ফাইল চিত্র।
ব্যারাকপুর মহকুমা আদালতে বৃহস্পতিবার জামিনের আবেদন জানাতে গিয়েছিল সে। আগে থেকেই সেখানে হাজির ছিল সিবিআই। ভোট-পরবর্তী হিংসায় এক বিজেপি কর্মীর মায়ের হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত সেই রতন হালদারকে আদালত-চত্বর থেকেই গ্রেফতার করে তারা।
বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পরে ব্যারাকপুরে খুন হন এক বিজেপি কর্মীর মা শোভারানি মণ্ডল। রাহুতা নতুনপল্লির তৃণমূল কর্মী রতন সেই ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত। মণ্ডল পরিবারের অভিযোগ, হামলার দিন বড় পাথর দিয়ে তাদের ঘরের দরজা ভেঙে ফেলে রতন। অভিযোগ, গত এক মাস ধরে তাকে এলাকায় দেখা যাচ্ছিল না। পুলিশি সূত্রের খবর, কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে সিবিআই এ রাজ্য ভোটের পরেকার খুন ও ধর্ষণের অভিযোগ সংক্রান্ত ঘটনা তদন্তভার নেওয়ার পরেই রতন গা-ঢাকা দেয়। সিবিআই তার খোঁজে চতুর্দিকে তল্লাশি চালাচ্ছিল। তার মধ্যেই জামিনের আবেদন করতে ব্যারাকপুর মহকুমা আদালতে যায় রতন।
তদন্তে নেমে তারা ভোট-পরবর্তী হিংসার মামলায় ইতিমধ্যে দু’টি চার্জশিট পেশ করেছে বলে শুক্রবার জানিয়েছে সিবিআই। তার মধ্যে একটি চার্জশিট এ দিনেই দেওয়া হয়েছে, তাতে অভিযুক্ত হিসেবে নাম আছে চার জনের। অন্য চার্জশিটে নাম রয়েছে দু’জনের। সব মিলিয়ে ৩৪টি মামলা করে তদন্ত করা হচ্ছে।
এ দিনেও উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের নানা জায়গায় তদন্ত করতে গিয়েছিল সিবিআইয়ের বিভিন্ন দল। কলকাতার কাঁকুড়গাছির বাসিন্দা, বিজেপি কর্মী অভিজিৎ সরকারের খুনের ঘটনায় মানিকতলা থানার এক মহিলা অফিসার-সহ তিন জনকে তলব করেছে ওই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, ওই মহিলা অফিসার ছুটিতে আছেন। ছুটি থেকে ফিরলে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। শুক্রবার মানিকতলা থানার অন্য দুই অফিসারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
অভিজিতের দাদা বিশ্বজিতের অভিযোগ, ঘটনার সন্ধ্যায় ওই মহিলা অফিসার তাঁর মা মাধবীদেবীকে দিয়ে পাঁচটি সাদা কাগজে সই করিয়ে নিয়েছিলেন। অভিজিৎ গুরুতর জখম, তাঁকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হবে— এই বয়ানে মাধবীদেবীকে দিয়ে সই করিয়েছিলেন তিনি। আরও অভিযোগ, ঘটনার রাতে বিশ্বজিৎ এফআইআর করতে গেলে মানিকতলা থানা তা গ্রহণ করেনি। পরের দিন লালবাজারের কর্তাদের তিনি লিখিত ভাবে সব জানিয়েছিলেন বলে বিশ্বজিতের দাবি।
সিবিআইয়ের খবর, মানিকতলা থানা থেকে ওই খুনের ঘটনার সব নথি সংগ্রহ করা হয়েছে। দু’টি এফআইআর করা হয়েছে একই ঘটনায়। অভিজিতের স্বজনদের দাবি, একটি এফআইআরের লিখিত বয়ানে মাধবীদেবীর সই জাল করা হয়েছে। সব অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা। এক সিবিআই-কর্তা জানান, প্রয়োজনে হস্তাক্ষরবিদদের সাহায্য নেওয়া হতে পারে, হতে পারে ফরেন্সিক পরীক্ষাও।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার খেয়াদায় বিজেপি কর্মী নির্মল মণ্ডলের মৃত্যুর ঘটনায় এ দিন নরেন্দ্রপুর থানা থেকে সব নথি সংগ্রহ করেছে সিবিআই। নির্মলের স্ত্রী সুপর্ণা তাঁর উপরে যৌন হেনস্থার যে-অভিযোগ করেছিলেন, তাঁর দাবি, পুলিশ তা গ্রহণ করেনি। সিবিআই জানিয়েছে, সুপর্ণার লিখিত বয়ানের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। প্রয়োজনে নতুন করে এফআইআর দায়ের করে তদন্ত চালানো হবে।
বিজেপি কর্মী দেবব্রত মাইতির খুনের তদন্তে শুক্রবারেও নন্দীগ্রামে যায় সিবিআই। এই নিয়ে এ দফায় তৃতীয় বার নন্দীগ্রামে এল তারা। নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের সরবেড়িয়া ডাকঘরে এ দিন এলাকাবাসীকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন কেন্দ্রীয় সংস্থার গোয়েন্দারা। সিবিআইয়ের অন্য একটি দল ঝাড়গ্রামে যায় বিজেপির কিসান মোর্চার নেতা কিশোর মান্ডি খুনের তদন্তে। ওই ঘটনায় ধৃত তিন জনকে এ দিন ঝাড়গ্রামের জেলে জিজ্ঞাসাবাদ করেন সিবিআই আধিকারিকেরা।
কোচবিহারে ঘাঁটি গেড়ে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছে সিবিআই। চলছে খুঁটিনাটি তথ্য সংগ্রহের কাজও। এ দিন সিবিআইয়ের দল তৃতীয় বার শীতলখুচিতে যান। সেখানে ভোটের পরে মানিক মৈত্র ও ধীরেন্দ্রনাথ বর্মণকে খুনের অভিযোগ রয়েছে। ধীরেন্দ্রনাথ বিজেপি কর্মী, মানিককে নিজেদের সমর্থক বলে দাবি করেছে তৃণমূল ও বিজেপি দু’দলই। ওই দুই পরিবারের সঙ্গে প্রথম দিনেই কথা বলেছিল সিবিআই। এ দিন স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে তারা। বৃহস্পতিবার শীতলখুচি থানায় তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিকদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কয়েক দিন ধরে দিনহাটা ও তুফানগঞ্জের দু’টি খুনের মামলা নিয়ে তদন্ত চালাচ্ছে সিবিআই। কয়েক জন তদন্তকারী পুলিশ অফিসারকে অস্থায়ী ক্যাম্পে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। মৃতের আত্মীয়দেরও ক্যাম্পে ডাকা হয়েছে। শীতলখুচির গোলেনাওহাটিতে বিএসএফ ক্যাম্পেও যায় সিবিআই।
এ দিন সকালে বাঁকুড়ার ইন্দাসের নাড়রা ও কোতুলপুরের রায়বাঘিনি গ্রামে যায় সিবিআইয়ের দু’টি দল। দুই গ্রামের দুই বিজেপি কর্মী ভোটের ফল ঘোষণার পরে তৃণমূলের হাতে ‘খুন’ হন বলে পরিবারের অভিযোগ। নাড়রা গ্রামে সিবিআই আধিকারিকেরা নিহত অরূপ রুইদাসের চার পড়শির সঙ্গে কথা বলেন। রায়বাঘিনিতে নিহত কুশ ক্ষেত্রপালের গ্রামের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেন তাঁরা।