কোন্নগরের হীরালাল পাল কলেজ, হলদিয়া সরকারি কলেজ, কলকাতার বিদ্যাসাগর কলেজের পরে এ বার শিক্ষক-নিগ্রহ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়েরই এক প্রাক্তন ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এ দিনের ঘটনা অন্য মাত্রা পেয়েছে প্রহৃত শিক্ষকের ছাত্রবাৎসল্যের জন্য। মার খেয়েও ওই শিক্ষক দু’দফায় অভিযুক্ত প্রাক্তন ছাত্রকে ক্ষিপ্ত পড়ুয়াদের মারধর থেকে বাঁচিয়েছেন।
বাংলা বিভাগের শিক্ষক আব্দুল কাফি শুক্রবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের চার নম্বর গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলেন। অভিযোগ, রাজেশ সাঁতরা নামের এক প্রাক্তন ছাত্র তখনই ঝাঁপিয়ে পড়েন তাঁর উপরে। মারতে শুরু করেন তাঁকে। অতর্কিত আক্রমণে কাফি চোখের কাছে আঘাত পান।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, রাজেশ এ দিন কাফিকে মারধর করার পরে অন্য কিছু পড়ুয়া উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। কাফিই তাঁদের শান্ত হতে বলেন এবং অভিযুক্ত প্রাক্তন ছাত্রকে মারমুখী পড়ুয়াদের রোষ থেকে বাঁচান। পরে নিরাপত্তারক্ষীরা যখন রাজেশকে অরবিন্দ ভবনে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন কিছু পড়ুয়া আবার উত্তেজিত হয়ে অভিযুক্তকে মারধর করতে যান। নিগৃহীত শিক্ষক তখন হাতজোড় করে ছাত্রদের বলেন, ‘‘তোমরা যাও। ওর গায়ে যেন হাত না-পড়ে। এটা তোমরা একটু দেখো, অনুরোধ করলাম।’’ পড়ুয়ারা জানাচ্ছেন, মার খেয়েও ছাত্রছাত্রীদের শান্ত হওয়ার, বিনয়ী হওয়ার শিক্ষা দিয়েছেন কাফি স্যর।
২০১৫ সালে যাদবপুরের বাংলা বিভাগ থেকে পাশ করেন রাজেশ। কিছু দিন আগে তিনি কাফির বাড়িতে গিয়েও দরজায় ধাক্কা মেরেছিলেন বলে অভিযোগ। কাফির উপরে হামলার আগে বাংলা বিভাগের প্রধানের কাছে গিয়েও চিৎকার-চেঁচামেচি করেছিলেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও কোনও মহলের ধারণা, সম্ভবত হতাশা থেকেই ওই প্রাক্তন ছাত্র এমন কাণ্ড করে ফেলেছেন। এ দিনও তাঁর আচরণে কিছুটা অসংলগ্নতা ছিল। তবে কোনও রাজনৈতিক দলের প্ররোচনায় তিনি এমন কাজ করেছেন কি না, তা নিয়েও জল্পনা চলছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে।
সহ-উপাচার্য প্রদীপকুমার ঘোষ জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে বিষয়টি যাদবপুর থানায় জানানো হয়। পরে পুলিশ রাজেশকে গ্রেফতার করে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় বলেন, ‘‘সারা রাজ্যেই শিক্ষক-নিগ্রহের ঘটনা ঘটছে। যাদবপুরেও ঘটল। আমরা চাই, দোষীর বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’’