দুই বাংলার বিচ্ছেদরেখা বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্ত সোমবার সাক্ষী থাকল মা-মেয়ের এক মিলনদৃশ্যের। ১৫ মাসের অদর্শনের পরে ছুটে গিয়ে কিশোরী কন্যাকে জড়িয়ে ধরলেন মা। মা ও মেয়ে উভয়েরই চোখে জল, মুখে হাসি। চিকচিক করে উঠল উপস্থিত অন্য অনেকেরই চোখ।
এক বছরেরও বেশি আগে উল্টোডাঙা থানা এলাকা থেকে অপহৃত হয় বছর বারোর কিশোরী মেয়েটি। ইন্টারপোলের সাহায্য নিয়ে বাংলাদেশ থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়েছে। লালবাজার জানায়, সোমবার বাংলাদেশের তরফে বেনাপোল পেট্রাপোল সীমান্তে বছর বারোর ওই কিশোরীকে উল্টোডাঙা
থানার তদন্তকারীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। মেয়ের সঙ্গে সেখানে দেখা হলেও সে-দিন তাকে বাড়ি নিয়ে যেতে পারেননি মা। রাতটা হোমে কাটাতে হয় মেয়েটিকে। মঙ্গলবার শিশু কল্যাণ সমিতির নির্দেশে তাকে বাবা-মায়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ১৫ মাস পরে মেয়েকে ফিরে পেয়ে তদন্তকারীদের বারবার সকৃতজ্ঞ ধন্যবাদ জানান বাবা-মা। ‘‘ওকে যে ফিরে পাওয়া সম্ভব, সেটা আমরা ভাবতেই পারিনি,’’ বললেন কিশোরীর এক দিদি।
পুলিশ জানায়, ঘটনার সূত্রপাত ২০১৮ সালের ২২ মার্চ। নিখোঁজ হওয়ার আগে সে-দিন উল্টোডাঙা থানা এলাকার দেশবন্ধু পার্কের কাছে ওই কিশোরীকে শেষ বারের মতো দেখা যায় অরূপ মণ্ডল ওরফে রাম নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে। তার পর থেকে তার আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। বড়তলা থানা এলাকার বাসিন্দা ওই কিশোরীর পরিবারের তরফে ঘটনার তিন দিন পরে অপহরণের অভিযোগ জানানো হয় উল্টোডাঙা থানায়। পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পারে, কিশোরীর সঙ্গে বাংলাদেশের বাসিন্দা এক যুবকও নিখোঁজ। সে নাম ভাঁড়িয়ে অবৈধ ভাবে এ দেশে ঢুকেছিল। বাংলাদেশের খুলনা জেলার আরাংঘাটা থানা এলাকার বানাইপাড়ায় মেয়েটিকে রেখেছে সে।
তদন্তকারীরা জানান, মেয়েটিকে উদ্ধার করতে সিবিআইয়ের সাহায্য নিয়ে গত বছরই ইন্টারপোলের দ্বারস্থ হন তাঁরা। যোগাযোগ করা হয় আরাংঘাটা থানায়। ওই কিশোরী সম্পর্কে সবিস্তার নথি পাঠিয়ে দেওয়া হয় সেখানে। গত বছরের মাঝামাঝি আরাংঘাটা থানা মেয়েটিকে উদ্ধার করে এবং অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে উল্টোডাঙা থানাকে জানায়। পরে কিশোরীটিকে রাখা হয় সেখানকার একটি হোমে।
শুরু হয় ওই কিশোরীকে প্রত্যর্পণের প্রক্রিয়া। পুরো বিষয়টি জানানো হয় রাজ্য সরকারের শিশু অধিকার রক্ষা কমিশন-সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দরফতরকে। তদন্তকারীদের তরফে ফের ইন্টারপোলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। ওই প্রক্রিয়ার মধ্যেই কিশোরীকে প্রত্যর্পণের বিষয়ে দু’দেশে কর্মরত একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে উল্টোডাঙা থানার অফিসার প্রভাত সেনাপতির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।
এক তদন্তকারী অফিসার জানান, ইতিমধ্যে অভিবাসন দফতরের তরফে কিশোরীর নাগরিকত্বের প্রমাণ চাওয়া হয়েছিল। তা পাঠিয়ে দেওয়া হয় মাসখানেক আগে। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে সোমবার কিশোরীকে আনা হয় পেট্রাপোল সীমান্তে। সেখানেই ঘটে মা-মেয়ের পুনর্মিলন।