ডায়মন্ড হারবারের হুগলি নদী। —নিজস্ব চিত্র।
হুগলি নদীর তীরে অবস্থিত ডায়মন্ড হারবার সুপ্রাচীন ঐতিহাসিক শহর। ব্রিটিশদের হাত ধরে প্রাচীনকালের হাজিপুর অধুনা ডায়মন্ড হারবারের রূপ নিয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকেই এখানে ব্যাপক হারে নগোরায়নের জেরে মফস্সল থেকে ডায়মন্ড হারবার আজ পুরদস্তুর শহর। প্রায় চার দশক আগে ডায়মন্ড হারবারে প্রথম পুরসভা স্থাপিত হয়।
আগের থেকে ডায়মন্ড হারবার শহরের রাস্তাঘাটের অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে। প্রতিটি পাড়ার পাড়ায় পাকা রাস্তা তৈরি হয়েছে। নগোরায়নের ফলে নতুন করে গড়ে ওঠা পাড়া এমনকি অলিগোলিতেও কংক্রিটের রাস্তা তৈরি করে দিয়েছে পুরসভা।
পরিচ্ছন্নতার দিক থেকে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে শহর। কয়েকটি পাড়ায় আবর্জনা ফেলার ভ্যাট থাকলেও সেই ময়লাগুলি রাস্তার উপরেই চলে আসে। পুরসভার সাফাইকর্মীরা প্রায় রোজই প্রতিটি বাড়ি থেকে জঞ্জাল নিয়ে যান। অথচ খাল, নয়ানজুলি এবং পুকুরেও ময়লা পড়ে থাকতে দেখা যায়। নদীর পাড়ও অনেক সময় আবর্জনা পড়ে থাকতে দেখা যায়। তাই এই বিষয়ে পুরসভা একটু নজর দিতে পারে।
পুরবাসীর পানীয় জলের সমস্যা সমাধানের জন্য হুগলি নদীর জল পরিশুদ্ধ করে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল আগেই। কিন্তু টাইম কলের জলে নোংরা থেকেই যাচ্ছে। ফলে পানীয় জলের জন্য টিউবওয়েলের উপরেই নির্ভর করতে হয়। জল কিনেও খেতে হচ্ছে।
দীর্ঘ দিন ধরেই ডায়মন্ড হারবারের নিকাশি ব্যবস্থা বেহাল। পুরসভার পক্ষ থেকে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ড্রেন তৈরি হলেও কয়েকটি নালা এবং নয়ানজুলি অবরুদ্ধ হয়ে পড়ায় বর্ষায় জল জমে বিভিন্ন ওয়ার্ডে। পরিকল্পিত নিকাশির প্রয়োজন রয়েছে শহরে। আশা করব, পরবর্তী পুরবোর্ডে ক্ষমতায় যারাই আসুক না কেন এই বিষয়ে গুরুত্ব একটু দেবেন।
ডায়মন্ড হারবার শহরে আলোর সমস্যা একেবারেই নেই। আলো নিয়ে যথেষ্টই গুরুত্ব দিয়েছে পুরসভা, যা রীতি মতো কৃতিত্বের দাবি করে। বড় মার্কেট কিংবা মোড়ে রয়েছে হাইমাস্ক লাইট। ফলে আলোকোজ্জ্বল থাকে শহর ও রাস্তাঘাট। পার বরাবর রয়েছে ত্রিফলা ল্যাম্প পোস্ট, সন্ধ্যার পরই রঙিন আলোয় সেজে ওঠে শহর।
ডায়মন্ড হারবার শহর হল মহকুমা সদর। তাই সড়ক, রেলপথ ও জলপথে প্রতি দিন হাজার হাজার মানুষ আসেন শহরে। ফলে যানজট শহরের নিত্য দিনের সমস্যা। তাই উড়ালপুল কিংবা বাইপাস খুব জরুরি। আশা করব, নতুন পুরবোর্ড গঠিত হলে এই সমস্যা নিয়ে একটু ভাববে।
এ ছাড়া যে কোনও অনুষ্ঠান কিংবা নাটকের জন্য রবীন্দ্রভবন ছাড়া আর তেমন কোন কমিউনিটি হল নেই শহরে। কিন্তু রবীন্দ্রভবন ভাড়া নেওয়া সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাই একটি কমিউনিটি হল অবশ্যই প্রয়োজন।
অনেক জায়গাতেই ফুটপাত দখল হয়ে যাচ্ছে। মানুষের চলা ফেরার মতো জায়গাও পাওয়া যায় না। দু’একবার পুরপ্রশাসনের তরফে দখলমুক্ত করা হলেও স্থায়ী সমাধান এখনও হয়নি। তাই আশা রাখি, নতুন পুরবোর্ড গঠিত হলে তারা এই সমস্যাগুলোর সমাধান করবে।