প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
রাজ্যে সহায়ক মূল্যে ধান কেনা শুরু হচ্ছে আজ, বুধবার থেকে। কিন্তু সেই ধান ভাঙানোর জন্য খাদ্য দফতরের সঙ্গে চুক্তি করার বিষয়ে গা নেই বেশির ভাগ চালকলের। গত বছর যেখানে ধান ভাঙানোর জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল ৫৭৮টি চালকল, সেখানে এ বার মঙ্গলবার পর্যন্ত ১৬৬টি চালকলের সঙ্গে চুক্তি করতে পেরেছে খাদ্য দফতর। ইডি-র হাতে চালকল ব্যবসায়ী বাকিবুর রহমান এবং প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা বর্তমান বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের গ্রেফতার হওয়ার কোনও প্রভাব এর পিছনে রয়েছে কি না, প্রশ্ন উঠেছে তাই নিয়ে।
চালকল মালিকদের একাংশের দাবি, এ বার ধান কেনায় সমস্যার আশঙ্কা করছেন তাঁরা। তাই অনেকে চুক্তি করতে অনীহা দেখাচ্ছেন। যদিও রাজ্যের চালকল সংগঠনের সভাপতি সুশীল চৌধুরীর দাবি, “চুক্তি হবে। তবে আমাদের কিছু দাবি সরকারকে জানানো হয়েছে। কতটা সুরাহা হয় দেখি।’’ খাদ্য দফতর সূত্রের খবর, এই পরিস্থিতিতে জেলাশাসকদের চুক্তির বিষয়ে বাড়তি নজর দিতে বলা হয়েছে। ১০ নভেম্বরের আগে চুক্তি করলে চালকলগুলিকে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার কথাও জানানো হয়েছে।
জ্যোতিপ্রিয়ের গ্রেফতারে আশঙ্কার কারণ কী? চালকল মালিকদের একাংশের দাবি, এখন বনমন্ত্রী হলেও, রাজ্য সরকারের সহায়ক মূল্যে ধান কেনার একটি এজেন্সির কর্তা হিসেবে রয়েছেন জ্যোতিপ্রিয়। ধান্য ক্রয় কেন্দ্র (সিপিসি) ছাড়া ওই এজেন্সির মাধ্যমেই বেশি ধান সংগ্রহ করে খাদ্য দফতর। ফলে, সেই পদ্ধতিতে একটি অচলাবস্থা তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা অনেক চালকল মালিকের। তাই চুক্তি নিয়ে দোনামনা করছেন তাঁরা।
গত বার ৬০ লক্ষ টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল সরকারের। কেনা হয়েছিল ৫৩.৭৫ লক্ষ টন। এ বার লক্ষ্যমাত্রা ৭০ লক্ষ টন। তাই গত বার যে ৫৪১টি চালকল নির্দিষ্ট সময়ে ধান ভাঙিয়ে চাল দিয়েছিল, তাদের সঙ্গে আগেই চুক্তি করতে চেয়েছিল খাদ্য দফতর। কিন্তু এখনও ১৬৬টির বেশি চালকলের সঙ্গে তা করা যায়নি। রিপোর্ট অনুযায়ী, হুগলির ৮৩টির মধ্যে ৭৬টি, পূর্ব মেদিনীপুরে ২৩টির মধ্যে ২১টি চালকল চুক্তি করেছে। কিন্তু পূর্ব বর্ধমানে ৯০টির মধ্যে ৩২টি, বাঁকুড়ায় ৪০টির মধ্যে ৭টি, মুর্শিদাবাদে ৩৮টির মধ্যে মাত্র দু’টি চালকল চুক্তি করেছে। পশ্চিম মেদিনীপুর, বীরভূম, দুই দিনাজপুর, জলপাইগুড়ি, নদিয়ার মতো নানা জেলার কোনও চালকল এখনও চুক্তি করেনি।
চালকল মালিক সমিতির দাবি, ধান ভাঙানোর খরচ, শ্রমিকদের মজুরি, পরিবহণ খরচ বৃদ্ধির দাবি সরকারকে জানিয়েছেন তাঁরা। প্রতি বছরই এমন দাবি ওঠে। তা হলে এ বার চুক্তি কম কেন? ওই সংগঠনের কর্তা আব্দুল মালেকের বক্তব্য, “চুক্তি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, পরেও হতে পারে।’’ জেলা খাদ্য দফতর সূত্রের দাবি, চালকল সংগঠনগুলির সঙ্গে জেলা প্রশাসন বৈঠক করে ১০ নভেম্বরের মধ্যে চুক্তি করায় জোর দেবে। রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ শুধু বলেন, “ধান কেনায় কোনও প্রভাব পড়বে না।’’