খটিক সমাজের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার দুপুরে হাওড়া স্টেশনের কাছ থেকে রামনবমীর একটি শোভাযাত্রা বার হয়। নিজস্ব চিত্র।
অসহ্য গরমের মধ্যে অনেকটা রাস্তায় হেঁটে আসছেন তাঁরা। অনেকে ক্লান্ত, তৃষ্ণার্ত। রামনবমীর শোভাযাত্রায় যোগ দেওয়া সেই সব মানুষের দিকে শরবতের গ্লাস বা়ড়িয়ে দিচ্ছেন আবুল হাসান, শাহনওয়াজ হোসেনরা। রামনবমীতে সম্প্রীতির এমনই ছবি দেখা গেল দক্ষিণবঙ্গের হাওড়া ও উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়িতে।
খটিক সমাজের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার দুপুরে হাওড়া স্টেশনের কাছ থেকে রামনবমীর একটি শোভাযাত্রা বার হয়। ডবসন রোড হয়ে সেই শোভাযাত্রা পিলখানার জিটি রোডে পৌঁছলে দেখা যায়, পাড়ার লোকজন ঠান্ডা পানীয় নিয়ে রাস্তার ধারে অপেক্ষা করছেন। মিছিল ঢুকতেই সবার হাতে সরবতের গ্লাস তুলে দেন তাঁরা। তাতে চুমুক দিয়ে বিশ্বজিৎ মজুমদার বলেন, ‘‘এই সহাবস্থানই আমাদের ঐতিহ্য। খুব ভাল লাগছে।’’
হাওড়ার এই পিলখানা এলাকায় মূলত ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষই বেশি থাকেন। পাড়ার লোকেরা জানাচ্ছেন, ইদ, মহরমের মতো উৎসবেও তাঁরা সব ধর্মের মানুষকেই পাশে পান। এক প্রবীণের দিকে সরবতের গ্লাস এগিয়ে দিতে দিতে পিলখানার বাসিন্দা আবুল হাসানের কথায়, ‘‘এখানে হিন্দু, ইসলাম, শিখ, খ্রিস্টান-সহ সব ধর্মের মানুষই রয়েছে। সবাই বড় হয়েছি এক সঙ্গেই। মিছিলে সব বয়সের মানুষ ছিলেন। গরমে হেঁটে অনেকেই ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। তাই এই ভাবনা। এটা রমজান মাস। তৃষ্ণার্তদের জল দাও, ক্ষুধার্তদের খাবার দাও— আমরা ছোটবেলা থেকে এই শিখে এসেছি। আমরা প্রত্যেক বছরই ওঁদের ঠান্ডা জল, সরবতের ব্যবস্থা করি।’’
মুসলিম ভাইদের এই আচরণে আপ্লুত রামনবনীর শোভাযাত্রার উদ্যোক্তা অমরনাথ শোনকার। বলেন, ‘‘এতটা রাস্তা হেঁটে অনেকেই ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। পিলখানার মুসলিম ভাইরা তাঁদের জল দিলেন। খুব ভাল লাগছে। আমাদের মধ্যে কোনও ধর্মীয় ভেদাভেদ নেই। গোটা দেশ জুড়ে এমনই ছবি দেখতে চাই।’’
একই ছবি দেখা গেল শিলিগুড়িতেও। শহরের মাল্লাগুড়ি থেকে শুরু হয় শোভাযাত্রা। এয়ারভিউ মোড় হয়ে তা শেষ হয় এসএফ রোডের হিন্দি হাই স্কুলের কাছে। তার আগে ভেনাস মোড়ের রামনবমীর মিছিলে জলের বোতল ও ফলের রস দিতে গেল মুসলিম ধর্মালম্বীদের। ওই এলাকারই বাসিন্দা শাহনওয়াজ হোসেন বলেন, ‘‘আমাদের দেশের সংস্কৃতিই হল ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব উৎসবে যোগ দেওয়া। ঐক্য আমাদের বজায় রাখতেই হবে।’’
শাহনবাজের হাত থেকে জলের বোতল নিয়ে সায়ন ঘোষ বলেন, ‘‘এটা মানসিকতারও ব্যাপার। হিন্দুদের একটা অনুষ্ঠান হচ্ছে, সেখানে মুসলিম ভাইরা জল দিয়ে আমাদের তৃষ্ণা মেটাচ্ছেন, এটা দেখে খুব ভাল লাগছে। সমাজের কাছে সুন্দর বার্তা পৌঁছচ্ছে এটা থেকে।’’