আদালতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দেওর রাহুল মণ্ডল ও শাশুড়ি কল্পনা মণ্ডলকে। ছবি: সুব্রত জানা।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গৃহবধূ মিতা মণ্ডলের মৃত্যুর তদন্তভার সিআইডিকে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পরেই পুলিশের হাতে ধরা পড়ল তাঁর পলাতক শাশুড়ি এবং দেওর।
সোমবার দুপুরে মুখ্যমন্ত্রী সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দেন। রাতেই মিতার দেওর রাহুলকে উলুবেড়িয়ার কুলগাছিয়ায় তাদের এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে ধরা হয়। মঙ্গলবার সকালে ওই বাড়ি থেকেই ধরা হয় মিতার শাশুড়ি কল্পনা মণ্ডলকে। ধৃতদের মঙ্গলবার উলুবেড়িয়া এসিজেএম আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক রাহুলকে পাঁচ দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। মিতার শাশুড়িকে অবশ্য নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন পুলিশ জানায়নি। বিচারক তাকে ১৪ দিন জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
ভবানী ভবনে ডিআইজির সিআইডি ভরতলাল মিনা জানান, শাশুড়ি বাদে ধৃত তিন জনের কাছ থেকে পুরো ঘটনার কারণ জানতে চাওয়া হবে। এ দিনই গড়িয়ার শান্তিনগরে মিতার বাপেরবাড়িতে গিয়ে তাঁর বাবা-মা-ভাইয়ের সঙ্গে প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে কথা বলেন সিআইডি-র স্পেশ্যাল সুপারিন্টেন্ডেন্ট সোমা মিত্র ঘোষ এবং হাওড়ার ডিএসপি পার্থপ্রতিম রায়।
দশমীর ভোরে ফুলেশ্বরের একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে উলুবেড়িয়ার কুশবেড়িয়ার বাসিন্দা মিতার মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মাসছয়েক আগে তাঁর বিয়ে হয়েছিল। তাঁর দেহ উদ্ধারের পরে মিতার বাপের বাড়ির লোকজন খুনের অভিযোগ দায়ের করেন মেয়ের শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে। ওই রাতেই মিতার স্বামী ও শ্বশুরকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু এতদিন বাকি দুই অভিযুক্তকে ধরতে না পারায় বিভিন্ন মহল থেকে পুলিশের উপরে চাপ আসছিল। পুলিশ সমালোচনার মুখেও পড়ছিল।
হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিশের এক কর্তার দাবি, এই মামলায় প্রধান অভিযুক্ত মিতার স্বামী রানা। তাকে এবং মিতার শ্বশুর বিজেন্দ্রকে ঘটনার দিনই ধরা হয়। বাকি দুজনের খোঁজে তল্লাশি চলছিল। চার অভিযুক্তকে ধরার রেকর্ড-সহ তদন্তে যা মিলেছে এবং ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট এ দিন বিকেলে তুলে দেওয়া হয়েছে সিআইডি-র হাতে। তবে অভিযুক্তদের এখনও সিআইডি জেরা করেনি। অবশ্য তদন্তভার পেয়েই সোমবার উলুবেড়িয়ায় গিয়েছিল সিআইডির একটি দল।
গোয়েন্দারা জানান, ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ঝুলন্ত অবস্থায় মিতার মৃত্যু হয়েছে। মিতার কপালের নীচের দিকে তিনটি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। যা মৃত্যুর আগে হয়েছিল বলে গোয়েন্দাদের দাবি। গোয়েন্দাদের একাংশ জানান, ভিসেরা পরীক্ষা পরেই মিতার অপমৃত্যুর সঠিক কারণ জানা সম্ভব হবে। অভিযুক্তেরা অবশ্য প্রথম থেকেই দাবি করছে, মিতা আত্মহত্যা করেছেন।