একাই দু’শো পার করেছেন। ‘সৌজন্য’ দেখাতে দিদি আর কৃপণ নন!
ভোট প্রচারে এসে তাঁর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, ‘‘দিদি আপনিই বদলে গিয়েছেন।’’ আবার দুর্নীতি নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিঁধেছিলেন সনিয়া গাঁধী।
কিন্তু সে সবই এখন অতীত। দ্বিতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আগামী শুক্রবার শপথ নেবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শপথ নেবেন তাঁর নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরাও। তৃণমূল সূত্রের মতে, সেই অনুষ্ঠানে মোদী-সনিয়া উভয়কেই নিমন্ত্রণ জানাতে পারেন দিদি। ‘সৌজন্য’ সেখানেই সীমিত থাকবে না। আমন্ত্রিতদের তালিকায় থাকবেন, জাতীয় রাজনীতির সব মুখ্য চরিত্র। নীতীশ কুমার, অরবিন্দ কেজরীবাল, অখিলেশ যাদব, নবীন পট্টনায়েক তো বটেই, শিবসেনা নেতা উদ্ধব ঠাকরেকেও আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হবে। প্রথম বার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণের সময় রাজ্যের বাম নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন মমতা। এ বার তাঁদের পাশাপাশি আমন্ত্রণ করা হতে পারে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিকেও।
এটা শুধুই কি সৌজন্যের রাজনীতি? নাকি তার আড়ালে রয়েছে কোনও বৃহত্তর রাজনীতিও?
তৃণমূলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে যাঁরা চেনেন, তাঁদের মতে দিদি একশো কিলোমিটার দূরের কথা ভেবে কাজ করেন। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে সৌজন্য দেখানোর বিষয়টি তো রয়েছেই। কিন্তু দ্বিতীয়বার বিপুল আসন পেয়ে জিতে আসার পরে জাতীয় রাজনীতিতে নিজের প্রভাব বিস্তারে আরও সক্রিয় হতে চাইছেন মমতা। শুক্রবার দুপুরে কালীঘাটে তাঁর বাড়িতে তৃণমূলের পরিষদীয় দলের বৈঠক ছিল।
সেই বৈঠকে দলের সাংসদরাও উপস্থিত ছিলেন। পরে ওই বৈঠক থেকে বেরিয়ে লোকসভায় তৃণমূল নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ও বুঝিয়ে দেন, এ বার দিদির নজর ২০১৯-এর দিকে। সুদীপই জানান, এ বার থেকে দু’মাসে একবার করে দিল্লি সফরে যাবেন তৃণমূলনেত্রী।
বস্তুত কেন্দ্রে মোদী সরকার গঠনের পরে বিরোধী শিবির দৃশ্যতই ছত্রাকার। কংগ্রেস দুর্বল। তাই গত শতাব্দীর শেষ দিকের মতো আঞ্চলিক শক্তিগুলির ফের নজর বাড়ছে দিল্লির তখ্ত দখলের ওপর। আঞ্চলিক নেতারা ঐকবদ্ধ ভাবে যদি কোনও বিকল্প মঞ্চ গড়ে তোলা যায়। সম্প্রতি বিহার ভোটের পরে নীতীশ কুমারের ভূমিকাতেই তা পরিষ্কার। রাজভবনে শপথ না নিয়ে পটনার গাঁধী ময়দানে শপথ নিয়েছিলেন তিনি। আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন সব আঞ্চলিক নেতাকে। তাতে সাড়া দিয়ে মমতাও পটনা গিয়েছিলেন।
দ্বিতীয়বার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শপথ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে আয়োজনের তোড়জোড় তার থেকে খুব একটা ভিন্ন নয়। এ বার রাজভবনে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান হবে না। হবে রেড রোডে। জাতীয় রাজনীতির চরিত্রদের মঞ্চে রেখে সেখান থেকে বার্তা দেওয়ার চেষ্টা হবে সর্বভারতীয় স্তরে। এ বারের শপথ-অনুষ্ঠানকে জনগণের অনুষ্ঠান বলেই আখ্যা দিয়েছেন মমতা। এ দিন কালীঘাটের বাড়িতে তিনি বলেন, ‘‘এটা জনগণের অনুষ্ঠান। এই প্রথম আমরা ইন্ডোর ছেড়ে আউটডোরে এসেছি। তবে এখন বাইরে অনুষ্ঠান হলে গরম-বৃষ্টির একটা ঝুঁকি থাকেই। তা-ও রাস্তাতেই আমরা শপথ নেব।’’ মমতার কথায়, ‘‘সকলকে দেখার সুযোগ করে দিতেই রেড রো়ডে শপথের অনুষ্ঠান হবে।’’
আগামী শুক্রবারের প্রস্তুতি নিয়ে নবান্নেও তৎপরতা শুরু হয়ে গিয়েছে। নবান্ন সূত্র জানাচ্ছে, শুক্রবার ঠিক ক’টার সময় শপথ নেবেন তা এখনও মুখ্যমন্ত্রী জানাননি। বুধবার রাতে বা বৃহস্পতিবার সকালে নতুন মন্ত্রিসভার তালিকা যাবে রাজভবনে। ৪৪ জন মন্ত্রী শপথ নেবেন এমনটা ধরে নিয়েই মঞ্চ পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এর আগে রাজভবনের চৌহদ্দির বাইরে প্রথম বার শপথ হয়েছিল একবারই। সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে বিধানসভার তথ্য বিশেষজ্ঞ দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘স্বাধীনতার পরে ১৯৪৭ সালে প্রফুল্ল ঘোষ প্রথম শপথ নিয়েছিলেন রাজভবনে। তার পর থেকে রাজভবনেই শপথ নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীরা। রাজভবনের চৌহদ্দির বাইরে একমাত্র ১৯৫৭ সালে শপথ হয়েছিল বিধান রায়ের আমলে। সে বার দার্জিলিঙে শপথ নেন বিধানবাবু।’’
যে সব বিদেশি রাষ্ট্রনেতা মমতাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন, তাঁদেরও আমন্ত্রণ জানানো হবে। তালিকায় রয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভুটানের রাজা জিগমে ওয়াংচুক। তবে কৌতুহলের বিষয় হল, দিদির নিমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে মোদী-সনিয়া উপস্থিত হবেন কী?
কংগ্রেস ও বিজেপি সূত্রের মতে, সেই সম্ভাবনা ক্ষীণ। তবে তৃণমূল নেতারা আশাবাদী যে, শুক্রবার রেড রোডে আঞ্চলিক নেতৃত্বের ভালই উপস্থিতি থাকবে। জাতীয় স্তরে তৃণমূলের আরও মাথা তোলার বার্তা পৌঁছে দিতে সেটাই যথেষ্ট।