ফাইল চিত্র।
হাওড়া পুরসভার আট সদস্যের প্রশাসকমণ্ডলীর মেয়াদ এখনও এক বছর পূর্ণ হয়নি। তার আগেই রাজ্যপালের অনুমতিতে সেই মণ্ডলী ভেঙে দিল রাজ্য সরকার। পুর নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত প্রশাসক হিসেবে বিজিন কৃষ্ণকে দায়িত্ব সামলাতে বলা হয়েছে। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, আগামী এপ্রিলের মধ্যে রাজ্য সরকার হাওড়ায় পুর নির্বাচন করতে চাইছে। সে কারণেই মণ্ডলী ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত।
হাওড়া পুরসভা সূত্রের খবর, প্রশাসকমণ্ডলী ভেঙে দেওয়ার বিজ্ঞপ্তি শনিবার রাজ্যের পুর দফতর থেকে হাওড়া পুরসভায় আসে। যদিও পুর দফতরের যুগ্ম সচিব ওই বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর করেন তার আগের দিন, অর্থাৎ শুক্রবার।
পুর প্রশাসক তথা পুর কমিশনার রবিবার বলেন, ‘‘শনিবারই নোটিস পেয়েছি। প্রশাসকমণ্ডলী ভেঙে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে রাজ্য। নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত আমাকেই দায়িত্ব সামলাতে বলা হয়েছে।’’ যদিও মণ্ডলী ভেঙে দেওয়ার খবর এ দিন পর্যন্ত প্রশাসকমণ্ডলীর বাকি সদস্যদের কাছে পৌঁছয়নি। রাজ্যের সমবায় মন্ত্রী তথা মধ্য হাওড়ার তৃণমূল বিধায়ক অরূপ রায় বলেন, ‘‘প্রশাসকমণ্ডলী ভেঙে দেওয়ার খবর আমার কাছে আসেনি। তেমন কিছু হলে নিশ্চয় পরে জানানো হবে।’’
প্রশাসকমণ্ডলী ভেঙে দিয়ে রাজ্য সরকার কি পুর নির্বাচনে যেতে চাইছে? অরূপবাবু বলেন, ‘‘রাজ্য চাইলে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করবে নির্বাচন দফতর। তবে ভোট করতে হবে হয় জানুয়ারি, অথবা আর দু’-তিন মাসের মধ্যে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচন করা দরকার।’’
রাজ্যের অন্য পুরসভাগুলির মতো নির্বাচনে না গিয়ে গত বছরের ১০ ডিসেম্বর হাওড়ায় তৃণমূল পুরবোর্ড ভেঙে পুর কমিশনারকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ করে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর। কিন্তু তাঁর একার পক্ষে ৬৬টি ওয়ার্ডের দায়িত্ব সামলানো এবং গুরুত্বর্পূণ
সিদ্ধান্ত নেওয়া ঘিরে সমস্যা হওয়ায় চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রথমে পুর কমিশনারকে চেয়ারম্যান করে ছ’জনের প্রশাসকমণ্ডলী গড়ে রাজ্য। পুর কমিশনার ছাড়াও সেখানে রাখা হয় হাওড়া থেকে নির্বাচিত রাজ্যের তিন মন্ত্রী অরূপ রায়, রাজীব
বন্দ্যোপাধ্যায়, লক্ষ্মীরতন শুক্ল, প্রাক্তন মেয়র রথীন চক্রবর্তী এবং বিশ্ব মজুমদারকে। পরে ১৫ জুলাই আর একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে আরও দুই তৃণমূল বিধায়ক জটু লাহিড়ী ও ব্রজমোহন মজুমদারকে প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য করা হয়।
হাওড়া পুরসভায় যে নির্বাচিত বোর্ড গঠন করা প্রয়োজন, তা চলতি ডেঙ্গির মরসুমে পুর প্রশাসক থেকে প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য— সকলেই একবাক্যে স্বীকার করেছেন। এ বছর হাওড়ায় ডেঙ্গি ভয়াবহ আকার ধারণ করার পিছনে বারবার উঠে এসেছে সংগঠিত ভাবে পুরকর্মীদের পরিচালনা না করার বিষয়টি। পুর স্বাস্থ্য দফতরের ঢিলেমি যে কতটা প্রাণঘাতী হতে পারে, তা দেখিয়ে দিয়েছে এই রোগে তিন শিশু-সহ চার জনের মৃত্যুর ঘটনা। আর এই চরম গাফিলতির জন্য প্রতিনিয়ত পুর প্রশাসনকে বিরোধীদের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে এবং হচ্ছে।
সব দেখেশুনে হাওড়া পুরসভার এক প্রাক্তন কর্তার কটাক্ষ, ‘‘নির্বাচিত বোর্ড ছাড়া যে দিনের পর দিন একটা বড় পুরসভা চালানো যায় না, তা পুরসভার রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ দেখলেই বোঝা যায়। এখনও পর্যন্ত পুরসভার যাবতীয় খরচ চালাতে বছরে ৩০ কোটি টাকা খয়রাতি দিতে হচ্ছে। উন্নয়নের কাজ হবে কী করে?’’