শোকগ্রস্ত অমরনাথ তিওয়ারির পরিবার। নিজস্ব চিত্র
টার্গেট ছিল ছেলে। কিন্তু ছেলেকে বাঁচাতে দুষ্কৃতীদের বাধা দেন বাবা। আর তাতে বাবাকেই খুন করে চম্পট দিল আততায়ীরা। বুধবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর ২৪ পরনার নৈহাটির হাজিনগর এলাকায়। ওই ঘটনার জেরে ফের প্রমাণিত হল, ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে সশস্ত্র দুষ্কৃতীদের এখনও কতটা অবাধ আনাগোনা!
হাজিনগরের বাসন্তীতলা এলাকার বাসিন্দা বছর পঞ্চাশের অমরনাথ তিওয়ারি। অভিযোগ, বুধবার রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ প্রায় ২০-২৫ জনের সশস্ত্র একটি দল তাঁর বাড়িতে চড়াও হয়। প্রত্যেকের হাতেই বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র ছিল। তাঁর স্ত্রী বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘ওরা আমার ছোট ছেলেকে খুঁজছিল। আমার স্বামী ওদের বাধা দিলে গুলি করে পালায়। গুলি লাগে আমার স্বামীর বুকে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়।”
অমরনাথের স্ত্রী এবং পরিবারের অন্য সদস্যরা আততায়ীদের চিনতেও পেরেছেন বলে দাবি করেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, ওই দলে ছিল বিহারি, আমন, অমিত, অনিল-সহ একাধিক যুবক। বিহারি ওই এলাকার কুখ্যাত দুষ্কৃতী হিসাবে পরিচিত। মাস দেড়েক আগে জামিনে ছাড়া পেয়ে সে ফের ঢুকেছে এলাকায়, এমনটাই দাবি স্থানীয়দের। অমরনাথের ছোট ছেলে ছোট্টু ওরফে দীপ তিওয়ারি বলেন, ‘‘ওরা আমাকেই খুঁজছিল। বিকেলেও এক বার আমাকে খুঁজে যায়। আমি গোটা ঘটনা থানায় জানিয়ে রাতে বাড়ি ফিরি। কিন্তু ওদের লোক রাস্তায় ছিল। আমাকে বাড়ি ফিরতে দেখেই বিহারিকে খবর দেয়। তার পরেই চড়াও হয়।”
আরও পড়ুন: দু’মাস পরে পর্যটকদের জন্যে খুলে দেওয়া হল কাশ্মীরের দরজা, আরও একটু শিথিল বিধিনিষেধ
অমরনাথের পরিবার হামলার কারণ নিয়ে মুখ না খুললেও, এলাকার বাসিন্দাদের ইঙ্গিত এলাকা দখল নিয়ে বিহারির সঙ্গে দীপের দীর্ঘ দিনের ঝামেলা রয়েছে। পুরনো সেই গন্ডগোলের জেরেই হামলা বলে ধারণা এলাকার বাসিন্দাদের। পুলিশ সূত্রেও জানা গিয়েছে, দীপের নামেও একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
হালিশহর পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি কাউন্সিলর অশোক গুপ্ত এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘গত বছর হোলির সময়েও ওই পরিবারের সঙ্গে স্থানীয় কিছু যুবকের গন্ডগোল হয়েছিল। সেই সময় আমি মধ্যস্থতা করি। তবে এ বার কোন ঘটনার জেরে হামলা এবং খুন, তা আমি জানি না।” তবে ওই কাউন্সিলরের অভিযোগ, বিহারি এবং তার দলবল তৃণমূলআশ্রিত। তাঁর অভিযোগ, ‘‘পুলিশ শাসকআশ্রিত দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করার ব্যাপারে নিষ্ক্রিয়।’’
আরও পড়ুন: হিপনোটাইজ করে শ্লীলতাহানি! অভিযোগ অনলাইন শপিং-এর ডেলিভারি বয়ের বিরুদ্ধে
এলাকার বাসিন্দাদেরও অভিযোগ, সশস্ত্র দুষ্কৃতীদের দাপট দিনে দিনে বাড়ছে। দিনের বেলায় প্রকাশ্যে দুষ্কৃতীরে অস্ত্র হাতে ঘুরে বেড়াচ্ছে এলাকায়। পুলিশ কোনও ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ঘটনার পর পুলিশ কয়েক জনকে আটক করেছে। কিন্তু মূল আততায়ীরা প্রত্যেকেই ফেরার। তাদের নাগাল এখনও পায়নি পুলিশ।