আলিঙ্গন। শপথ নেওয়ার পরে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে জড়িয়ে ধরেছেন অহলুওয়ালিয়া। — পিটিআই
এখন আর তিনি শুধু দার্জিলিঙের সাংসদ নন। কৃষি ও কৃষক কল্যাণ এবং সংসদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীও। এ বার সেই সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়াকে সামনে রেখেই তরাই-ডুয়ার্সে সংগঠন গোছানোর প্রস্তুতি শুরু করল বিজেপি। দলীয় সূত্রে খবর, এর পরে অহলুওয়ালিয়া দার্জিলিং এলেই তাঁকে দিয়ে উত্তরের সব ক’টি জেলায় প্রচার চালানো হবে। যার মূল লক্ষ্য, উত্তরবঙ্গে বিজেপির খুঁটি আরও শক্ত করা।
গত বিধানসভা ভোটে উত্তরবঙ্গে ভাল ফল করেছে বিজেপি। তিনটির মধ্যে দু’টিই তারা জিতেছে উত্তরবঙ্গ থেকে। একটি মালদহে, অন্যটি ডুয়ার্সে। এর মধ্যে ডুয়ার্সের আসন জয়ের ক্ষেত্রে অহলুওয়ালিয়ার অবদানের কথা মানছেন স্থানীয় বিজেপি নেতারাই। বিধানসভা ভোটের বেশ কয়েক মাস আগেই তরাই-ডুয়ার্সের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল অহলুওয়ালিয়াকে। এ বারের বিধানসভা ভোটে মাদারিহাট আসনটি দখল করেছে বিজেপি। কালচিনিতে দ্বিতীয় হয়েছে। জয়ী তৃণমূলের সঙ্গে ভোট-পার্থক্য এক শতাংশেরও কম। ডুয়ার্সের কুমারগ্রাম, নাগরাকাটা তরাইয়ের মাটিগাড়া-নকশালবাড়ি আসনে বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ২০ শতাংশেরও বেশি। এই পরিস্থিতিতে অহলুওয়ালিয়াকে মন্ত্রী করাটা এক অর্থে পুরস্কারও, বলছেন দলের একটি সূত্র। এর ফলে এক লাফে তাঁর অনেকটাই উত্থান হল। এখন বিজেপির পাখির আগামী লোকসভা এবং পরের বিধানসভা ভোট। এ বারের ফল দেখার পরে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব অহলুওয়ালিয়ার প্রশাসনিক গুরুত্ব বাড়িয়ে ডুয়ার্স-তরাই-সহ গোটা উত্তরবঙ্গেই সংগঠন মজবুত করার পরিকল্পনা করছেন।
বিরোধীরাও মনে করছেন, আগামী দিনের কথা মাথায় রেখেই অহলুওয়ালিয়াকে মন্ত্রী করা হল। ভোটের ফল প্রকাশের পরপরই চা বলয়ে বিজেপির ‘বাড়বাড়ন্ত’ হয়েছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অশোক ভট্টাচার্য। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গ থেকে এক জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়েছেন, তা অবশ্যই স্বাগত। তবে উনি গত দু’বছর সাংসদ হয়েও শিলিগুড়ির উন্নয়ন নিয়ে সক্রিয় হননি। আশা করব উনি রাজনীতিকে গুরুত্ব না দিয়ে উন্নয়নকে লক্ষ্য করবেন।’’
এ বারে উত্তরবঙ্গে ভাল ফল করার পরে ডুয়ার্স-তরাইয়ে জোর দিয়েছে তৃণমূলও। চা বলয় থেকে জিতে আসা প্রাক্তন পুলিশ কর্তা জেমস কুজুর রাজ্যে মন্ত্রী হয়েছেন। পৃথক চা ডিরেক্টরেটও তৈরি করেছে তৃণমূল সরকার। এ বার পাল্টা কৌশল নিয়ে একই জায়গায় জমি দখলের লড়াইয়ে ঝাঁপাচ্ছে বিজেপিও। তাদের সেই কৌশলের মুখ হবেন অহলুওয়ালিয়া। এই এলাকার বিভিন্ন দল, জনজাতিদের সঙ্গে এত দিন তিনি যোগাযোগ রাখতেন। মাদারিহাটের বিজেপির বিধায়ক মনোজ টিগ্গাও বলেছেন, ‘‘অহলুওয়ালিয়াজি মন্ত্রী হওয়ায় এক দিকে যেমন প্রশাসনিক কাজে সুবিধে হবে, তেমনি সাংগঠনিক ভাবেও আমাদের শক্তিবৃদ্ধি হবে।’’ কুজুর অবশ্য বলছেন, ‘‘কোনও সাম্প্রদায়িক শক্তি চা শ্রমিকদের প্রভাবিত করতে পারবে না।’’ চা শ্রমিক সংগঠনের যৌথ মঞ্চের আহ্বায়ক জিয়াউল আলমের কথায়, ‘‘এত দিন ধরে চা বাগান বন্ধ রয়েছে, সেগুলি নিয়ে অহলুওয়ালিয়াকে সক্রিয় হতে দেখিনি। উনি মন্ত্রী হয়ে কতটা আরএসএসের নির্দেশ পালন করবেন আর কতটা উন্নয়নের কাজ করবেন, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।’’
পাহাড়েও ক্রমে শক্তি বাড়াচ্ছে তৃণমূল। মোর্চার একাংশ বলছে, অহলুওয়ালিয়া মন্ত্রী হওয়ায় তারাও জোর পাবে। তবে গোর্খাল্যান্ডের দাবি নিয়ে নতুন মন্ত্রী কতটা এবং কী ভাবে সরব হবেন, সেটা নিয়ে পাহাড়ের সংশয় এখনও কাটেনি।