শোভনের বাড়িতেই নোটিস পুরসভার

পুর আইনের ৪৯৬/২ ধারা মোতাবেক আপাত সাদামাঠা এই নোটিসটাই এখন পুরকর্তাদের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। কারণ, পুরসভার নথি অনুযায়ী, মেট্রোপলিটনের সি জেড ব্লকের ওই বাড়ির মালিক শোভন চট্টোপাধ্যায় যে স্বয়ং কলকাতার মেয়র!

Advertisement

অনুপ চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:১৭
Share:

পুরসভার পাঠানো সেই নোটিস। নিজস্ব চিত্র

মামুলি একটা নোটিস। আর তাকে ঘিরেই তোলপাড় কলকাতা পুরসভার অন্দরমহল!

Advertisement

ই এম বাইপাসের ধারে মেট্রোপলিটন কোঅপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি এলাকায় একটি নির্মীয়মাণ বাড়িতে একটি নোটিস লটকে দিয়েছে পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর। ‘বাড়ির মালিক শোভন চ্যাটার্জি’কে পাঠানো ওই নোটিসে বলা হয়েছে: বাড়ির ছাদ, আন্ডারগ্রাউন্ড বেসমেন্টের জমা জলে মশার আঁতুড়ঘর তৈরি হয়েছে। নোটিস পাওয়ার সাত দিনের মধ্যে উপযুক্ত পদক্ষেপ না করলে পুর আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পুর আইনের ৪৯৬/২ ধারা মোতাবেক আপাত সাদামাঠা এই নোটিসটাই এখন পুরকর্তাদের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। কারণ, পুরসভার নথি অনুযায়ী, মেট্রোপলিটনের সি জেড ব্লকের ওই বাড়ির মালিক শোভন চট্টোপাধ্যায় যে স্বয়ং কলকাতার মেয়র! তাঁর বাড়ির জমা জলেই কি না তৈরি হয়েছে মশার আঁতুড়ঘর! যদিও সন্ধ্যায় শোভনবাবু দাবি করেন, ওই ঠিকানায় তাঁর নিজের নামে কোনও বাড়ি নেই। প্রশ্ন উঠছে, কিন্তু পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর তো পুর-নথি দেখেই বাড়ির মালিক শোভন চট্টোপাধ্যায়ের নামে ওই নোটিস জারি করেছে। এ নিয়ে মুখ খোলেননি শোভনবাবু। রাতে শোভনবাবু দাবি করেন, পুরসভার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তাঁকে জানিয়েছেন, ভুল করে তাঁর নামে ওই নোটিস লাগানো হয়েছে।

Advertisement

আরও পড়ুন: ‘রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্র চলতে পারে না ’ সরব মুকুল

১২ সেপ্টেম্বরের ওই নোটিসের কথা জানাজানি হতেই প্রবল অস্বস্তিতে পড়েছেন এসএন ব্যানার্জি রোডের লাল বাড়ির কর্তারা। এতটাই যে, পুজোর ছুটির কারণ দেখিয়ে তাঁরা আর ওই পথ মাড়াননি। এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘আমরা ভাবতেই পারছি না কী করে এমন হল!’’ এই নিয়ে কথা বলতে চাইলেই পদাধিকারীরা সযত্নে এড়িয়ে যাচ্ছেন প্রসঙ্গ।

কিন্তু মেয়রের বাড়িতে কে এমন নোটিস লাগানোর সাহস দেখালেন?

পুর-প্রশাসনের ব্যাখ্যা, কলকাতার মেয়র বেহালায় থাকেন, সেটাই সকলে জানেন। মেট্রোপলিটন এলাকায় যে তাঁর বাড়ি তৈরি হচ্ছে, এই তথ্য অনেকেরই অজানা। বস্তুত, অধিকাংশ পুরকর্তাই এটা জানেন না। নামে পুর স্বাস্থ্য বিভাগের যে কর্মী ওই নোটিস লাগিয়েছেন, তিনিও ছিলেন অন্ধকারে। ‘‘এক নামে অনেকেই থাকতে পারেন,’’— মন্তব্য এক পুরকর্তার।

বাড়ির কোথাও জল জমতে না দেওয়ার প্রচার লাগাতার চালাচ্ছে পুরসভা। বেসরকারি মতে, এ বছরে শহরে ডেঙ্গিতে মারা গিয়েছেন ৭-৮ জন। আক্রান্তের সংখ্যা কয়েকশো। ডেঙ্গির প্রকোপ যে বাড়ছে, তা মেনে নিয়েছেন মেয়রও। পুরসভা সূত্রের খবর, ডেঙ্গির প্রকোপ আটকাতে বছর খানেক ধরে স্বাস্থ্য বিভাগ শহরের নির্মীয়মাণ বাড়ি ও সেতুর তালিকা তৈরি করছে। এখানে জমা জল দেখলেই নির্মাণকারী সংস্থা, বাড়ির মালিককে নোটিস ধরানো হচ্ছে। যেমনটা হয়েছে মেয়রের বাড়ির ক্ষেত্রে।

আর সেই নোটিসই ঘুম কেড়েছে পুরকর্তাদের। আইন মেনে কাজ করতে গিয়ে এখন তাঁরা দিশেহারা! ব্যবস্থা নেওয়া দূরে থাক, বিষয়টি কী ভাবে সামলানো যায় — সেটাই তাঁদের কাছে লাখ টাকার প্রশ্ন!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement