বেলুড় মঠে স্মৃতি ইরানি। শুক্রবার দীপঙ্কর মজুমদারের তোলা ছবি।
তরুণ প্রজন্মকে স্বাবলম্বী করাই পাখির চোখ। এবং সেই লক্ষ্যেই নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়ন করতে চলেছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। প্রাচীন ভারতের ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিক শিক্ষার মেলবন্ধনই হবে নতুন শিক্ষানীতির মূল ভিত্তি।
শুক্রবার বেলুড় মঠে রামকৃষ্ণ মিশন বিবেকানন্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের নবম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে এ কথা জানান কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। তিনি বলেন, “শীঘ্রই কেন্দ্র এই বিষয়ে খসড়া তৈরি করে সব রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা শুরু করবে। মতামত নেওয়া হবে দেশের সব ক’টি বিশ্ববিদ্যালয়েরও।”
কিন্তু ঠিক কেমন হবে মোদী সরকারের নতুন শিক্ষানীতি?
কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী জানান, এখন দেশের শতকরা ৬৫ জনের বয়স গড়ে ৩৫ বছরের নীচে। অর্থাৎ দেশের অগ্রগতির ক্ষেত্রে যুবশক্তিই প্রধান ভরসা। অর্থনীতিবিদদের অনেকেরই মত, আগামী ৩০ বছরে এই যুবশক্তির উপরে ভর করেই ভারত আর্থিক দিক দিয়ে চিনকে টেক্কা দিতে পারে। সেই জন্যই দেশের নতুন শিক্ষানীতির মূল লক্ষ্য হবে যুবসমাজকে স্বাবলম্বী করা। এই লক্ষ্যে পৌণছনোর জন্য প্রাচীন ভারতের ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিক বিজ্ঞান শিক্ষার যুগলবন্দির ব্যবস্থা হচ্ছে বলে জানান স্মৃতি। কেন্দ্র যে এই দ্বিমুখী নীতি নিয়েই চলবে, এ দিন রামকৃষ্ণ মিশন বিবেকানন্দ বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তনের বক্তৃতায় সেটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন মোদী মন্ত্রিসভার কনিষ্ঠ সদস্যা।
স্মৃতি এ দিন জানান, রামকৃষ্ণ মিশন বিবেকানন্দ বিশ্ববিদ্যালয়কে মূল্যবোধের শিক্ষাদানের অন্যতম প্রতিষ্ঠান হিসেবে ‘স্পেশ্যাল হেরিটেজ ইনস্টিটিউট’-এর মর্যাদা দেওয়ার কথা বিবেচনা করছে কেন্দ্র। একই সঙ্গে তিনি জানান, বর্তমান সরকার বিজ্ঞান গবেষণায় ছাত্রছাত্রীদের উৎসাহ দিতে চায়। সেই জন্য রাষ্ট্রীয় অভিজ্ঞান যোজনা নামে শুধু গবেষকদের জন্য একটি প্রকল্প চালু হচ্ছে। গবেষণা চালিয়ে যাওয়ার জন্য এই প্রকল্পে অর্থসাহায্য পাবেন গবেষকেরা।
নীতি বদলের কাজ যে মোদী সরকার শুরু করেছে, ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব হিস্টোরিক্যাল রিসার্চ (আইসিএইচআর)-এর প্রধান পদে সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠ ইতিহাসবিদ ওয়াই এস রাওকে বসানোতেই তার ইঙ্গিত মিলেছে। মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের অধীন এই ধরনের শিক্ষা ও সংস্কৃতি সংক্রান্ত বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে বদল এনে নতুন শিক্ষানীতি রূপায়ণের ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে চাইছে মোদী সরকার। সরকারি স্তরে রাজ্যগুলির সঙ্গে সদ্ভাব রেখেই সেই কাজ করতে চায় কেন্দ্র। তা বোঝাতেই বেলুড় মঠে যাওয়ার আগে স্মৃতি এ দিন নবান্নে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রায় দেড় ঘণ্টা আলোচনা করেন। তবে বৈঠকের বিষয়বস্তু নিয়ে তিনি বা মুখ্যমন্ত্রী কেউই মুখ খোলেননি। নবান্নে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গী ছিলেন রাজ্য বিজেপি-র সংগঠন সম্পাদক অমলেন্দু চট্টোপাধ্যায়। স্মৃতিকে অভ্যর্থনা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে পৌঁছে দেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।