গরম থেকে বাঁচতে সবাই যখন ছুটছেন পাহাড়ে, তখন দার্জিলিং ছেড়ে নামতে হল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতাদের। কেউ গিয়েছেন দিল্লিতে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অফিসারদের সঙ্গে কথা বলতে মরিয়া। কেউ কলকাতায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সামনে পেয়ে ক্ষোভ-উদ্বেগ জানিয়েছেন। সোমবার দিনটা এমনই ছোটাছুটি করে কেটেছে মোর্চার প্রথম সারির নেতাদের। চারজন দিল্লিতে, দু’জন কলকাতায়। কিন্তু, কোনও জায়গা থেকেই মনের মতো সাড়া না পেয়ে আন্দোলনে যাওয়ার চাপ বাড়ছে মোর্চার অন্দরে। যে খবর গোয়েন্দা মারফত পৌঁছেছে কেন্দ্র ও রাজ্যের কাছেও।
তবে মোর্চার একাংশও এ দিন জানান, আগামী শনিবার পর্যন্ত তদ্বির চালিয়েও কোন সাড়া না পেলে বড় মাপের আন্দোলনের ঘোষণার পথেই হাঁটার পক্ষপাতী নেতা-কর্মীদের অনেকে। অন্য দিকে, গ্রীষ্মের পর্যটন মরসুম চলাকালীন আন্দোলনের রাস্তায় হাঁটতে রাজি নন দলের আর এক অংশ। মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম নেতা বিনয় তামাঙ্গ অবশ্য বলেছেন, ‘‘পাহাড়ে যে কোনও মূল্যে শান্তি রাখতে হবে। অশান্তি হবে না।’’
প্রকাশ্যে এ কথা বললেও, মোর্চা নেতা-কর্মীরা কিছুটা দিশাহারা। কেন্দ্রে বিজেপির জোটসঙ্গী হয়েও মোর্চা নেতারা এদিন দিল্লিতে সে ভাবে সাড়া পাননি। অন্য দিকে, রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল নানা প্রসঙ্গে সিবিআইয়ের সমালোচনা করলেও, তামাঙ্গ-হত্যায় মোর্চা নেতাদের জড়ানো নিয়ে একটি মন্তব্যও করেনি। মোর্চার এক নেতা জানান, এদিনই কলকাতায় বিধানসভায় একটি সরকারি কমিটির বৈঠকে কালিম্পঙের মোর্চা বিধায়ক হরকাবাহাদুর ছেত্রী যান। সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। সরকারি সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কালিম্পঙের বিধায়কের সৌজন্য বিনিময় হলেও অন্য কোনও কথা হয়নি।
মোর্চার অন্দরে হরকাবাহাদুর ছেত্রী তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। ফলে, মোর্চার অনেকেই আশা করেন, ‘দুঃসময়ে’ কালিম্পঙের বিধায়ককে দিয়ে তৃণমূল নেত্রীকে পাশে পাওয়ার চেষ্টা করলে কিছুটা কাজ হতে পারে। মোর্চার অন্দরের খবর, সে কারণেই এদিনই টাউন হলে মুখ্যমন্ত্রী অন্য একটি বৈঠকে থাকার সময়ে দেখা করতে যান কালিম্পঙের মোর্চা বিধায়ক। কিন্তু তার পরেও আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন না মোর্চার অনেকেই। কারণ, তৃণমূল তামাঙ্গ-হত্যা মামলার চার্জশিট নিয়ে এখনই কোনও মন্তব্য করতে নারাজ। কালিম্পঙের বিধায়ক অবশ্য বলেন, ‘‘চার্জশিট নিয়ে কথা হয়নি। কারণ, দলের পক্ষ থেকে তা নিয়ে কথা বলতে সভাপতি নির্দেশ দেননি।’’
কী করছেন দলের সভাপতি গুরুঙ্গ? দলীয় সূত্রের খবর, তিনি ১৫২ জন পুরোহিতকে এনে টানা চণ্ডীপাঠ করাচ্ছেন। পুজোপাঠের ফাঁকে খবরাখবর নিচ্ছেন একান্ত অনুগামীর মোবাইলে। কিন্তু দিল্লি বা কলকাতা থেকে সারাদিনে তেমন সুখবর না পাওয়ায় হতাশ গুরুঙ্গের সঙ্গীদের অনেকে। সে জন্য আপাতত আগামী সপ্তাহে কোনভাবে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির প্রক্রিয়া শুরু হলে যাতে আগাম জামিনের আর্জি পেশ করা যায়, তারও প্রক্রিয়া চলছে কলকাতা ও দিল্লিতে।