পুলিশ কেন উদ্ধারে যাচ্ছে না, প্রশ্ন

যৌনপল্লি থেকে ফোন এল ‘বাঁচাও’

কিশোরীর মাসতুতো দিদির অভিযোগ, সেই ফোন পেয়ে রানিবাঁধ থানায় তাঁরা কয়েকবার উদ্ধার করে আনার জন্য অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ নানা বাহানায় তা নিতে চায়নি। মঙ্গলবার চাইল্ড লাইনের দ্বারস্থ হওয়ার পরে থানা অভিযোগ নেয়।

Advertisement

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

রানিবাঁধ শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:২৬
Share:

উত্তরপ্রদেশের যৌনপল্লি থেকে এক কিশোরী লুকিয়ে বাড়িতে ফোন করে বলছে— ‘মা আমাকে বাঁচাও’। আর বাঁকুড়া থেকে পুলিশ ‘তদন্ত চলছে’ বলে দায় সারছে। পুলিশের বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ তুললেন রানিবাঁধের নিখোঁজ কিশোরীর পরিজনেরা।

Advertisement

উত্তরপ্রদেশের যৌনপল্লিতে বন্দি থাকা দশম শ্রেণির ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করতে কেন সেখানে পুলিশ রওনা দিচ্ছে না? সেই প্রশ্ন তুলছেন ওই নাবালিকার মা ও মাসতুতো দিদি। দিদির কথায়, ‘‘বৃহস্পতিবারও একটি নম্বর থেকে ফোন করে বোন জানিয়েছে, ক্রমাগত তার উপর অসহনীয় নির্যাতন চালানো হচ্ছে। দ্রুত তাকে উদ্ধার করা না গেলে হয়তো মেরেও ফেলা হতে পারে বলে জানিয়েছে সে। কিন্তু পুলিশ তাকে উদ্ধার করতে সেখানে কেন যাচ্ছে না, বুঝতে পারছি না।’’ বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার সুখেন্দু হিরা বলেন, ‘‘ফোনের সূত্র ধরে মূল অভিযুক্ত কাঞ্চনী টুডু কোথায়, তা জানার চেষ্টা চলছে। আমরা ফোনেও কাঞ্চনীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। দরকার হলে বাঁকুড়ার পুলিশ উত্তরপ্রদেশে যাবে।’’

বাঁকুড়া চাইল্ড লাইন অবশ্য সচেষ্ট হয়েছে উত্তরপ্রদেশ চাইল্ড লাইনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে। বাঁকুড়া চাইল্ড লাইনের কো-অর্ডিনেটর সজল শীল বলেন, ‘‘ওই নাবালিকাকে ফিরোজাবাদের কোনও যৌনপল্লিতে আটকে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ। তাই আমাদের কলকাতার অফিসে চিঠি দিয়ে পুরো ঘটনাটি জানিয়ে উত্তপ্রদেশের ফিরোজাবাদ এলাকার চাইল্ড লাইনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেছি। ওকে নিয়ে আমরাও উদ্বেগে রয়েছি।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: শৌচালয়ে যাওয়া চলবে না, মারধর খুদে ছাত্রীকে

ওই কিশোরীর পরিজনদের দাবি, ২৩ জুলাই রানিবাঁধ থেকে নিখোঁজ হয়ে যায় সে। ২২ অগস্ট একটি অপরিচিত নম্বর থেকে তার ফোন পেয়ে আত্মীয়েরা জানতে পারেন, পাশের গ্রামের কাঞ্চনী টুডু ও অপূর্ব টুডু কাজের প্রলোভন দেখিয়ে যোগসাজশ করে তাকে উত্তরপ্রদেশের ফিরোজাবাদের একটি যৌনপল্লিতে ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছে। সেখানে দিনভর একের পর এক লোকজন আসে আর তার উপর নির্যাতন চালায়।

কিশোরীর মাসতুতো দিদির অভিযোগ, সেই ফোন পেয়ে রানিবাঁধ থানায় তাঁরা কয়েকবার উদ্ধার করে আনার জন্য অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ নানা বাহানায় তা নিতে চায়নি। মঙ্গলবার চাইল্ড লাইনের দ্বারস্থ হওয়ার পরে থানা অভিযোগ নেয়। অপূর্বকে গ্রেফতার করে বুধবার। কিন্তু কিশোরীকে উদ্ধার করে আনতে পুলিশ উদ্যোগী হয়নি বলে অভিযোগ।

পুলিশ সূত্রে খবর, অপূর্ব তদন্তকারীদের কাছে দাবি করেছে, কিশোরীটি কোথায় সে জানে না। উত্তরপ্রদেশের বধূ কাঞ্চনীই তাকে সেখানে নিয়ে যায়। পুলিশ কাঞ্চনীর ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করছে। ওই কিশোরীর ফোন আসা নম্বরগুলি ধরেও তদন্ত চলছে।

বুধবার চাইল্ড লাইনের কাছ থেকে গোটা ঘটনাটি শুনে বাঁকুড়ার পুলিশ সুপারকে দ্রুত ওই নাবালিকাকে উদ্ধারের ব্যবস্থা করতে বলেন বাঁকুড়ার জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘ওই নাবালিকাকে উদ্ধার করতে পুলিশ কী ব্যবস্থা নিয়েছে, তা নিয়ে পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলব।’’

এ দিন ফোনে ওই কিশোরী নিজের জীবনহানির আশঙ্কা জানানোর পরে তাকে ঘিরে পরিজনদের দুশ্চিন্তা আরও বেড়ে গিয়েছে। অসুস্থ হয়ে পড়েছেন ওই নাবালিকার মা। এ দিন ফোনে তিনি বলেন, ‘‘আমার মেয়ে উপরে ওখানে দিনভর শারীরিক নির্যাতন চলছে, এটা ভেবে আমি স্থির থাকতে পারছি না। মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে আমাকে বলছে— ‘মা আমাকে বাঁচাও’। আমরা তো পুলিশের কাছে গিয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ কিছুই করছে না।’’ পরিজনদের আশঙ্কা, পুলিশ গোড়া থেকেই কেন এই ঘটনায় দায়সারা মনোভাব নিয়েছে স্পষ্ট নয়। অহেতুক দেরির জন্য মেয়েটার জীবন যেন শেষ না হয়ে যায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement