ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় ও মহম্মদ সেলিম।
বহিষ্কারের আগে তাঁর অভিযোগ ছিল, দলীয় তদন্ত কমিশন অভিযুক্তের কথা শুনতেই চায়নি। সিদ্ধান্ত হয়েছে একতরফা। ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগের জবাব দিতে এ বার মুখ খুললেন সেই কমিশনের চেয়ারম্যান, সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম।
আনন্দবাজারকে সেলিম জানাচ্ছেন, তিন সদস্যের কমিশন চার বার পূর্ণাঙ্গ শুনানি করেছিল অভিযুক্ত সাংসদকে ডেকে। সেলিমের কথায়, ‘‘সাম্প্রতিক কালে কোনও তদন্ত কমিশন অভিযুক্তকে এত বার ডাকেনি। তরুণ সাংসদকে যতটা সম্ভব সুযোগ দল দিতে চেয়েছিল। অভিযোগ ছিল গুরুতর। তাই আগেই সাসপেন্ড করতে হয়েছিল।’’ ঋতব্রত টিভি চ্যানেলের সাক্ষাৎকারে সরাসরি নিশানা করেছেন সেলিমকে। তাঁর অভিযোগ, সেলিমের ‘কটারি’র চাপেই আলিমুদ্দিন তাঁকে ছেটে ফেলতে উদ্যোগী হয়েছিল। সেলিমের জবাব, ‘‘ওঁর অভিযোগ ছিল আমার এবং আমার ছেলের বিরুদ্ধে। যখন দেখি অভিযোগ আমার দিকে ঘুরে গিয়েছে, কমিশনের শেষ দিকের শুনানিতে আমি আর ছিলাম না। যা রায় দেওয়ার, তিন সদস্যের কমিশন দিয়েছে। বাকি দুই সদস্যের বিরুদ্ধে তো ঋতর অভিযোগ ছিল না। তা হলে তাঁরাও ওঁর বিরুদ্ধে রায় দিলেন কী ভাবে?’’
নজিরবিহীন ভাবে রবিবারই সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির তরফে দলের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের আরও একটি দীর্ঘ বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে। যেখানে সবিস্তার বলা হয়েছে, ঋতব্রতের বিরুদ্ধে চার দফা অভিযোগ কী ছিল এবং কী ভাবে একের পর এক ধাপ পেরিয়ে তবেই দল চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটির প্রকাশ করা সূর্যবাবুর ওই বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, অভিযুক্ত হয়ে দলের কাঠগড়ায় ওঠার পরে রাজ্যসভার তরুণ সাংসদ রাজ্য কমিটিতে বলেছিলেন, দলই তাঁর অভিভাবক। দল যা সিদ্ধান্ত নেবে, মেনে চলবেন। কিন্তু পরবর্তী কালে তাঁর আচরণে সংশোধন বা অনুতাপের লক্ষণ ছিল না। বরং, সংবাদমাধ্যমের একাংশের ‘সাহায্যে’ তিনি দলকে হেয় করতে শুরু করেন এবং শেষমেশ ১১ সেপ্টেম্বর একটি চ্যানেলে ‘ব্যবস্থা করা’ সাক্ষাৎকারে ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক রেষারেষি নিয়ে এমন কিছু মনগড়া কথা বলেন, যা সচরাচর সিপিএমের ‘বিরোধী শক্তি’ই বলে থাকে।
দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী ঋতব্রতকে বহিষ্কারের সন্ধ্যায় স্বয়ং সূর্যবাবুই মন্তব্য করেছিলেন, ‘খুচরো ঘটনা’। তা হলে সেই ‘খুচরো ঘটনা’ নিয়ে এত ব্যাখ্যা দিতে হচ্ছে কেন? সিপিএমের শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, বাংলা ও ইংরেজি দু’টি চ্যানেলে ঋতব্রতের সাক্ষাৎকারের পরে তাঁর বহিষ্কার নিয়ে নানা ব্যাখ্যা ছড়ানো হয়েছে। তাই দলই বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে জানিয়ে দিল, কেন এমন পদক্ষেপ। এই বিবৃতির পরে ঋতব্রত এ দিন আর নতুন করে কোনও মন্তব্য করেননি। তবে রাহুল গাঁধী ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতোই টুইটে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
প্রয়াত সুভাষ চক্রবর্তী ও দলের অন্যতম ডাকসাইটে নেতা গৌতম দেবের নেতৃত্বের গুণগান করতে গিয়ে তাঁকে হেনস্থার মুখে পড়তে হয়েছে বলে অভিযোগ ছিল ঋতব্রতের। সেলিমের বক্তব্য, ‘‘কেউ কেউ বলছেন, এটাও নাকি বহিষ্কারের কারণ! সুভাষদা’র মৃত্যুদিনে (৩ অগস্ট) তাঁর ও গৌতম দেবের ছবি পোস্ট করেছিলেন ঋতব্রত। কিন্তু কমিশনের রিপোর্ট রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে পাশ হয়েছিল তার দু’দিন আগেই। দু’টো ঘটনা মিলছে কী করে!’’