আদালতে আত্মসমর্পণের পর পুলিশের জিম্মায় মৌসুমী রায়। মঙ্গলবার, তমলুক আদালতে। —নিজস্ব চিত্র
অবশেষে আত্মসমর্পণ করলেন পিনকন অর্থলগ্নি সংস্থার কর্ণধার মনোরঞ্জন রায়ের স্ত্রী মৌসুমী রায়। পিনকন মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত তিনি। মঙ্গলবার সকাল ১০টা নাগাদ তমলুকে পূর্ব মেদিনীপুর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক (থার্ড কোর্ট) সঞ্জীব দে-র এজলাসে এসে আত্মসমর্পণ করেন তিনি। তিন্তু তিনি কোভিড পজিটিভ বলে দাবি করেন মৌসুমী। তার পরেই আইনজীবী, বিচারক ও আদালত কর্মীদের মধ্যে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে।
গত ৩ অক্টোবর পিনকন মামলায় মনোরঞ্জন ও মৌসুমী-সহ ৮ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে তাঁদের যাবজ্জীবন কারাদন্ডের নির্দেশ দেন পূর্ব মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক মৌ চট্টেপাধ্যায়। রায়ের পর মৌসুমীকে হোয়াটসঅ্যাপে জানানো হলেও তাঁর কোনও সন্ধান পাচ্ছিল না পুলিশ। তাই তাঁর নামে হুলিয়া জারি করা হয়। শেষ পর্যন্ত রায়ের প্রায় দেড় মাস পর নিজেই আত্মসমর্পণ করলেন পিনকন কর্তার স্ত্রী।
মামলার সরকারি আইনজীবী সৌমেন দত্ত জানিয়েছেন, আত্মসমর্পণের পরেই মৌসুমীকে বিচারকের এজলাসে হাজির করা হয়। সেখানে তিনি ওড়িশার একটি প্রত্যন্ত এলাকার কোভিড পজিটিভ রিপোর্ট পেশ করেন আদালতে। করোনা আক্রান্ত হওয়ার জন্য তাঁকে সাজা থেকে কিছুটা ছাড় দেওয়ার আর্জিও জানানো হয়েছে আদালতে। মৌসুমী কলকাতার বাসিন্দা। সেখান থেকে কী ভাবে তিনি এত দিন গা ঢাকা দিয়ে ছিলেন, কী ভাবে ওড়িশায় করোনা টেস্টই করালেন এ সব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পাশাপাশি করোনা পজিটিভ হওয়ার পরেও কী ভাবে তিনি ওড়িশা থেকে থেকে বিনা বাধায় এই রাজ্যের আদালতে চলে এলেন, তা নিয়েও প্রশ্নের মুখে পুলিশ-প্রশাসন।
আরও পড়ুন: ফুরফুরার পিরজাদা ত্বহার সঙ্গে বৈঠকে বসছেন অধীর-মান্নান
মৌসুমীর দাবি মেনে বিচারক এদিনের শুনানি বন্ধ করেননি। পরিবর্তে পিনকন অর্থলগ্নি মামলায় তাঁকে এ দিন দোষী সাব্যস্ত করেন বিচারক। তবে মৌসুমীর সাজার রায় স্থগিত রাখা হয়েছে। বিচারক জানিয়েছেন, মৌসুমী কোভিড পজিটিভ দাবি করায় তাঁকে পর্যবেক্ষণে রেখে করোনার পরীক্ষা করা হোক। সেই রিপোর্ট আসার পর পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।
সৌমেনবাবু জানিয়েছেন, পিনকন মামলায় দোষীরা কলকাতা হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করেছেন। কিন্তু হাইকোর্ট জানিয়ে দিয়েছে, মৌসুমী রায়কে আগে আত্মসমর্পণ করতে হবে। তার পর জামিনের আবেদনের শুনানি হবে। ওয়াকিবহাল শিবিরের মতে, এই চাপে পড়েই আত্মসমর্পণ করেছেন মৌসুমী।
আরও পড়ুন: নীলবাড়ি দখলে কোনও নিরীক্ষা নয়, পরীক্ষিত সৈনিকেই ভরসা মোদী-শাহর
প্রসঙ্গত, পিনকন অর্থলগ্নী সংস্থায় টাকা ফেরৎ না পেয়ে পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরি থানায় ২০১৭ সালে একটি মামলা রুজু হয়। সেই মামলার সূত্র ধরেই ওই বছরের নভেম্বর মাসে রাজস্থান থেকে পিনকনের অন্যতম ডিরেক্টর মনোরঞ্জন রায়-সহ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে ডিরেক্টর অফ ইকোনমিক অফেন্স বা ডিইও-এর আধিকারিকরা। পরে মৌসুমী-সহ এক এক করে সংস্থার মোট ২০ জন ডিরেক্টরকে গ্রেফতার করা হয়। তবে কলকাতা হাইকোর্ট থেকে জামিন পান মৌসুমী।