অণিমা নাথ
বৃহস্পতিবার নামখানায় অমিত শাহের সভায় শিক্ষিকা নিগ্রহের অভিযোগের তদন্তে নামল পুলিশ। অভিযোগ, বৃহস্পতিবার সভাস্থলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে কালো পতাকা দেখানোয় রোষের মুখে পড়তে হয় ‘শিক্ষক ঐক্য মুক্তমঞ্চে’র সদস্য ছবি চাকি এবং তাঁর তিন সহকর্মী অণিমা নাথ, মিলি বিশ্বাস ও ফতেমা কানিজকে। পরে তাঁদের আটক করে কাকদ্বীপ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। রাতে তাঁদের চারজনকেই ছেড়ে দেওয়া হয়। মুর্শিদাবাদের একটি শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষিকা ছবি কাকদ্বীপ থানায় বিজেপি কর্মীদের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ দায়ের করেন। সুন্দরবন জেলা পুলিশ সুপার বৈভব তিওয়ারি শুক্রবার বলেন, ‘‘ওই ঘটনায় এফআইআর দায়ের হয়েছে। তদন্ত শুরু হয়েছে।’’ বিজেপি রাজ্য নেতা শমীক ভট্টাচার্যের প্রতিক্রিয়া, ‘‘ঘটনাস্থলে ছিলাম না। কী হয়েছে বলতে পারব না। তবে তাঁদের মারধর করা হয়ে থাকলে অন্যায় হয়েছে।’’
পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগে ছবি জানান, তাঁরা চারটি বিষয় তুলে ধরতে বিজেপির সভায় গিয়েছিলেন। ছবির কথায়, ‘‘কালো পতাকা নেড়ে বলেছি, এ রাজ্যকে ত্রিপুরা হতে দেব না। জানতে চেয়েছি, কেন নেতাজির জন্মজয়ন্তীর দিন, প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে কেন্দ্রের অনুষ্ঠানে অপমান করা হয় আমাদের মুখ্যমন্ত্রীকে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করেছি, কবে প্রধানমন্ত্রী নিজের দেওয়া প্রতিশ্রুতি মেনে প্রত্যেক নাগরিকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা দেবেন। আর দাবি করেছিলাম, জাতীয় শিক্ষানীতি বাতিল করতে হবে।’’
ওই চার শিক্ষিকা ‘শিক্ষক ঐক্য মুক্তমঞ্চে’র প্রথম সারির নেত্রী। গত ২৭ জানুয়ারি বিধানসভার মূল ফটকের সামনে শিক্ষকদের বিক্ষোভেও হাজির ছিলেন তাঁরা। বছর একান্নর অণিমা সে দিনও ফটক টপকে বিধানসভা চত্বরে ঢোকার চেষ্টা করেছিলেন। হুগলির ব্যান্ডেলের বাসিন্দা বৃত্তিমূলক শিক্ষাকেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত অণিমার দাবি, ‘‘আমাদের কোনও রাজনৈতিক পরিচয় নেই। বঞ্চনার অভিযোগে আমরা রাজ্য ও কেন্দ্র— দুই সরকারের বিরুদ্ধেই আন্দোলন করছি। সম্প্রতি কসবায় মুখ্যমন্ত্রীর সভাস্থলে হাজির থেকে আমরা বিক্ষোভ দেখাই। আন্দোলন করে তিন বার জেলে যেতে হয়েছে আমাকে।’’ ছবিরও দাবি, ‘‘গত চার বছরে আন্দোলন করতে গিয়ে সাত বার জেলে গিয়েছি। কিন্তু কোনও রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করিনি।’’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সভামঞ্চের সামনে বাঁশের ব্যারিকেডে উঠে কালো পতাকা নেড়েছিলেন অণিমা। তাঁর অভিযোগ, ‘‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁর দলের কর্মীদের বলেছিলেন, আমাদের যেন সম্মান দিয়ে সভাস্থল থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু ওরা আমাদের শাড়ি ধরে টানাটানি করেছে। মারতে মারতে নিয়ে গিয়েছে আমাদের।’’ ছবির অভিযোগ, ‘‘আমার গলায় চাদর পেঁচিয়ে টানতে টানতে মঞ্চের পিছন দিকে নিয়ে গিয়েছিল বিজেপি কর্মীরা।’’ মিলি ও ফতেমারও অভিযোগ, ‘‘আমাদের যে ভাবে মারধর করা হয়েছে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। যে ভাষায় ওরা কথা বলছিল, তা সভ্য মানুষ ব্যবহার করেন না।’’মুক্তমঞ্চের সম্পাদক মইদুল ইসলাম বলেন, ‘‘ওই বিক্ষোভ মুখ্যমন্ত্রীর পরিকল্পনা বলে দাবি করেছেন অমিত শাহ। অনেকে আবার আমাদের সংগঠনকে সিপিএমের শাখা সংগঠন বলে প্রচার করেন। যা ভিত্তিহীন।’’ সিপিএম নেতা শমীক লাহিড়ীর কথায়, ‘‘ওই সংগঠনে সব দলের সমর্থকই রয়েছেন। শিক্ষকদের বিভিন্ন দাবি আদায়ে তৈরি এই অরাজনৈতিক মঞ্চ কোনও দলেরই শাখা সংগঠন নয়।’’