার্তা দেওয়া হয়েছে জেলাশাসকদের। এত দিন জবরদখল নিয়েও কিছুটা নমনীয় অবস্থানে ছিল রাজ্য। বাস্তবের সঙ্গে তাল মেলাতে তারও পরিবর্তন যে প্রয়োজন, বুঝছে সরকার। তাই মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি রেখে জবরদখল-সমস্যা মেটাতে বলা হচ্ছে।
এক কর্তার কথায়, “বহু জায়গায় জবরদখল একটা বড় সমস্যা। সেটা কাটানো গেলে প্রকল্পগুলির বাস্তবায়নে সমস্যা আর থাকবে না। এত বিপুল বরাদ্দের প্রকল্প, যা রাজ্যের ভোল পাল্টে দিতে পারে। সেখানে এই বার্তা ইতিবাচক।” প্রসঙ্গত সড়ক বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, বারাণসী-কলকাতা এক্সপ্রেসওয়ের প্রায় সাড়ে ছ’শো কিলোমিটারের মধ্যে ২৮৮ কিলোমিটার থাকবে এ রাজ্যে। সেই প্রকল্পে প্রায় ১৮০০ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ প্রয়োজন। তা ধরে প্রস্তাবিত খরচ প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা। সড়কটি পৌঁছনোর কথা জোকা-নামখানা অঞ্চলে ১১৭ নম্বর জাতীয় সড়ক পর্যন্ত। তাতে হুগলি নদীর উপরে নতুন সেতু তৈরির প্রস্তাব মেনে নিয়েছে এনএইচএআই। তা ছাড়া কোনা এক্সপ্রেসওয়ের উপরে ঝুলন্ত সড়ক পরিকাঠামোয় প্রায় ১৫০০ কোটি টাকা খরচ হওয়ার কথা। রক্সৌল-হলদিয়ার প্রায় ৬৪৬ কিলোমিটারের মধ্যে ১৯৫ কিলোমিটার রয়েছে এ রাজ্যে। তাতে ২০-২৫ হাজার কোটি টাকা খরচ হতে পারে। খড়্গপুর-মোড়গ্রাম আর্থিক পথের ২৩০ কিলোমিটার থাকবে রাজ্যে। তাতে খরচ হতে পারে কমবেশি ১০ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়াও রঘুনাথপুর-ডানকুনি, ডানকুনি-তাজপুর এবং ডানকুনি-কল্যাণী—এই তিনটি আর্থিক করিডর পরিকল্পনা করেছে রাজ্য। শিলিগুড়িতে পৃথক ‘রিং-রোড’-এর পরিকল্পনাও বাস্তবায়িত হওয়ার পথে।
প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকেরা জানাচ্ছেন, সব মিলিয়ে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার সড়ক প্রকল্পের সম্ভাবনা রয়েছে রাজ্যে। যে প্রকল্পগুলি হলে শুধু যে পরিবহণ সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান হবে তা-ই নয়, বরং বিনিয়োগ-কর্মসংস্থানের প্রশ্নে তা এখনকার তুলনায় আরও বেশি কার্যকর হতে পারে। এর বেশিরভাগ অর্থ কেন্দ্র খরচ করায় রাজ্যের কোষাগারের উপরে চাপও পড়বে না। রাজ্যের দায়িত্ব জমি বাধাহীন রাখা। সব দিক থেকে এই বিষয়টাই নিশ্চিত করতে চাইছে নবান্ন।